কোচবিহারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়একসময় ফরোয়ার্ড ব্লকের আধিপত্য ছিল। দাপুটে নেতা কমল গুহ-র জনপ্রিয়তায় দীর্ঘদিন ভাগ বসাতে পারেনি অন্য কোনও দল। তাঁরই ছেলে উদয়ন গুহ আবার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। রাজ্যের মন্ত্রীও। ১৯৭৭ থেকে টানা ১০ বার জিতে রেকর্ড গড়েছিল ফরওয়ার্ড ব্লক। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিতাই ছাড়া কোচবিহারের ৬টি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। সিতাই জিতেছিল তৃণমূল। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন দেখিয়ে দিল, রাজবংশী ও মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের যে হাওয়া গেরুয়া শিবিরের দিকে বইছিল, তার অভিমুখ বদলে গিয়েছে। এই সেই কোচবিহার, যেখানে রাজকন্যা-রাজমাতা গায়ত্রী দেবী কালক্রমে রাজবাড়ি থেকে খানিক দূরে থাকলেও রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে পারেননি। জয়পুর লোকসভা আসন থেকে নির্বাচনে লড়েছিলেন। সেখানে রেকর্ড ভোটে জয়ের সুবাদে তাঁর নাম উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে।
তৃণমূল পেয়েছে ৪৮.৫৭ শতাংশ ভোট ও বিজেপি পেয়েছে ৪৬.১৬ শতাংশ ভোট
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার দেখিয়ে দিয়েছে,খেলা ঘুরে গিয়েছে। যার নির্যাস, একদা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ডেপুটি নিশীথ প্রামাণিকের হার। তৃণমূল প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার জয়। যদিও মার্জিন খুব কম। ভোট শতাংশের নিরিখে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল পেয়েছে ৪৮.৫৭ শতাংশ ভোট ও বিজেপি পেয়েছে ৪৬.১৬ শতাংশ ভোট। প্রায় বছরখানেক পর আবার কোচবিহারে সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার দু’দিনের সফরে আজ প্রশাসনিক বৈঠক এবং মঙ্গলবার রাসমেলা ময়দানে জনসভা করবেন তিনি। ২০২১ সাল ও ২০২৬ সালের মধ্যে কোচবিহারে তৃণমূল কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল, বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্ক খর্ব করা ও ৭টি বিধানসভা আসনকেই নিজেদের দিকে আনা।
৪২ শতাংশ রাজবংশী ভোট
কোচবিহার উত্তর আর মাথাভাঙ্গা এই দুই বিধানসভায় রাজবংশী ভোট সবচেয়ে বেশি। আছে নমঃশূদ্র ভোটও। কোচবিহার জেলায় সব আসনে রাজবংশী ভোট রয়েছে৷ ৪২ শতাংশ ভোট হল রাজবংশী। এখানে বিজেপি-র একটি পুরনো প্রতিশ্রুতি মনে পড়ছে। নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন গড়া ও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মতো কোচবিহারে পঞ্চানন বর্মার মূর্তি বসানো। দুটোর কোনওটিই হয়নি। ফলে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটেও এই প্রসঙ্গে বিজেপি-কে বিঁধতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস।
কোচবিহার মানেই বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা
এবারের ভোটে আরেকটি নতুন ইস্যু হল SIR (স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন)। কোচবিহার মানেই বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা। ফলে কোচবিহারে ভোট স্ট্র্যাটেজিতে মমতা যে SIR ইস্যুকে কাজে লাগাবেন, স্বাভাবিক। কোচবিহারের জনবিন্যাসে রাজবংশী ও মতুয়া সম্প্রদায়ের বড় অংশ থাকায় SIR ইস্যু রাজনৈতিক ভাবে এই অঞ্চলে সংবেদনশীল বিষয়।
বংশীবদনের সমঝোতা ও হুঁশিয়ারি
আরেকদিকে দ্য গ্রেটার কোচবিহার পিপলস্ অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বংশীবদন বর্মণ আবার তৃণমূল কংগ্রেসকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। তিনি চান আসন সমঝোতা। না হলে বিজেপি-কে সমর্থনের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। বস্তুত ২০২৪ সালের লোকসভায় বংশীবদন ও তাঁর সংগঠন তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করেছিল। সে ক্ষেত্রে এই ইস্যুটিকেও সামলাতে হবে তৃণমূলকে।