সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে ধার করে একটু বদলে এ ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, 'দুই নারীকে ঘিরে হাতে তরোয়ারি' বিজেপি ও তৃণমূলের!
পশ্চিমবঙ্গে একুশের নির্বাচনে প্রায় নিত্যদিনই বদলে যাচ্ছে ইস্যু। আপাতত রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি ও তৃণমূলের বিবাদের কেন্দ্রে দুই মহিলা। একজন হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলা। আরেকজন বিজেপির যুবনেত্রী পামেলা গোস্বামী। দুটি ঘটনারই উত্থান প্রায় পিঠোপিঠি!
পামেলা-ঝামেলা
গত শুক্রবারের ঘটনা। হঠাত্ ব্রেকিং নিউজ! বিজেপি-র যুবনেত্রী পামেলা গোস্বামী কয়েক লক্ষ টাকার মাদক সহ গ্রেফতার। কলকাতা পুলিশের হাতে পামেলা ধরা পড়তেই শাসক-বিরোধী জোর তর্জা শুরু। বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে রাজ্যের বিজেপি নেতারা দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে বললেন, আইন আইনের পথে চলবে। দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি হবে। আবার দলীয় নেত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে দিলীপ ঘোষ বললেন, 'পামেলার ঘটনাটি সত্যি কি না দেখতে হবে। যদি মিথ্যে হয়, তাহলে আমরা রাস্তায় নামব। কারণ, আমাদের বহু কর্মীকে রাজ্য সরকার মিথ্যে গাঁজা মামলায় ফাঁসিয়েছে।'
ঘটনা অন্য মোড় নিল শনিবার। কোর্ট লক-আপে নিয়ে যাওয়ার সময় পামেলা চিত্কার করে বললেন, তাঁকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়েছেন বিজেপি নেতা রাকেশ সিং। বস্তুত, এই রাকেশ সিং আবার কৈলাস বিজয়বর্গীয় ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। বিজেপি-র এহেন অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগ হাত ছাড়া করতে বিন্দুমাত্র সময় নেয়নি শাসকদল। পামেলা সিআইডি তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন ঘটনার। একটি সংবাদমাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করেছেন, গ্রেফতার হওয়ার আগের দিন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ করেছিলেন পামেলা। তিনি এবং তাঁর প্রোফাইলের আরও কয়েকজন বিজেপি যুবনেতা নেত্রী দেখা করতে চেয়েছিলেন।
এ দিকে রাকেশ সিং দাবি করেন, পামেলাকে দিয়ে বলানো হচ্ছে এসব কথা। বিজেপির গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেকারণে কলকাতা পুলিশকে দিয়ে এই সব কাজ করাচ্ছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মদত রয়েছে পামেলার এই মন্তব্যের নেপথ্যে। পুরো ঘটনাটি কলকাতা পুলিশের সাজানো বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন রাকেশ সিং। রাকেশ সিংকে লালবাজারে হাজিরা দিতে বলে পুলিশ। যদিও রাকেশ জানান, তিনি ২৬ তারিখের আগে হাজিরা দিতে পারবেন না। তবে এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের সামনে দুটি শর্ত রাখেন রাকেশ। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা রক্ষী, ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ও দুই আইনজীবীকে উপস্থিত থাকার অনুমতির শর্ত দেন তিনি। এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, তখন রাকেশ সিংয়ের বাড়ি ঘিরে ফেলেছে পুলিশ। হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, লালবাজারের নোটিশের উপরে স্থগিতাদেশ দেওয়া যাবে না। পুলিশ যা করছে, আইন মেনেই করছে।
রুজিরা-পর্ব
কাট টু রবিবার। আবার ব্রেকিং নিউজ। কয়লা পাচার কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে সিবিআই। তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ। আবার তর্জা শুরু। বিজেপি নেতারা একেবারে পর পর নিশানা করতে শুরু করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বললেন, 'লালা, অনুপ মাঝিদের টাকা কারা নিত আর তা যে তোলাবাজ ভাইপোর বাড়িতে গিয়েছে তা সবাই জানে। তমলুকের সভায় বলেছিলাম, থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককের কাশিকর্ন ব্যাঙ্কের এক শাখায় টাকা জমা পড়ত। লালাবাবুর টাকা ঢুকেছে। টাকা বিদেশে গিয়েছে। শুধু থাইল্যান্ডে নয়, আরও অনেক জায়গায় গিয়েছে। তোলাবাজ ভাইপো যেন এখনই ফাঁসির মঞ্চে না যান। এটাই অনুরোধ। কেননা এখনও অনেক কিছু দেখার বাকি রয়েছে।' কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত করছে। এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। আইন মেনেই সব কিছু চলবে। তবে আমি তিন বছর আগেই বলেছিলান, কোন কোন পুলিশ, নেতাদের সাহায্যে ওই টাকা কার বাড়িতে পৌঁছচ্ছে। কান টানলে তো মাথা আসবেই।
পাল্টা রুখে দাঁড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করেন, 'ওরা যদি ভাবে এই সব করে আমাদের নত করবে, তা হলে ভুল করছে। আমরা অন্যদের মতো মাথা নত করব না।'
At 2pm today, the CBI served a notice in the name of my wife. We have full faith in the law of the land. However, if they think they can use these ploys to intimidate us, they are mistaken. We are not the ones who would ever be cowed down. pic.twitter.com/U0YB6SC5b8
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) February 21, 2021
রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'অত্যন্ত অন্যায়, ঘৃণ্য। আমাদের বাড়ির লোক রাজনীতি করে না। ভোট গেলেই সিবিআই, ইডি সক্রিয় হয়ে যায়। সিবিআই-কে বলো, বিজেপি-কে বলতে, বাপের ব্যাটার মতো সামনে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে। বাড়ির মা, বোনকে টেনে নিয়ে মোকাবিলা নয়।'
সব মিলিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তে তর্জার কেন্দ্রে দুই নারী। রুজিরা ও পামেলা।
ওদিকে জেলায় জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভারী বুটের রুটমার্চ। ভোট আসছে!