তৃণমূল বিমুখ চা বাগান
বন্ধ ও ধুঁকতে থাকা রুগ্ন চা বাগানের জন্য বরাবরই কল্পতরু হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একের পর এক প্রকল্প চালু করে চা বাগানের শ্রমিক ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরও উত্তরের চা বাগান বলয়ের একটা বড় অংশ তৃণমূল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
একাধিক প্রকল্প করেও ভোট নেই
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি প্রায় দ্বিগুণের বেশি করে দিয়েছে। ৯৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২০ টাকা করা হয়েছে। এরপর বিভিন্ন বন্ধ রুগ্ন চা-বাগান গুলির বাসিন্দাদের জন্য আজীবনের আবাসন, চা সুন্দরী প্রকল্প চালু করেছে। বহু বাগানের শ্রমিকরা সেই আবাসন পেয়ে গিয়েছেন। চা বাগানের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অবসরপ্রাপ্তদের জন্য জয় জোহর পেনশন প্রকল্প চালু করেছেন। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মন পাওয়ার জন্য করম পুজো, বিরসা মুন্ডার জন্ম জয়ন্তী পালন, সাদ্রী ভাষার স্বীকৃতি, উত্তরবঙ্গে আদিবাসীদের টাস্কফোর্স গঠন, একাধিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করে কোনও রকম খামতি রাখেননি।
লোকসভার ধারা অব্য়াহত বিধানসভাতেও
লোকসভা নির্বাচনের যে ট্রেন্ড দেখা গিয়েছিল বিধানসভা থেকে তার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। লোকসভায় সমস্ত চা বাগান এলাকাতেই বিজেপি এগিয়ে ছিল। তবে মনে করা হয়েছিল বিধানসভার ক্ষেত্রে যেহেতু প্রেক্ষিতটা আলাদা, তাই কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু আদতে তা হয়নি।
কোথায় কোথায় ধাক্কা খেল তৃণমূল
চা বাগান অধ্যুষিত আলিপুরদুয়ার জেলার পাঁচটি আসনই বিজেপির দখলে। দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র টি বাদ দিলে বাকি চারটি বিধানসভা চা বাগান অধ্যুষিত। একমাত্র চা বাগান অধ্যুষিত মালবাজার এবং কালিম্পং জেলাটি তৃণমূল পেয়েছে। বাকিগুলি কোনওটিতেই তৃণমূল ভালো ফল করতে পারেনি। জয়ের ব্যবধানও অনেকটাই। যে দুটি বিধানসভায় তৃণমূল জিতেছে সেখানেও সব এলাকায় তৃণমূলের লিড দিতে পারেনি।
কোথায় ছিল ফাঁক
প্রশ্ন উঠছে, এত সমস্ত কিছুর দেওয়ার পরও কেন মন পেলেন না মুখ্যমন্ত্রী! মূলত এই সুবিধাগুলি কে, কীভাবে দিচ্ছে, তা ঠিকমতো শিক্ষার হার যেখানে কম, সেই সমস্ত আদিবাসী এলাকায় ঠিকমত পৌঁছাতে পারেননি স্থানীয় নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন আইএনটিটিইউসি ভূমিকা উত্তরবঙ্গে তেমন নেই। কেন্দ্রীয় মিটিং-মিছিলের বাইরে জনসংযোগের অভাব রয়েছে তাদের। শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার সব জায়গায় একই ছবি। পদ আঁকড়ে বসে থাকলেও কাজের কাজ কিছু করতে পারেননি বলে দলের মধ্যেই অনেকে স্বীকার করেছেন। তৃণমূল নেতৃত্ব নতুন করে রণকৌশল ঠিক করার কথা বললেও জনসংযোগ তৈরি করতে না পারলে এবং সারা বছর শ্রমিকদের সঙ্গে না থাকলে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে ষোল আনা।