বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতির ময়দানে নামছেন, রবিবার এই খবর ঘিরে গরম ছিল রাজ্য রাজনীতির ময়দান। আকাশে-বাতাসে লোকসভা নির্বাচনের গন্ধ ক্রমশ জোরাল হচ্ছে। আর এই আবহেই তাপস রায়কে নিয়েও তৈরি হচ্ছে নতুন জল্পনা। বরানগরের বিধায়ক তাপস রায়কে ক্রমেই বাড়ছে গুঞ্জন। সোমবার অথবা মঙ্গলবারই বিধানসভায় বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন তিনি, এমনটাই খবর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে। আর এই আবহেই সোমবার সকালে তাপস রায়ের বাড়িতে হাজির হলেন কুণাল ঘোষ ও ব্রাত্য বসু।
সম্প্রতি বিধায়ক তাপস রায়ের বাড়িতে ইডি গিয়েছিল। এই পিছনে 'ষড়যন্ত্র' আছে বলেই অভিযোগ করেছিলেন বরানগরের বিধায়ক। সেই ষড়যন্ত্রের পিছনে বর্ষিয়ান তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত করেছিলেন তাপস রায়। তিনি যাতে উত্তর কলকাতায় লোকসভা ভোটে প্রার্থী না হতে পারেন, সেই জন্য এই ব্যবস্থা বলে অভিযোগ ছিল তাঁর। শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলন করে তাপস রায় অভিযোগ করেছিলেন , 'উত্তর কলকাতায় প্রার্থী হিসাবে আমার নাম উঠে এসেছে। আমি যাতে টিকিট না পাই তাই আমার বাড়িতে ইডি ঢোকাচ্ছে। রাজ্যসভা,লোকসভা রাজ্য মন্ত্রিসভা অন্তত ৪০ জন আমাকে এই কথা বলেছেন।'
এই সাংবাদিক বৈঠকের পর জল্পনা ছড়ায় তিনি তৃণমূল ছাড়তে চলেছেন তাপস রায়। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, সোমবার দুপুরে বিধানসভায় গিয়ে তাপস রায় বিধায়ক পদে ইস্তফা দিতে পারেন। ঘনিষ্ঠমহলে তিনি রবিবারেই জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল আর করবেন না! তৃণমূল আর করা যাচ্ছে না!এরপরেই একের পর এক তৃণমূল নেতার আনাগোনা শুরু হয়েছে তাপস রায়ের বাড়িতে।
রবিবার গিয়েছিলেন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। সোমবার সকালে গেলেন রাজ্যের আরেক মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং কুণাল ঘোষ। তাপস রায়ের বাড়িতে ঢোকার আগে সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কুণাল বলেন, তিনি প্রায়শই তাপস রায়ের বাড়িতে এসে থাকেন। কুণালের কথায়, আমি প্রায়ই তাপসদার বাড়িতে আসি। আজও এসেছি। নানা বিষয়ে গল্পগুজব হয়। তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতাই এটাকে নিতান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে বর্ণনা করেছেন।
প্রসঙ্গত, বেশ কিছু দিন ধরেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল তাপস রায়ের। উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি পদ থেকে তাপসকে সরিয়ে দিতেই হতাশা বাড়ে তাঁর অনুগামী শিবিরে। তাপসের চির প্রতিদ্বন্দ্বী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দেন তাপস স্বয়ং এবং তাঁর অনুগামীরা। সূত্রের খবর, এবারের নির্বাচনে সুদীপের হয়ে কাজ করবেন না বলেও দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন তাপস। সম্প্রতি বরানগরের পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির সূত্রে তাপসের বাড়িতে ইডি আসে। সেই সময় অধীর চৌধুরী, নওশাদ সিদ্দিকী, সজল ঘোষেরা তাপসের সমর্থনে বার্তা দিলেও তৃণমূল থেকে কাউকেও তাঁর পাশে দাঁড়াতে সেভাবে দেখা যায়নি। এ নিয়েও ক্ষোভ ছিল তাপসের। দলের সঙ্গে সেই থেকে দূরত্বও বাড়ছিল। বিধানসভায় চুপচাপ হয়ে যান তাপস রায়। তবে তাপসের দলবদল নিয়ে জল্পনার মাঝে একের পর এক তৃণমূল নেতার তার বাড়িতে আগমন নতুন জল্পনা তৈরি করেছে। শেষপর্যন্ত তাপস রায় বিধায়ক পদে ইস্তফার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন কিনা, সেটাই দেখার।