অধীর রঞ্জন চৌধুরীরাজ্য জুড়ে চলা SIR প্রক্রিয়া নিয়ে সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। বিধানসভা ভোটের আগে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করেই ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস। SIR আবহে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরাই। কারণ ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা এই শিকড়ছেঁড়া মানুষদের মধ্যেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি। এমতাবস্থায় নিজেদের বাঁচাতেই সোমবার রাস্তায় নেমেছেন মমতাবালাপন্থী অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের মতুয়ারা।
বিশেষ উল্লেখযোগ্য চমক হল, সেই মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের পোড়খাওয়া নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকেও। মিছিল থেকে বার্তা দেওয়া হয়, কোনও ভাবেই যেন কোনও মতুয়ার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ না দেওয়া হয়।
মিছিল শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে অধীর বলেন, "এই পুরো এসআইআর প্রক্রিয়া আসলে নির্বাচনী বৈতরণী পার করার জন্য। ভোট মিটলে এসআইআর-এর কথা আর শোনা যাবে না। আসলে এসআইআর নিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়কে জুজু দেখানো হচ্ছে। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার চাইলে একসঙ্গে বসে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবেই ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করার জন্য SIR নিয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "এখন মতুয়াদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে রাখা হয়েছে। তাঁদের সঠিক ভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে না। চাইলে মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় ছোট ছোট করে ক্যাম্প করে খুব সহজেই এই সমস্যার সমাধান করা যেত। এখন শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে, সেখানেও এই প্রসঙ্গে আলোচনা করা যায়। তৃণমূলের অনেক বড় বড় নেতা তো সংসদে রয়েছেন। সেখানে কেন মতুয়াদের কথা বলা হচ্ছে না? ৫ বার ভোট দেওয়ার পরেও তাঁদেরকে কেন নাগরিকত্বের পরীক্ষা দিতে হবে।" পাশাপাশি একইসঙ্গে মমতা-মোদীকেও আক্রমণ করেছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, "মোদী স্যার ও দিদি ম্যাডাম, এদের গল্পে বাংলার মানুষ জেরবার হয়ে যাচ্ছে।"
কংগ্রেস SIR নিয়ে কী করছে?
পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে গিয়ে বিশেষ পর্যবেক্ষক সুব্রত গুপ্তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক স্মারকলিপি প্রদান করেন। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন, অমিতাভ চক্রবর্তী, প্রশান্ত দত্ত, পার্থ ভৌমিক, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় এবং রোহন মিত্র।
মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল দ্বিচারিতা করছে বলে দাবি করে কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়, মতুয়ারাই এদেশেরই নাগরিক। তাঁদের নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার নিয়ে কোনো নেতিবাচক পদক্ষেপ কংগ্রেস বরদাস্ত করবে না। মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটাধিকার ক্ষুন্ন করার যেকোনো অপচেষ্টা কংগ্রেস রুখবে বলেও এদিন দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
পাশাপাশি, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এদিন স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়, দেশভাগের আগে যাঁরা বিভিন্ন কারণে উদ্বাস্তু হয়ে এদেশের মাটিতে এসেছেন তাঁরা এদেশেরই নাগরিক। সুতরাং ভোটার তালিকা থেকে মতুয়াদের নাম বাদ দেওয়া হলে তা হবে একটা বেআইনি ও অনৈতিক কাজ।