
LIC Investmentএলআইসি এবং আদানি। এই দুটো নাম কমবেশি সকলেই শুনে ফেলেছেন। অভিযোগ, আদানিকে টাকা দিয়েছে এলআইসি। এর পিছনে সরকারের হাত রয়েছে। যদিও দুপক্ষই অস্বীকার করেছেন এমন দাবি। প্রশ্ন উঠছে: মোদী সরকার কি সত্যিই আদানিকে সাহায্য করেছিল? এলআইসি কত বিনিয়োগ করেছিল? এটা কি স্বাভাবিক নাকি সন্দেহজনক? এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এলআইসি কি আদানিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে, নাকি অন্য কিছু?
গোটা বিতর্কের সূত্রপাত ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদন ঘিরে। ওয়াশিংটন পোস্ট একটি সংবাদ সংস্থা। গত ২৪ অক্টোবর একটি প্রতিবেদনে তারা দাবি করেছিল, ২০২৫ সালের মে মাসে LICএর মাধ্যমে আদানি গ্রুপে প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩৩,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল ভারত সরকার। অর্থমন্ত্রকের অধীনস্থ একটি দফতরের কর্তারা এই পরিকল্পনা করেছিলেন। এতে জড়িত ছিল নীতি আয়োগ এবং এলআইসিও। এই পরিকল্পনার দুটি উদ্দেশ্য ছিল: আদানি গোষ্ঠীর ভরসাযোগ্য ভাবমূর্তি তৈরি এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়ানো। সোজা ভাষায়, বিনিয়োগকারীদের বোঝানো আদানিতে বিনিয়োগ কতটা নিরাপদ। সেই সময় আদানি গোষ্ঠী ঋণে জেরবার ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলছিল তদন্ত। ২০২৫ সালের মে মাসে কী ঘটেছিল? আদানি পোর্টস প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকার একটি বন্ড জারি করে। সেই বন্ডে বিনিয়োগকারী ছিল এলআইসি। ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি উড়িয়ে দেয় এলআইসি। তারা জানায়, টাকা কোথায় বিনিয়োগ করা হবে, সে ব্যাপারে অর্থমন্ত্রকের কোনও ভূমিকা থাকে না। স্বাধীনভাবে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থা। আদানি গোষ্ঠীও সাফ জানায়, পুরোটাই ভিত্তিহীন।
এলআইসি বিরাট সংস্থা। কতটা বৃহৎ তা একটা পরিসংখ্যান দিলেই বুঝে যাবেন। ৯০ হাজারেরও বেশি কর্মী। ২৯ কোটির বেশি মানুষ এলইসি পলিসি করেছেন। যা ইউরোপের অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। পলিসি হোল্ডারদের কাছ থেকে এলআইসি যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে তা পাকিস্তানের জিডিপির চেয়েও বেশি। পলিসি হোল্ডারদের টাকা বিভিন্ন সংস্থায় বিনিয়োগ করে লাভ করে এলআইসি। এবার প্রশ্ন হল, আদানি গোষ্ঠীতে এলআইসি কতটা বিনিয়োগ করেছে? আর কোন কোন সংস্থায় বিনিয়োগ রয়েছে এই সংস্থার? ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের তথ্য অনুযায়ী, আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থায় এলআইসির বিনিয়োগ: আদানি পোর্টস: ৭.৭৩% (জুনের আগে ছিল ৮.১৪%), আদানি এন্টারপ্রাইজেস: ৪.১৬%, আদানি গ্রিন এনার্জি: ১.৩%, আদানি এনার্জি সলিউশন: ৩.৪২%, আদানি টোটাল গ্যাস: ৬%, অম্বুজা সিমেন্ট: ৭.৩১% এবং এসিসি লিমিটেড: ৯.৯৫%।

ইকুইটিতে এলআইসির বিনিয়োগ প্রায় ১৬ লক্ষ কোটি টাকা। আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলিতে এলআইসির বিনিয়োগ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর অর্থ এলআইসির মোট বিনিয়োগের প্রায় ৪ শতাংশ আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলিতে। তবে এলআইসি আদানি গোষ্ঠীর চেয়ে দেশের অন্যান্য একাধিক সংস্থার শেয়ারে বেশি বিনিয়োগ করেছে। এলআইসির শীর্ষ ৫টি বিনিয়োগের তালিকায় আদানি নেই।
১। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজে এলআইসির বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। প্রায় ১.৩৮ লক্ষ কোটি টাকা। আরআইএলের ৬.৯৪% অংশীদারিত্ব।
২। আইটিসি লিমিটেডে এলআইসির বিনিয়োগ প্রায় ৮২,৩৪২ কোটি টাকা। আইটিসিতে এলআইসির ১৫.৮৬% অংশীদারিত্ব রয়েছে।
৩। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে লিমিটেডে এলআইসির বিনিয়োগ প্রায় ৭২,৫০০ কোটি টাকা। ৫.৪৫% অংশীদারিত্ব রয়েছে এলআইসির।
৪। এসবিআইতে এলআইসির ৯.৫৯% অংশীদারিত্ব রয়েছে। পরিমাণ প্রায় ৬৮,০০০ কোটি টাকা।
৫। লারসেন অ্যান্ড টুব্রো লিমিটেডে এলআইসির বিনিয়োগ প্রায় ৬৬,০৫৩ কোটি টাকা। এলআইসির ১৩ শতাংশেরও বেশি অংশীদারিত্ব।
৬। ইনফোসিস লিমিটেডে এলআইসির বিনিয়োগ প্রায় ৬৩,৪০০ কোটি টাকা।

এর অর্থ হল আদানি গোষ্ঠী এলআইসির শীর্ষ ৫ বিনিয়োগের মধ্যে নেই। এলআইসির ইকুইটি পোর্টফোলিওতে ৩০০টিরও বেশি কোম্পানি রয়েছে। কমপক্ষে ১% অংশীদারিত্ব রয়েছে সংস্থার।