নেহরুকে বিধান রায় লিখলেন, 'ভেবেচিন্তে দেখলাম, বাঙালিদের তিনটে সমস্যা...'

ভোটের এই আবহে যখন পশ্চিমবঙ্গে রাম, দুর্গা, বহিরাগত, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, জাতপাত-- নানা ইস্যু, ন্যারেটিভ প্রায় রোজ প্রতিদিন পরিবর্তন হচ্ছে, তখন স্বাধীন ভারতে বাংলার দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে দেওয়া একটি অতি সহজ ও সরল উত্তর আজও যেন প্রাসঙ্গিক। 

Advertisement
নেহরুকে বিধান রায় লিখলেন, 'ভেবেচিন্তে দেখলাম, বাঙালিদের তিনটে সমস্যা...' প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়
হাইলাইটস
  • অতি সহজ ও সরল উত্তর আজও যেন প্রাসঙ্গিক
  • বিধানচন্দ্র রায়ের সঙ্গে জওহরলাল নেহরুর বন্ধুত্ব অনেকেরই জানা
  • ডাক্তারি করে আয় ছিল ৪২ হাজার টাকা

মোদ্দা বিষয় হল, স্বাধীনতার ঠিক পরেই পশ্চিমবঙ্গের যে সমস্যাগুলি ছিল, আজও মোটের সেই ইস্যুগুলিই রয়েছে। যে কোনও রাজনৈতিক দলই পশ্চিমবঙ্গে যখনই ক্ষমতায় এসেছে, বিরোধী দলের তিনটি কমন আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়েছে বা হয়। কী রকম? 

বিধানচন্দ্র রায় -- গেটি ইমেজ
বিধানচন্দ্র রায় -- গেটি ইমেজ

ভোটের এই আবহে যখন পশ্চিমবঙ্গে রাম, দুর্গা, বহিরাগত, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, জাতপাত-- নানা ইস্যু, ন্যারেটিভ প্রায় রোজ প্রতিদিন পরিবর্তন হচ্ছে, তখন স্বাধীন ভারতে বাংলার দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে দেওয়া একটি অতি সহজ ও সরল উত্তর আজও যেন প্রাসঙ্গিক। 

ব্রিটেনের রানিকে দমদম বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে বিধানচন্দ্র রায় -- গেটি ইমেজ
ব্রিটেনের রানিকে দমদম বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে বিধানচন্দ্র রায় -- গেটি ইমেজ

বিধানচন্দ্র রায়ের সঙ্গে জওহরলাল নেহরুর বন্ধুত্ব অনেকেরই জানা। চিকিত্‍সক বিধানচন্দ্রকে অত্যন্ত সম্মান ও স্নেহ করতেন নেহরু। অসুস্থ হলে বিধান রায়ের উপরেই সম্পূর্ণ আস্থা রাখতেন। তা একবার বিধানচন্দ্র রায় তখন সদ্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নেহরু বিধান রায়ের কাছে চিঠি লিখে জানতে চাইলেন, বাংলার সমস্যাটা ঠিক কী? বিধান রায় চিঠির উত্তরে লিখলে, 'ভেবেচিন্তে দেখলাম, বাঙালিদের তিনটে সমস্যা। ১. খাওয়াদাওয়ার সমস্যা, ২. রুজিরোজগারের সমস্যা, ৩. মাথা গোঁজবার সমস্যা।' সোজা কথায়, অন্ন, কাজ ও বাসস্থান।

রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ ও জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে বিধানচন্দ্র রায় -- গেটি ইমেজ
রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন ও জওহরলাল নেহরুরে সঙ্গে বিধানচন্দ্র রায় -- গেটি ইমেজ

বিধানচন্দ্র রায় বিখ্যাত ডাক্তার ছিলেন, এটা সবাই জানেন। ডাক্তারি থেকে তখনকার দিনে তাঁর যা আয় ছিল, তা আজকের দিনে কোটিপতি নিঃসন্দেহে। বিধান রায় যখন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, তার আগের মাসে তাঁর ডাক্তারি করে আয় ছিল ৪২ হাজার টাকা। ১৯৪৮ সালে এক মাসে ৪২ হাজার টাকা রোজগার মানে বুঝতেই পারছেন।

শপথ নিচ্ছেন বিধানচন্দ্র রায় -- গেটি ইমেজ
শপথ নিচ্ছেন বিধানচন্দ্র রায় -- গেটি ইমেজ

মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্ব নেওয়া পরে বিধান রায় মাসে ১৪০০ টাকা মাইনে নিতেন। তখন তাঁর বয়স ৬৫ বছর। দেশ যখন স্বাধীন হল, তখন বিধানচন্দ্র রায় চোখের চিকিৎসার জন্য বিদেশে। তার কিছু দিন আগে জওহরলাল নেহরু তাঁকে উত্তরপ্রদেশের গভর্নর হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিধানচন্দ্র জানিয়েছিলেন, চোখের চিকিৎসা সম্পূর্ণ না করে তাঁর দেশে ফেরা সম্ভব নয়। যখন ফিরলেন, তখন সরোজিনী নাইডু ওই পদে রয়েছেন, তাঁকে সরিয়ে নতুন পদে বসতে বিধানচন্দ্র রাজি হননি। দিল্লির একটি পার্টিতে নিমন্ত্রিত হয়ে গভর্নর জেনারেল লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন বিধানচন্দ্র সম্বন্ধে এতই মুগ্ধ হন যে তিনি জওহরলালকে বলেন, লাট সাহেবের পদে না বসিয়ে এঁকে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব দিন।

Advertisement

শোনা যায়, বিখ্যাত ডাক্তার নীলরতন সরকারের মেয়ে কল্যাণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বিধান রায়ের। কিন্তু বিধান রায় তখন ডাক্তার পড়ছেন। অত্যন্ত কম রোজগার। নীলরতন সরকার রাজি হননি বিধান রায়ের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে দিতে। বিধান রায় আজীবন অবিবাহিতই ছিলেন। সেই না পাওয়া প্রেমিকাকে স্মরণ করেই কি আধুনিক কল্যাণী নগর তৈরি করেছিলেন? সবই জল্পনা। রটনা। লোকের মুখে ঘোরা। কিংবদন্তি তো একেই বলে!

ঋণস্বীকার: ‘ডাকনাম ভজন ভাল নাম বিধান’, শঙ্কর

POST A COMMENT
Advertisement