সোমবারই ‘ঘর ওয়াপসি’হয়েছে সুজাতা মণ্ডল খাঁর। স্বামীর সঙ্গেই লোকসভা ভোটের আগে বিজেপিতে গিয়েছিলন সুজাতা। স্বামী বিষ্ণুপুরের সাংসদ হলেও তিনি মহিলা হিসাবে কোনও সম্মানই পাচ্ছিলেন না ভারতীয় জনতা পার্টিতে। তাই পুরনো দলে ফিরে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারছেন বলে গতকাল দাবি করেছিলেন সুজাতা। আর তৃণমূলে যোগ দিতেই তার নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিল প্রশাসন। এবার থেকে সুজাতার সবসময়ের সঙ্গী থাকবেন তিন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী, এমনটাই জানা যাচ্ছে। মঙ্গলবার স্বামী সৌমিত্র খাঁর থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের আইনি নোটিস পান সুজাতা। তারপরেই তাঁর সুরক্ষার কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।
খুন হয়ে যেতে পারেন স্ত্রী সুজাতা। সোমবার এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। বিষ্ণুপুরের সাংসদের আশঙ্কা, তৃণমূল সুজাতাকে কাজে লাগিয়ে ছুড়ে ফেলে দেবে। সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে সাংবাদিক সম্মেলনে সৌমিত্র খাঁকে বলতে শোনা যায়, ''মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী দয়া করে সুজাতাকে খুন করে ফেলবেন না৷' যে স্ত্রীর জন্য সৌমিত্র গতকাল চোখের জল ফেলেন মঙ্গলবার তাঁকেই দেখা যায় মারাত্মক সব অভিযোগ এনে আইনি চিঠি পাঠাতে। এরপরেই দলবদল করা সুজাতার নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেয় রাজ্য সরকার।
দল বদল করায় তাঁর ক্ষতি হতে পারে এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করছিলেন সুজাতা মণ্ডল। সোমবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে নতুন দলে যোগ দেন তিনি। এখনও তিলোত্তমাতেই রয়েছেন সুজাতা। সোমবার রাতে তৃণমূল নেতৃত্ব ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠকও হয়। ইতিমধ্যে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারের নির্দেশে তিন জন পুলিশ কর্মী তাঁকে নিরাপত্তা দিতে কলকাতায় এসেছেনছেন। তিন পুলিশ কর্মীর কাছে থাকছে আগ্নেয়াস্ত্র। এদের মধ্যে একজনের কাথে একে ৪৭ এবং বাকি দুজনের কাছে ৯ এমএম পিস্তল রয়েছে। তাঁরা সুজাতার সর্বক্ষণের সঙ্গী থাকবেন বলেই জানা যাচ্ছে। এছাড়াও সুজাতার বড়জোড়ার বাড়িতে ইতিমধ্যেই চার পুলিশ কর্মীকে সুরক্ষার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন এসআই পদমর্যাদার ও বাকি তিনজন কনস্টেবল।
গত লোকসভা ভোটে সৌমিত্রকে বিজেপি প্রার্থী করেছিল বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে। কিন্তু একাধিক মামলায় অভিযুক্ত সৌমিত্র বাঁকুড়া জেলার কোথাও, মানে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ছ’টি বিধানসভা ক্ষেত্রে প্রচারের জন্য ঢুকতেই পারেননি আদালতের নির্দেশে। সৌমিত্রর অনুপস্থিতিতে প্রচার করেছিলেন স্ত্রী সুজাতা। প্রচারে কায়াহীন স্বামীর ছায়া হয়ে। কার্যত সুজাতার প্রচারেই বিষ্ণুপুর থেকে দ্বিতীয় বার সাংসদ হন সৌমিত্র। ভোটে জেতার জন্য যাবতীয় কৃতিত্ব সৌমিত্র স্ত্রীকেই দিয়েছিলেন। শোনা যাচ্ছে সুজাতার ভোট প্রচারের সেই অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগাতে পারে তৃণমূল শিবির। ২০২১-এর নির্বাচনে বাঁকুড়ার কোনও তফসিলি জাতি সংরক্ষিত আসন থেকে তাঁকে প্রার্থী করতে পারে দল। বাঁকুড়ায় ১২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৪টি তফসিলি জাতির সংরক্ষিত। এর মধ্যে সোনামুখী থেকে সুজাতা প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা যাচ্ছে।