
Bandhan School: গ্রামীণ ভারতকে শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী করার বিশেষ উদ্যোগ!সামাজিক অনগ্রসরতার পিছনে একটি বড় কারণ হল প্রাথমিক শিক্ষার অভাব। আবার আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারে না, এমন পরিবারও গ্রামের ঘরে ঘরে। তাই বন্ধন ব্যাঙ্ক তাদের এডুকেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে সমাজের অনগ্রসর শ্রেণির ছেলেমেয়েদের জন্য বিনামূল্যে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করেছে। ২০০৮ সালে শুরু করে এখনও পর্যন্ত নিয়ম মাফিক গ্রামের শিশুদের স্কুলে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা হয়। প্রাথমিক ভাবে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনার বন্দোবস্ত করা হয়। তার পরে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সরকারি স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য ও করা হয়। দেশের ৫টি রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম, ত্রিপুরা ও ঝাড়খণ্ডে এই বিশেষ শিক্ষা-প্রকল্প চলছে।
মোট ৪৮৩২টি বন্ধন স্কুলে গ্রামের শিশুরা লেখাপড়া করতে আসে। সেখানে তাদের বই খাতা, স্লেট পেন্সিল সবকিছুই বিনামূল্যে দেওয়া হয়। সমস্ত পড়াশুনা স্কুলেই করানো হয়। প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার শিশুকে এখনও পর্যন্ত এই বিনামূল্যে শিক্ষার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে সরকারি স্কুলে ভর্তি হয়ে শিক্ষার মূল স্রোতে মিশেছে।
স্থানীয় শিক্ষিত মহিলাদের মধ্যে থেকেই শিক্ষিকাদের বেছে নেওয়া হয়। এই বাছাই পর্বে তাদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়। গ্রামের বয়স্ক ও শিক্ষিত মানুষজনের মধ্যে থেকেই স্কুল কমিটির সদস্যদের বেছে নেওয়া হয়। তাঁরা জানেন গ্রামের কোন পরিবারের কোন শিশু আর্থিক অসঙ্গতির কারণে পড়াশুনা করতে পারছে না এবং তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেন কারা এই স্কুলে পড়াশুনা করার যোগ্য।

করোনা সংক্রান্ত লকডাউনের ফলে স্কুল এখন বন্ধ রয়েছে। ফলে সমাজের প্রয়োজনে এই সব বন্ধন স্কুলের শিক্ষা কর্মীবৃন্দ এখন করোনা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সোশাল ডিস্টেন্সিংয়ের শর্ত মেনে, সমস্ত রকম সাবধানতা অবলম্বন করে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সচেতনতা অভিযান চালাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হলে কী ধরণের উপসর্গ দেখা দিতে পারে, ভাইরাসের সংক্রমণ কী ভাবে ঠেকানো যেতে পারে, কী ভাবে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে— ইত্যাদি সবই মানুষকে বোঝাচ্ছেন তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গ, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ত্রিপুরায় ২৯৫ জন শিক্ষা কর্মী ও ১১২১ জন শিক্ষক এখনও পর্যন্ত ১৭,২০৯টি বাড়িতে গিয়ে তাঁদের করোনা এর সংক্রমণ ও তা মোকাবিলা করার উপায় সম্পর্কে বুঝিয়েছেন।
এই প্রাথমিক স্কুল ছাড়াও বন্ধন ব্যাঙ্ক যে প্রকল্পটির মাধ্যমে শিক্ষিত যুবক যুবতীদের চাকরির যোগ্য করে তোলে ও বিভিন্ন জায়গায় চাকরির সুযোগ করে দেয় তা হল এমপ্লয়িঙ দা আনএমপ্লয়েড প্রোগ্রাম। বন্ধন স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারগুলিতে ট্রেনিঙের মাধ্যমে চাকরির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের যোগ্য করে তোলা হয়। এরপর তারা কাস্টমার সার্ভিস, ইনফরমেশন টেকনোলজি, বিপিও, একাউন্টিং, হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্কিং এবং এসি / ফ্রিজ রিপেয়ারিং জাতীয় কাজের জন্যে চাকরির দরখাস্ত করতে পারে। বন্ধনের এই প্রকল্প থেকে ট্রেনিং নিয়ে বহু শিক্ষিত যুবক যুবতী এখন বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানিতে চাকরিতে নিযুক্ত রয়েছেন। ২০০৯ সালে শুরু করে আজ পর্যন্ত ৩৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে বন্ধন এই প্রকল্পের মাধ্যমে চাকরির যোগ্য করে তুলেছে।

সংসারে প্রধান চালিকা মহিলারাই। সংসার ঠিক মতো চালিয়ে সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করার জন্যে তাদের ন্যূনতম আর্থিক সাক্ষরতা খুবই প্রয়োজনীয়। তাই বন্ধন ব্যাঙ্ক শুরু করেছে বন্ধন ফিনান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রাম। গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিক সাক্ষরতা সম্পর্কে আরও সচেতন করাই এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য।
ছোট ছোট গ্রূপ-মিটিংয়ের মাধ্যমে এই কর্মসূচির অধীনে গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিক সাক্ষরতার পাঠ দেওয়া হয়। লকডাউনের জন্য সেই কর্মসূচি এখন স্থগিত রয়েছে। ফলে বন্ধন ফিনান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রামের কর্মীরা এখন গরিব পরিবারের কাছে অত্যবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহের কাজ করছেন। চাল, গম, ডাল ইত্যাদি এবং সেই সঙ্গে হ্যান্ড ওয়াস, সাবান, স্যানিটাইজার সরবরাহ করছেন। জেলা বা ব্লক প্রশাসনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েই তাঁরা তা করছেন।