scorecardresearch
 

Election Result 2023 Analysis: ২৪'র নিরিখে TMC-র কী অবস্থা? ৪ ভোটের রেজাল্টে যা বোঝা গেল...

মেঘালয়ে তৃণমূল কংগ্রেস উল্লেখযোগ্য ভাল ফল করেছে। একটা নতুন রাজ্যে খাতা খুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংবেদনশীল রাজ্য মেঘালয়। ত্রিপুরায় আবার বিজেপির ক্ষমতায় ফিরে আসা— এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

Advertisement
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মেঘালয় আর মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির উপনির্বাচন, এই চারটি ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, সব মিলিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের লাভ-লোকসানের খতিয়ানটা তাহলে কীহল? 

প্রথমত এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, সার্বিকভাবে বৃহৎ প্রেক্ষাপটে সব থেকে বেশি লাভবান হয়েছেবিজেপি। তার কারণ, নাগাল্যান্ডে বিজেপি জোট ক্ষমতায় তো এলই, যেখানে কার্যত তৃণমূল কংগ্রেসের জেতার কোনও সম্ভাবনা ছিলও না। আর তৃণমূল কংগ্রেস সেখানে কোনও জোরও দেয়নি। প্রতিপক্ষ সেখানে দুর্বল। 

মেঘালয়ে তৃণমূল কংগ্রেস উল্লেখযোগ্য ভাল ফল করেছে। একটা নতুন রাজ্যে খাতা খুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংবেদনশীল রাজ্য মেঘালয়। ত্রিপুরায় আবার বিজেপির ক্ষমতায় ফিরে আসা— এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কেননা, ত্রিপুরায় পরিস্থিতিটা মোটেই বিজেপির জন্য অনুকূল ছিল না। সেখানে ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত বদল করতে হয়েছে। 

হিমন্ত বিশ্বশর্মা, যিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ত্রিপুরার রণকৌশল ঠিক করার দায়িত্ব দিয়ে মোদী-অমিত শাহ ভুল করেননি। তিনি কার্যত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমগ্র আটটি রাজ্যেরই স্থানীয় স্ট্র্যাটেজিস্ট। ত্রিপুরাতে তৃণমূল কংগ্রেস প্রথম থেকে চেষ্টা করেছিল। তারপরেই বুঝতে পারে যে, সেখানে সমস্যা অনেক জটিল। কংগ্রেস-সিপিএম উপজাতিভিত্তিক রাজনৈতিক দল, যেটাকে স্থানীয় লোকেরা রাজার দল বলে সেটিকেও সমর্থন করে, তার সঙ্গে বোঝাপড়া করার চেষ্টা করেও কোনও লাভবান হয়নি। সেখানে বিজেপি শেষহাসি হেসেছে। 

সাগরদিঘিতেও বিজেপি জিততে পারেনি। এই উপনির্বাচনে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের হৃতগৌরব ফিরে পাওয়া এবং সিপিএম আর কংগ্রেস জোটের একটা প্রার্থীকে জেতানো— এটা নিশ্চয়ই বিরোধী যে রাজনৈতিক পরিসর, তার জন্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যা তৃণমূল কংগ্রেসের পরাজয় তো বটেই। তবে, এখানে সবথেকে বেশি সফল হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের যে স্ট্র্যাটেজি, সেটা হচ্ছে মেঘালয়। 

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একদম প্রথমদিন থেকেই বলে আসছেন, মেঘালয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ভাল ফল করবে। সেখানে লক্ষ্যটা কিন্তু সরকার গঠন ছিল না। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান লক্ষ্য ছিল প্রধান প্রতিপক্ষ হওয়া। কংগ্রেস সেখানে ধারাবাহিক ভাবে চেষ্টা করেনি। সে সুযোগটা তৃণমূল কংগ্রেস নিয়েছে। কংগ্রেসের রাজনৈতিক পরিসরটা দখল করে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এতে লাভের ঘরে পসার তুলেছে বিজেপি। 

Advertisement

কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের লড়াই ও ভয়ঙ্কর হয়েছিল। কংগ্রেস মেঘালয়ে নেমেই তা দখল করতে তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছে, তৃণমূল কংগ্রেস আবার কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছে। তাতে বিজেপির লাভ হতে পারে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস কিন্তু কংগ্রেসকে শেষ করে দিয়ে নিজে রাজনৈতিক পরিসর তৈরি করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের যুক্তি হল, কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের কোনও জোট নেই। আমরা জোটের শরিক নই। কংগ্রেস সবসময় তৃণমূল কংগ্রেসকে আঘাত হানছে। 

পশ্চিমবঙ্গেও তো সাগরদিঘির উপনির্বাচনে কংগ্রেস যে জিতেছে, সেটা তো তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থীকে হারিয়ে এবং সিপিএম-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে। অধীর চৌধুরী তো নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী জেতার পরেও আজ বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার ফলে নিরপেক্ষ ভোট হয়েছে। তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশংসা করেছেন।  সুতরাং, এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের যুক্তি হল, কংগ্রেসের প্রধান বিরোধীপক্ষ যে বিজেপি, কংগ্রেসও সেটা বোঝার উপায় করে দিচ্ছে না। সেই কারণে, দিল্লিতে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধেও কংগ্রেস যেভাবে সোচ্চার, সেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ও কংগ্রেস সোচ্চার। তাহলে তৃণমূল কংগ্রেস কেন কংগ্রেসের বিরোধিতা করবে না? 

এখন এই পারস্পারিক বিরোধিতায় জোটের সম্ভাবনাটা কমে যাচ্ছে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে। আর যদি মোদী বিরোধীপক্ষর জোট না হয় তাহলে লাভ নরেন্দ্র মোদীর। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য হচ্ছে, আমরা একটা স্বাধীন দল। আমাদেরকে বাড়তে গেলে সেটা ভাবলে চলবে না যে, আমরা কংগ্রেসের পরিসরটা নিচ্ছি না। বিজেপির পরিসর নিচ্ছি। আমরা আমাদের মতো করে বাড়ার চেষ্টা করব।  ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের ফলাফল দেখার পর তখন জোট নিয়ে আলোচনা হবে। এখন তো জোট নেই। সুতরাং, যে যার মতো করে ভোট করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এই পরিস্থিতিতে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে  ২০২৪-এর যে রাজনীতি, তার প্রেক্ষিতে কিন্তু এই বিধানসভা নির্বাচন বলছে, বিরোধী ঐক্য কিন্তু যথেষ্ট বিপন্ন। 

Advertisement