ফ্যাক্ট চেক: ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের বিজয় উদযাপনের দৃশ্য দাবিতে ছড়াল অসম্পর্কিত ভিডিও

ভারতীয় সময় অনুসারে সোমবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে ইরান-ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংঘর্ষবিরতি কার্যকরের পরেই রাজধানী তেহেরান-সহ গোটা দেশ জুড়ে বিজয় উদযাপন করতে দেখা গেছে ইরানের নাগরিকদের। আর এই সার্বিক পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে এই সংক্রান্ত তথাকথিত দুটি ভিডিও। 

যেখানে প্রথম ভিডিওতে স্টেডিয়াম জাতীয় কোনও একটি স্থানে কয়েক হাজার মানুষের সামনে বক্তব্য রাখতে দেখা যাচ্ছে ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে। অন্যদিকে দ্বিতীয় ভিডিওতে, ইরানের জাতীয় পতাকা লাগানো একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সেনাবাহিনীর গাড়িকে প্যারেড করতে দেখা যাচ্ছে। আর রাস্তার দুই পাশে হাতে পতাকা নিয়ে সেই প্যারেড দেখছেন বহু সংখ্যক মানুষ।

উভয় ভিডিওই শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেগুলি ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের বিজয় উদযাপন দৃশ্য। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম ভিডিওটি শেয়ার করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ইরানে চলছে বিজয় মিছিল। ASSALAMU ALAYKUM WA RAHMATULLAH.”

অন্যদিকে দ্বিতীয় ভিডিওটি শেয়ার করে অন্য এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন,  “ইরানে চলছে বিজয় মিছিল ✌️ আলহামদুলিল্লাহ।”

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, প্রথম ভিডিওটি ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর তেহেরানে শুক্রবারের নামাজের পর আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের বক্তব্য দেওয়ার দৃশ্য। অন্যদিকে দ্বিতীয় ক্লিপটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি।

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

প্রথম ভিডিও: প্রথম দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর ইরান ভিত্তিক আমেরিকার সরকারি রেডিও চ্যানেল Radio Farda-তে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেটি ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর শুক্রবারের নামাজের পর ইরানের রাজধানী তেহেরানে সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের দেওয়া ভাষণের দৃশ্য। যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়। 

رهبر جمهوری اسلامی روز ۱۳ مهرماه پس از حدود پنج سال به عنوان امام جمعه تهران خطبه‌های نماز جمعه را اقامه کرد.
علی #خامنه‌ای در آغاز خطبه‌های نماز جمعه گفت: «کاری که نیروهای مسلح ما کردند کم‌ترین مجازات برای جنایات رژیم صهیونی بود.»
به نظر می‌رسد منظور او حمله اخیر ایران به… pic.twitter.com/gWJ2aG7lC5

— RadioFarda‌|‌راديو فردا (@RadioFarda_) October 4, 2024

এরপর উক্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে একাধিক অন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশট-সহ এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন-সহ খামেনেইয়ের দেওয়া পুরো ভাষণের ভিডিওটি পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর ইজরায়েলের উপর প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ৪ অক্টোবর তেহেরানের গ্র্যান্ড মোসাল্লা মসজিদে শুক্রবারের নামাজের পর সেই বিষয়ে বক্তব্য রাখেন দেশটির সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেনেই এবং তিনি ইজরায়েলের উপর ইরানের হামলাকে 'বৈধ' বলে দাবি করেন। 

দ্বিতীয় ভিডিও: এরপর দ্বিতীয় ভিডিওটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে গত পাঁচদিন আগে truepromise3iran নামক ইরান ভিত্তিক একটি টিকটক অ্যাকাউন্টে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। অর্থাৎ ইরান-ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার তিনদিন আগেই ভিডিওটি ওই টিকটক অ্যাকাউন্টে আপলোড করা হয়েছিল। যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভিডিওটি ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের বিজয় উদযাপনের নয়। অন্যদিকে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা এর কমেন্ট সেকশনে অনেকেই এটিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি বলে দাবি করতে দেখা যায়।

এরপর বিষয়টি সম্পর্কে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হতে ভাইরাল ভিডিওটিকে Cantilux নামক এআই যাচাইকারী ওয়েবসাইটে পরীক্ষা করা হয়। ওয়েবসাইটি ৮৬ শতাংশ নিশ্চিতভাবে জানিয়েছে যে ভাইরাল ভিডিওটি এআই দ্বারা তৈরি। 

এর থেকে প্রমাণ হয় যে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের বিজয় উদযাপনের দৃশ্য দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে অসম্পর্কিত কিংবা এআই নির্মিত ভিডিও।