একটি শেয়ারের দাম দেড় লক্ষ টাকার বেশি। আজ দেশের সবচেয়ে দামি শেয়ার MRF লিমিটেডের দাম বেড়ে ১.৫ লক্ষ টাকারও বেশি হয়েছে। যার কারণে আবারও এটি দেশের সবচেয়ে দামি শেয়ারে পরিণত হয়েছে। এমনিতে গত তিন মাসে MRF শেয়ার দুর্দান্ত রিটার্ন দিয়েছে। বুধবার সকালে বাজার খোলার পরে MRF-র শেয়ারের দর পৌঁছে যায় ১,৪৪,৯৪৫ টাকা। পরে শেয়ারের দাম পৌঁছে যায় ১,৫০,৯৯৫ টাকায়। যা শেয়ারের সর্বকালের সর্বোচ্চ মূল্যের খুব কাছাকাছি।
MRF এর সর্বকালের সর্বোচ্চ মূল্য ১,৫১,২৮৩.৪০ টাকা, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই দাম ছুঁয়েছিল শেয়ারটি। এখন আবারও MRF-র শেয়ার Elcid Investments কে ছাড়িয়ে দেশের সবচেয়ে দামি শেয়ারে পরিণত হয়েছে। এই বছরের ৪ মার্চ শেয়ারের দাম কমে প্রায় ১ লক্ষ টাকায় নেমে এসেছিল। যদিও গত তিন মাসে ধীরে ধীরে শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসে MRF শেয়ার প্রায় ৫০ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। তবে, গত এক বছরে, শেয়ারটি ১৪ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। ৫ বছরে রিটার্নের হার বেড়ে ১৩২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
MRF কোম্পানির গল্পটি খুবই আকর্ষণীয়। এই কোম্পানি যাত্রীবাহী গাড়ি, দুই চাকার গাড়ি, ট্রাক, ভারতীয় বিমান বাহিনীর সুখোই-৩০ MKI বিমানের জন্য টায়ার তৈরি করে। এছাড়াও, Funskool ব্র্যান্ডে খেলনা এবং রংও বিক্রি করে। ২০২৫ অর্থবছরে কোম্পানির রাজস্ব ছিল ২৮,১৫৩ কোটি টাকা এবং নিট মুনাফা ছিল ১,৮৬৯ কোটি টাকা। কোম্পানির ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ১৯৯৫ সালে MRF-এর একটি শেয়ারের দাম ছিল প্রায় ১,১০০ টাকা। গত ৩০ বছরে এই শেয়ারটি বিনিয়োগকারীদের জন্য দুর্দান্ত রিটার্ন দিয়েছে, যার ফলে বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি হার (CAGR) ১৮.৫%। ২০০৫ সাল নাগাদ শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় ৩,৫০০ টাকায় পৌঁছে গিয়েছিল। এরপর কোম্পানি উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রফতানি বাজারে প্রবেশ করে। যার ফলে রাজস্বের বৃদ্ধি ঘটে। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত MRF বিশ্বব্যাপী এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার সুযোগ নেয়। কোম্পানি ট্রাক, বাস এবং অফ-রোড টায়ার সেগমেন্টে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে। ২০১৫ সাল নাগাদ শেয়ারের দাম ৪০,০০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর কোম্পানিটি খেলনা ও রঙের ব্যবসায় নামে। এখন তারা ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানের জন্য বিশেষ টায়ারও তৈরি করে।
২০১৫ সালের পর স্টকে ঐতিহাসিক উত্থান
২০১৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত, MRF স্টক দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে এর শেয়ারের দাম ১ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা ভারতের যে কোনও কোম্পানির জন্য প্রথম রেকর্ড। তারপর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এটি দেড় লক্ষ টাকার স্তর অতিক্রম করে। যার পরে স্টকের দাম কমতে শুরু করে। কিন্তু আবারও MRF এর স্টক ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বেলুন তৈরির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু হয়েছিল
টায়ারের জগতের রাজা হওয়ার আগে এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা কে.এম. মামেন মাপ্পিল্লাই বেলুন তৈরি করতেন। মাপ্পিল্লাই ১৯৪৬ সালে ব্যবসায়িক জগতে প্রবেশ করেন। তিনি মাদ্রাজের তিরুভোত্তিয়ুরের একটি ছোট শেড থেকে বেলুন তৈরির ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বেশিরভাগ শিশুদের খেলনা, গ্লাভস এবং ল্যাটেক্স দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। তিনি ১৯৫২ সালে মাদ্রাজ রাবার ফ্যাক্টরি (MRF) প্রতিষ্ঠা করেন। রাবার তৈরির ব্যবসায়িক জগতে প্রবেশের মাত্র ৪ বছরের মধ্যে কোম্পানিটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ১৯৫৬ সালের মধ্যে MRF ভারতে ট্রেড রাবারের বাজারে আলোড়ন ফেলে দেয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার পরিবর্তন হয়
১৯৬১ সালের ৫ নভেম্বর MRF একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মর্যাদা পায়। ততক্ষণ পর্যন্ত কোম্পানিটি ম্যানসফিল্ড টায়ার অ্যান্ড রাবার কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে অটোমোবাইল, বিমান, সাইকেলের জন্য টায়ার এবং টিউব তৈরি করত। ১৯৬৫ সালে কোম্পানি আমেরিকায় টায়ার রফতানি শুরু করে। আটের দশকে ভারতীয় অটো সেক্টরে একটি বড় পরিবর্তন আসে, দাম দামের গাড়ি আসে, যার একটি উদাহরণ হল মারুতি ৮০০। একই সময়ে, দুই চাকার শিল্পও গতি লাভ করে, ১৯৮৫ সালে কোম্পানি দুই চাকার জন্য টায়ার তৈরি শুরু করে। ১৯৯৩ সালের মধ্যে এমআরএফ-এর ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হয়।