
নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষা দফতরের একাধিক শীর্ষ কর্তা জেলবন্দি। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে বাম আমলে চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ১৯৯০ থেকে ২০১১ পর্যন্ত চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এরপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে একটি চিরকুটের ছবি। অনেকেই (বিশেষত তৃণমূল নেতা, সমর্থকরা) এই চিরকুটটি শেয়ার করে বাম আমলে চিরকুটের মাধ্যমে চাকরির অভিযোগ করেছেন।
ছবিটি টুইটারে শেয়ার করে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ লিখেছেন, "সিপিএমের চিরকুট। তদন্ত হোক।" তাঁর পোস্টের আর্কাইভ লিঙ্কটি এখানে দেওয়া হল।
ভাইরাল চিঠিতে কী লেখা রয়েছে?
২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর,পশ্চিম মেদিনীপুরের পাচরা সিপিএম লোকাল কমিটির লেটার-হেডে লেখা ওই চিরকুটটি আসলে একটি চাকরির সুপারিশ। খগেন্দ্রনাথ মাহাতর উদ্দেশে চিঠিটি লিখেছিলেন জয়জীম আহাম্মদ। মোহিতলাল হাজরার জন্য চাকরির সুপারিশ করে ওই চিঠিটি লেখা হয়েছিল। ওই সুপারিশ পত্রে লেখা হয়েছে, "কমরেড, আমি শ্রী মোহিতলাল হাজরা গ্রাম পালজাগুল পোস্ট জাগুল জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর জানি ও চিনি। এবং খুব দুঃস্থ পরিবারের ছেলে। বামপন্থী আন্দোলনের সাথে যুক্ত। একে আপনার কাছে পাঠালাম। ধেড়ুয়া অঞ্চল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গ্রুপ ডি পদে যে লোক নেওয়া হবে, সেই বিষয়ে যাহাতে একে নেওয়া যায়, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ করছি। পরে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করে নেব।"
চিঠির পিছনের আসল গল্পটা কী? যে ব্যক্তির জন্য চিঠিটি লেখা হয়েছিল, তিনি কি চাকরি পেয়েছিলেন?
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক টিম তদন্ত করে দেখেছে যে, সুপারিশ পত্রটি বাম আমলে লেখা হলেও, যে ব্যক্তির জন্য সুপারিশটি করা হয়েছিল তিনি চাকরি পাননি।
কীভাবে এগোল অনুসন্ধান?
এই চিরকুটে চাকরি সংক্রান্ত তথ্য ইন্টারনেটে সার্চ করার সময় ২০২২ সালের ১৮ জুন Anandabazar.Com-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমাদের নজরে পড়ে। ওই প্রতিবেদনেও ভাইরাল চিরকুটটি দেখতে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মোটামুটি ২০২২ সালের জুন মাস থেকে চিরকুটটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। গতবছর এই চিরকুট নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও খুব হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিরকুটে যে স্কুলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তথ্য যাচাইয়ের জন্য গত বছরই ওই স্কুলে গিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ধেরুয়া অঞ্চলের তৃণমূল নেতা কাজল সিংহ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁকে জানিয়েছিলেন সেখানে মোহিতলাল হাজরা নামে কেউ চাকরি করেন না।
ইউটিউবে এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০২২ সালের ২০ জুন ABP Ananda-এর একটি প্রতিবেদনও আমাদের নজরে পড়ে। সেখানেই চাকরি প্রার্থী মোহিতলাল হাজরার বক্তব্য আমরা দেখতে পাই। সুপারিশ চিঠির কথা স্বীকার করলেও, তিনি জানিয়েছিলেন যে চাকরি পাননি। তবে যাঁর উদ্দেশ্যে ওই চিঠি লেখা হয়েছিল, সেই খগেন্দ্রনাথ মাহাত চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন।
এই চিঠির কথা স্বীকার করে সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ আমাদের জানান, "একজন এমএলএ-কে চিঠি লিখেছে পার্টির কোনও কমরেড। জনপ্রতিনিধিদের কাছে যে কোনও ব্যাপারে সুপারিশ করে অনেকেই চিঠি পাঠায়। কিন্তু এর সঙ্গে শাসকদেলর দুর্নীতির তুলনা হয়না। দুর্নীতি সেটাই, যদি ওই চিঠির উপর ভিত্তি করে শাসকদলের কোনও নেতা সরকারি কোনও অধিকারিককে বলে যে, এই লোককে পাঠাচ্ছি এর কাজ করে দেওয়া হোক। এটা দুর্নীতি।"
সুতরাং, চাকরি প্রার্থী ও স্থানীয় তৃণমূল নেতার বক্তব্যের ভিত্তিতে এটা বলাই যায় যে, চিরকুটটি এখন যে দাবির সঙ্গে ছড়ানো হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর। আমরা অন্তত এটা বলতেই পারি যে ভাইরাল এই চিঠিতে যার নাম সুপারিশ করা হয়েছে তিনি অন্তত ওই সুপারিশের ভিত্তিতে কোনও চাকরি পাননি।
চিরকুট লিখে বাম আমলে পার্টি ধরে কত চাকরি হয়েছে এবার শ্বেতপত্র প্রকাশ হবে
চিরকুটটি এখন যে দাবির সঙ্গে ছড়ানো হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর। আমরা অন্তত এটা বলতেই পারি যে ভাইরাল এই চিঠিতে যার নাম সুপারিশ করা হয়েছে তিনি অন্তত ওই সুপারিশের ভিত্তিতে কোনও চাকরি পাননি।