Bishnupur Lok Sabhaটেরাকোটার মন্দির, রাসমঞ্চ, শ্যামরাই মন্দির, কেষ্টরাই মন্দির বা জোড়বাংলা মন্দির, রাধাশ্যাম মন্দির, গড় দরজা, মদনমোহন মন্দির, দলমাদল-- বিষ্ণপুর নামটি শুনলেই একাধিক পর্যটন স্থান মাথায় গিজগিজ করে। বাঁকুড়া জেলার এই অঞ্চলটিতে পরতে পরতে বাংলার সুপ্রাচীন ইতিহাস জড়িয়ে। ১৭ শতকে যখন এটি মল্ল রাজবংশের রাজধানী হিসাবে বিকাশ লাভ করেছিল। মল্ল শাসকদের প্রভাব শহরের স্থাপত্যের বিস্ময়, বিশেষ করে পোড়ামাটির মন্দিরগুলিতে স্পষ্ট। এই জটিল নকশা করা মন্দিরগুলি মল্ল কারিগরদের অনন্য কারুকার্য এবং শৈল্পিক প্রতিভা প্রদর্শন করে। রাসমঞ্চ, জোড়বাংলা মন্দির এবং মদনমোহন মন্দিরের স্থাপত্য বিস্ময় জাগায়। এহেন বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে এবারের ভোটের লড়াইও হতে চলেছে জমজমাট। বিষ্ণুপুরে লড়াই হবে প্রাক্তন স্বামী বনাম প্রাক্তন স্ত্রীর।
২০০৯ থেকেই রাজনীতির অঙ্ক বদলাতে শুরু করে বিষ্ণুপুরে
বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রটি এক সময় ছিল বামেদের শক্তঘাঁটি। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে বিষ্ণুপুরে ৫ লক্ষ ৪১ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন সিপিআইএম প্রার্থী সুস্মিতা বাউড়ি। কিন্তু ওই বছরেই খেলা ঘোরার ইঙ্গিত মিলেছিল। কারণ তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শিউলি সাহা ৪ লক্ষ ১১ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন সে বার। বিজেপি অনেক পিছিয়ে ছিল। মাত্র ৪১ হাজার ভোট পেয়েছিল। ২০১৪ সালেই বোঝা যায় বিষ্ণুপুর আর বামেদের ঘাঁটি নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিষ্ণুপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে লড়েন সৌমিত্র খাঁ। প্রায় ৫ লক্ষ ৮০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন তিনি। সুস্মিতা বাউড়ি পান ৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ১৮৫ ভোট। বিজেপি প্রার্থী ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫৩০ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। ২০১৯ সালে তৃণমূল ছেড়ে সৌমিত্র খাঁ যোগ দেন বিজেপি-তে। বিজেপি-র টিকিটেই লড়ে ফের তিনি সাংসদ হন। তবে লড়াই হয় হাড্ডাহাড্ডি। সৌমিত্র পেয়েছিলেন ৬ লক্ষ ৫৭ হাজার ১৯ ভোট। আর তৃণমূলের শ্যামল সাঁতরা ৫ লক্ষ ৭৮ হাজার ৯৭২ ভোট পান। ৭৮ হাজার ৪৭ ভোটে জয়ী হন সৌমিত্র।
২০২৪ সালে প্রাক্তন স্বামী বনাম প্রাক্তন স্ত্রী
২০২৪ সালে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে লড়াই ইন্টারেস্টিং হতে চলেছে। সৌমিত্র খাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডলকে এবারে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৯ সালে সৌমিত্রকে জেতাতে ব্যাপক পরিশ্রম করেছিলেন তত্কালীন স্ত্রী সুজাতা। পরবর্তীকালে তাঁদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এবং ডিভোর্স।
গত বিধানসভাতেও বিষ্ণুপুরে দাপট ছিল বিজেপির
এই লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬টি বাঁকুড়া জেলায় এবং একটি পূর্ব বর্ধমান জেলার আওয়ায় পড়ে। কেন্দ্রটি তফসিলি জাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। বর্তমানে আসনটি বিজেপির দখলে। বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা হল-বড়জোড়া, ওন্দা, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর, ইন্দাস, সোনামুখী এবং খণ্ডঘোষ। এর মধ্যে খণ্ডঘোষ বিধানসভা আসনটি পূর্ব বর্ধমানে। বাকি ৬টি আসন বাঁকুড়া জেলায়। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বড়জোড়া ও খণ্ডঘোষ আসনে জয় পায় তৃণমূল। বাকি ৫টি আসনে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থীরা।