নারকেল এমন একটা ফল যা ধার্মিক আচার, পুজো থেকে শুরু করে সব রোগ জীবাণু থেকে প্রতিরক্ষা করা বা এমনি পেট ভরানোর জন্য খাওয়া যায়। পথ্য হিসেবে বা পুষ্টিকর খাবার হিসেবে এর জুড়ি নেই। এর চাষ কম পরিশ্রমে হতে পারে এবং একবার চাষ করলে শুধু আপনি নয়, আপনার ছেলে, এমনকী নাতিও তার ফল ভোগ করতে পারবে। নারকেলের ৮০ বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই ফল দিতে থাকে। ঠিকঠাক শুরুর দিকে পরিচর্যা করলে ১০০ বছর পর্যন্ত ফল দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তাই চাষিরা যদি একবার ফল গাছ লাগিয়ে ফেলেন, তাহলে লম্বা সময় পর্যন্ত তাদের মুনাফা লাফ হতে পারে।
কোথায় কোথায় চাষ?
উত্তর থেকে নিয়ে দক্ষিণ পর্যন্ত, সমস্ত ভারতের সমস্ত এলাকাতেই নারকেল চাষ হয়। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, হায়দরাবাদ, তেলেঙ্গানা, গুজরাট, রাজস্থান, নারকেলের গাছের অভাব নেই কোথাও। নারকেলের উৎপাদনে ভারত পৃথিবীর মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে। এখানে ২১ টি রাজ্যে নারকেল চাষ হয়। নারকেলের চাষ করার পরিশ্রম অত্যন্ত কম। এতে বেশি খরচ হয় না। কম পুঁজি লাগে।
নারকেল বাগান এভাবে লাগান, লাভ হবে দেদার
নারকেল চাষের জন্য আপনাকে আলাদা আলাদা ঋতুতে ফলন হওয়ার গাছ লাগাতে হবে। নারকেল গাছ এমনভাবে লাগাতে হবে, হয়, যাতে গোটা বছরই ফল দেয়। এই গাছের নীচের দিকের ফল পাকতে শুরু করে। এবং গাছের ভিতর থেকে ছোট ছোট নতুন ফল লাগাতার পাকতে থাকে। এটাই কারণ যে নারকেল ছিঁড়ে আনার পরে বিক্রির প্রক্রিয়া গোটা বছর চলতে থাকে। এর চাষে কীটনাশক এবং দামি সারের প্রয়োজন নেই। সাদা পোকা নারকেল চারাকে ক্ষতি করতে পারে। এ কারণে এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। তাই জল জমতে দেওয়া যাবে না গোড়াতে।
নারকেল গাছের লাভ
নারকেলের গাছ স্বর্গের গাছ বলে মনে করা হয়। এর লম্বা ১০ মিটার থেকে বেশি হয়, এটি কোনও শাখা হয় না। একজন অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং নারকেলের জল থেকে শুরু করে। মালা কিংবা খোসা সবটাই কাজে লাগে। নারকেলের পাতা থেকে ঝাড়ু তৈরি করা হয়।
নারকেল কত প্রকারের হয়?
নারকেলের একাধিক ভ্যারাইটি মজুত রয়েছে। কিন্তু প্রধানত তিন রকমের নারকেলের চাষ বেশি হয় এবং ফলন ভালো হয়। এর মধ্যে লম্বা, বউনি এবং সংকর প্রজাতি রয়েছে। লম্বা প্রজাতির নারকেলের আকার সবচেয়ে বড়।এবং এটি সবচেয়ে বেশি বয়স পর্যন্ত ফল দেয়।শুধু এটাই নয় পরম্পরাগত চাষ ছাড়াও এটি যে কোনও জায়গা থেকে খুব সহজেই ফলানো যায়। সেখানে বউনি প্রজাতির নারকেলের লম্বার তুলনায় একটু ছোট আকারের হয়। এই নারকেল চাষ করতে হলে বেশি পরিমাণে জল এর প্রয়োজন হয়। সঙ্গে দেখাশোনা করার জন্য একটু সময় দিতে হয়। সংকর প্রজাতির নারকেল লম্বা এবং বউনি প্রজাতির সংকর করে তৈরি করা হয়েছে। এই প্রজাতি নারকেল ঠিকমতো দেখভাল করা গেলে অনেক বেশি সংখ্যায় ফলন দেয়।
জমি চাষ করবেন কীভাবে?
সাধারণভাবে ৯ থেকে ১২ মাস পুরনো চারা রোপণ করার জন্য উপযোগী হয়ে যায়। কৃষকেরা এই চারা নিয়ে এসে জমিতে ছয় থেকে আট মাস বয়সী চারা লাগাতে হবে। সেই ধরণের ছাড়া ১৫ থেকে ২০ ফুট দূরত্বে লাগিয়ে দিতে হবে। এতে মনে রাখতে হবে যে নারকেলের গাছের গোড়ায় জল জমার যেন কোনও রকম ব্যবস্থা না থাকে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর এর মাঝখানে নারকেলের চারা লাগানো সম্ভব।
৩-৪ বছরে ফল দেওয়া শুরু করে
শুরুতে তিন থেকে চার বছর পর থেকে নারকেল গাছ ফল দিতে শুরু করে। ফলের রং সবুজ হয়ে যায়। তখন এটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এর ফল পাকার জন্য ১৫ মাস থেকে বেশি সময় লাগে। ফল গাছ থেকে পাড়ার পরেই পাকানো হয়।