'BJP-র তুরুপের তাস।' ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে অভিজিৎ দাসকে প্রার্থী করার পর এই কথায় বলছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাঁদের মতে, অনেকে ভেবেছিলেন হেভিওয়েট কোনও ব্যক্তিকে প্রার্থী করবে বিজেপি। নাম উঠে আসছিল, শঙ্কুদেব পন্ডা, কৌস্তভ বাগচী ও সোনালি গুহ-দের। কিন্তু তাঁদের কাউকেই প্রার্থী করেনি গেরুয়া শিবির। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এর পিছনে রয়েছে বিজেপির নিজের সংগঠনের প্রতি আস্থা। অভিজিৎ দাস আমতার ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। এলাকায় তাঁর গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। তাই অভিষেকের বিরুদ্ধে অভিজিৎকেই প্রার্থী করল নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহর দল।
অভিজিৎ দাস আরএসএস-এর স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন। সেই ছোটোবেলা থেকেই আরএসএস-র সঙ্গে যুক্ত। সেই সূত্রেই তিনি বিজেপি-তে। ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রের বিজেপি কর্মীরা বলছেন, দলের একনিষ্ঠ সেবক ববিদা। লোকজনের আপদে বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সমাজ সেবা করেন। স্বয়ংসেবক হিসেবে যে কাজ করতেন তা এই বয়সেও করে চলেছেন। ফলে এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
অভিজিৎ দাস উদয়রামপুর পল্লীশ্রী শিক্ষায়তন থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। তারপর সায়েন্সে ভর্তি হন। উচ্চমাধ্যমিকের পর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে লেখাপড়া। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদেরও সদস্য ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। আইন নিয়েও পড়াশোনা করেছেন। প্রায় দুই দশক টানা স্বয়ংসেবক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। তারপর বিজেপিতে যোগ দেন।
বিজেপি তাঁকে প্রথম টিকিট দেয় ২০০৯ সালে। সেবার মাত্র ৩ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিলেন অভিজিৎ দাস। ৩৭ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সালেও লড়েছিলেন। সেবার তৃতীয় স্থানে শেষ করেন। ভোট পেয়েছিলেন ২ লাখ ৮৫৮ টি। শতাংশের হিসেবে যা ছিল ১৫.৯২ শতাংশ। কিন্তু ২০১৯ সালে বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করেনি।
এবার প্রার্থী করার পিছনে কী কারণ? রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তৃণমূলস্তরের পরিচিত মুখ এই অভিজিৎ। তিনি দলের হয়ে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কাজ করছেন। পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানায় যখন বিজেপির কার্যত কোনও অস্তিস্ত্ব ছিল না তখনও সংগঠন করেছেন। একাধিকবার মারও খেয়েছেন। একদিকে সংঘের প্রতি তাঁর আনুগত্য ও রাজনীতি, দুটোই সমানগুরুত্ব দিয়ে করার পুরস্কার পেলেন তিনি। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, কয়েক দশক ধরে রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রেখেছেন অভিজিৎ। তিনি পরিচিত শুধু নন, বিজেপি কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য। আবার ভূমিপুত্রও। এখানে বাইরের কোনও প্রার্থী দিলে বিজেপির অনেকেই সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে পারত।
এই কেন্দ্র থেকে তাঁকে প্রার্থী করায় খুশি অভিজিৎও। তিনি বলেন, 'এটা আমার পরিচিত মাঠ। এখানে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। মানুষ আমাকে চেনে। আমিও তাদের পাশে থাকি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় এখানে সাংসদ হওয়ার পর থেকে এখানে ভোট সুষ্ঠুভাবে হয় না। অভিষেকের মতো অভিশাফকে বিদেয় করতেই আমাকে প্রার্থী করা হয়েছে।'