ভারতের রিটেল বাজারের দখল নিয়ে আমাজন ও রিলায়েন্সের লড়াই তুঙ্গে। তা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। গত ফেব্রুয়ারিতে বিগ বাজার স্টোরগুলির দখল নিতে শুরু করে রিলায়েন্স। সেগুলি তারা কার্যত কব্জা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করে ফিউচার গ্রুপ। শীর্ষ আদালতে আমাজন দাবি করেছে, রিলায়েন্সের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিগ বাজারের স্টোরগুলি রিলায়েন্সের হাতে তুলে দিচ্ছে ফিউচার। পাল্টা আবার মার্কিন ই-কমার্স সংস্থার বিরুদ্ধে ফিউচারের অভিযোগ, তাদের পথে বসিয়েছে আমাজন। এসবের মধ্যেই বিগ বাজার স্টোরের 'দখল' নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করে দিল মুকেশ অম্বানির সংস্থা।
বিগ বাজার-সহ ফিউচার গ্রুপের স্টোর ও ব্যবসা কিনতে চুক্তিবদ্ধ হয় রিলায়েন্স। যা নিয়ে আপত্তি তোলে আমাজন। টানাপোড়েনের মাঝে স্টোরগুলির লিজ সংক্রান্ত চুক্তিপত্র নিজেদের নামে করে নেয় মুকেশ অম্বানির সংস্থা। বৃহস্পতিবার ফিউচার গ্রুপ জানায়,'১৪০০ কোটি টাকা দিয়ে ২৬ হাজার কোটি টাকার কোম্পানিকে ধ্বংস করে দিয়েছে আমাজন। তাদের উদ্দেশ্যে সফল হয়েছে।' রিলায়েন্সের স্টোরগুলির 'কব্জা' নিয়ে সংস্থার দাবি, 'কেউ আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে চাইছে না। বাড়ির মালিকরা জায়গা ছেড়ে দেওয়ার নোটিস দেয়। ৮৩৫টি স্টোর আর আমাদের হাতে নেই। বাকি ৩৭৪টি স্টোর হাতে-পায়ে ধরে রেখে দিয়েছি। এই পরিস্থিতিতে আমরা কী করতে পারি?'
২৫ ফেব্রুয়ারি বিগ বাজারের স্টোরগুলিতে আচমকা দেখা যায় রিলায়েন্সের আধিকারিকদের। ওই ঘটনা নিয়ে এবার মুখ খুলেছে রিলায়েন্স। তারা জানিয়েছে, ফিউচার গোষ্ঠীর ব্যবসার ক্ষতি রুখতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। যাতে চুক্তিতে কোনও প্রভাব না পড়ে। ৪৮০০ কোটি টাকা খরচও করেছে সংস্থা। এর মধ্যে ভাড়া হিসেবে ১১০০ কোটি টাকা মেটানো হয়েছে। বাকি ৩৭০০ কোটি খরচ করা হয়েছে যাতে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু থাকে।
এক মাসে ফিউচার গোষ্ঠীর ১৫০০-র মধ্যে ৯০০টির বেশি স্টোর নিজেদের হাতে নিয়েছে রিলায়েন্স। সংস্থা ওই সব স্টোরের ভাড়া মেটাতে না পারায় বাধ্য হয়ে আইনি ক্ষমতার ব্যবহার করতে হয়েছে বলে দাবি করেছে মুকেশ অম্বানির সংস্থা। উল্লেখ্য, আইনি বিবাদের মাঝে বিগ বাজার নাম বদলে 'স্মার্ট বাজার' রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিলায়েন্স।
আমাজন বনাম রিলায়েন্স
গত ১৫ মার্চ সংবাদপত্রে রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে রিলায়েন্স ও ফিউচার গ্রুপকে 'জালিয়াত' বলে নিশানা করেছিল আমাজন। তাদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘন করা হয়েছে। জাতীয় কোম্পানি আইন সংক্রান্ত আদালতের অনুমতি ছাড়া বিগ বাজারের স্টোর দখল করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টে আমাজন জানায়, মামলা চলা সত্ত্বেও নিজেদের স্টোরগুলি রিলায়েন্সের হাতে দিয়েছে ফিউচার। কিশোর বিয়ানির সংস্থা জানায়, দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে তারা। ভাড়া মেটানোর ক্ষমতা নেই। পরে ফিউচার গোষ্ঠী জানায়, রিলায়েন্সের হাত থেকে স্টোরগুলি ফেরত নিতে তারা বদ্ধপরিকর।
বলে রাখি, ২০২০ সালের অগাস্টে নিজেদের পাইকারি, খুচরো স্টোরগুলি রিলায়েন্সকে বিক্রির কথা ঘোষণা করে ফিউচার গোষ্ঠী। ২৪ হাজার ৭১৩ কোটি টাকার চুক্তিও হয় দু'পক্ষের। বাগড়া দেয় আমাজন। তারা জানায়, ২০১৯ সালের তাদের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল ফিউচার গোষ্ঠী তার খেলাপ করেছে তারা। ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সাহায্য দিয়েছিল আমাজন। মার্কিন ই-কমার্স সংস্থার দাবি, ওই চুক্তি অনুযায়ী সম্পত্তি কাউকে বিক্রি করতে পারবে না ফিউচার।
আরও পড়ুন- সংযুক্তিকরণের পর HDFC ব্যাঙ্কের গ্রাহক কী সুবিধা পাবেন?