চব্বিশের লোককসভা নির্বাচন ইতিমধ্যেই উত্তাপ বাড়িয়ে চলেছে। আর চৈত্রের গরমেই প্রার্থীদের নাভিশ্বাস উঠছে প্রচার করতে গিয়ে। শাসক-বিরোধী সব দলই বাংলার একাধিক কেন্দ্রে মহিলাদের প্রার্থী করেছেন। রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে জুন মালিয়া, অগ্নিমিত্রা পাল থেকে লকেট চট্টোপাধ্যায়, দীপ্তিতা ধর থেকে সোনামণি মুর্মু, এঁরা সকলেই লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে গরমকে উপেক্ষা করে জনসংযোগ করতে নেমে পড়েছেন ময়দানে। তারকা প্রার্থী থেকে পোড় খাওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এই গরমে নিজেদেরকে কীভাবে সুস্থ রাখবেন সেটাই bangla.aajtak.in-কে জানালেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
মহিলা প্রার্থীরা কীভাবে সুস্থ থাকবেন এই গরমে?
বৈশাখী: দেখো গরমের মধ্যে আমরা শুধু ফিজিক্যাল হিটটাই দেখছি, এই সময় তো রাজনৈতিক উত্তাপটাও সমানভাবে চড়ে যখন ভোট আসে, তাই আমি বলব শুধু বাইরেটুকু কে শীতল রাখা নয়, মনের ভেতরটাকে শান্ত রাখাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। যখন মহিলারা ভোট যুদ্ধে নামেন, তাঁদের আক্রমণগুলো অনেক বেশি ব্যক্তিগত হয়। একটা মহিলা হওয়ার অপরাধ বোধ তাঁদের মধ্যে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। তাই আমার মনে হয় যে মানসিক উত্তাপটাও শারীরিক উত্তাপের সঙ্গে ব্যালেন্স করাটা জরুরি। এখন গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর জন্য এত যে উত্তাপ তার থেকে বাঁচার জন্য প্রথমেই আমাদের পোশাকের দিকে নজর রাখা দরকার, একেবারে হালকা, মমতা বন্দোপাধ্যায় যেমন হালকা রং পরেন, সেই হালকা রং টা আসলে সূর্যের আল্ট্রা ভ্যায়লেট রশ্মিটা শুষে নিতে সাহায্য করে, তাই হালকা রঙের পোশাক পরিধান করা উচিত এই সময়। তাতে সারাটা দিন ঝরঝরে থাকতে পারবে তাঁরা। এখন ডায়েট নিয়ে বেশিরভাগ মানুষই সচেতন। এঁদের মধ্যে যাঁরা বর্ষীয়ান প্রার্থী তাঁদের তো আলাদা করে কোনও টিপস দেওয়ারই দরকার নেই, কিন্তু যাঁরা নতুন প্রার্থী, নতুন প্রজন্ম, তাঁদের একটু দেখা দরকার, অনেক সময় অনেক বেশি জোশ থাকে তো, সেটা করতে গিয়ে কেউ যাতে অসুস্থ না হয়ে যায়, সেদিকটায় নজর দেওয়া দরকার।
এই সময় জনসংযোগ করতে গিয়ে ট্রোল হন, সেটা সামলাবেন কীভাবে?
বৈশাখী: আর আমার মনে হয় জনসংযোগের সময়, যেটা আমরা দেখেছি যে অনেক সময় মানুষকে ট্রোল হতে হয় হাত মেলানোর সময়। আসলে কোভিড তো আমাদের মধ্যে নতুন ধরনের ভয় সঞ্চয় করেছে, যখন জনগণের কাছাকাছি আসে তখন কী হয় মানুষরা তাঁদেরকে ছুঁয়ে দেখতে চায়, বিশেষত যদি তাঁরা তারকা প্রার্থী হন। আমার যেটা মনে হয় ভয়কে একটু দূরে সরিয়ে রেখে মানুষের সংস্পর্শে আসলে ভালোবাসা বৃদ্ধি ঘটবে অসুখের থেকে। এরপর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ার জন্য যা যা করা দরকার তা বাড়িতে এসে করলেই হবে, সুন্দর দেখাটাই তো শুধু কাম্য নয়, সুস্থ থাকাটাও কাম্য। সকল মহিলা প্রার্থীদের এটা আমি বলতে চাই যে কিছু সময় মনে হবে সূর্যের এত তাপ ভেতর থেকে সবকিছু শুষে নিচ্ছে আবার কিছু সময় মনে হবে এত উত্তাপ সেখানেও ভাষার নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন তাঁরা, তবে তার মধ্যেও আমার মনে হয় যে ভাষা সন্ত্রাসকে একেবারে ঠিক রেখে, শিরদাঁড়া সোজা করে আগামীর দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ মহিলারা যখন যে দায়িত্ব নেন, সেটা অনেক বেশি দায়িত্ব নিয়ে পালন করেন বলে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়। কারণ যাঁরা ঘর সামলাতে পারেন তাঁরা দেশ সামলাতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। সেই হিসাবে নিশ্চয়ই আমাদের মহিলা প্রার্থীরা, কটু কটাকে, তির্যক কথাকে এড়িয়ে মানুষের সঙ্গে জনগণের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করবে। এটাই আমার কাছে কাম্য।
শাড়ি নাকি সালোয়ার, কোনটা পরার পরামর্শ দেবেন?
বৈশাখী: আমি নিজে শাড়িতে স্বচ্ছন্দ বলে এটা মোটেও ভাবব না সকলেই শাড়িতে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। তবে এটা বলব যে এখনও প্রার্থীদেরকে শাড়িতে দেখতে অনেক বেশি ভোটাররা চায় কারণ বাড়ির মেয়ে, বাড়ির বউ, বাড়ির মা-র সঙ্গে তুলনা যেহেতু হয়, আসলে নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে একটা বাড়ির যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন তো ভোটাররা, তাই আমার মনে হয় শাড়ির কোনও বিকল্প থাকতে পারে না। কিন্তু অনেকটা অনেকট পথ চলতে হয়, পায়ে হেঁটে চলতে হয়, এমন অনেক রাস্তা দিয়ে চলতে হয় যেটা হয়ত মসৃণ নয়, কেউ যদি সালোয়ারে স্বাচ্ছন্দ্য হয় সেটা পরুক কিন্তু পোশাক আমাদের এমন হওয়া উচিত যেটা মানুষের একজন করে তুলবে, মানুষের থেকে আলাদা নয়।
এই গরমে প্রার্থীদের ডায়েট কেমন হওয়া উচিত?
বৈশাখী: দেখো, আমি মনে করি প্রচুর পরিমাণে এই সময় ফ্লুয়িড থাকা দরকার, সেটা ডাবের জল হোক বা কোনও হেলথ ড্রিঙ্কস হোক, মোট কথা শরীর যেন হাইড্রেট থাকে সবসময়। সঙ্গে স্ন্যাকিংয়ের ব্যবস্থা যেন থাকে। এটাও ঠিক যে এই সময় তো মানুষ খিদে-তৃষ্ণা ভুলে জনজোয়ারে ভাসার ফলে সেই অনুভূতিটা চলে যায়। কিন্তু আপনি সুস্থ না থাকলে আপনার প্রচার বিঘ্নিত হবে সেটা মাথায় রেখে হালকা স্ন্যাকিং বা পুরো খাবারের মেনুটাই হালকা রাখা প্রয়োজন। এমন খাবার খাওয়া উচিত যেটা আপনাকে এনার্জিতে ভরিয়ে রাখবে, হাই এনার্জি লেভেল খাবারগুলো খেতে হবে এই সময়। ফল হোক, শশা হোক এই ধরনের খাবার যেন বেশি থাকে ডায়েটে। এটা তাঁদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।