
টানা বৃষ্টির জেরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের সিলেট-সহ একাধিক অঞ্চলে। আর এই বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশটির প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ। আর এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে বন্যা সংক্রান্ত একাধিক ভিডিয়ো ও ছবি।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনই একটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, কোনও একটি অঞ্চলে বাঁধ ভেঙে গ্রামের ভিতরে জল প্রবেশ করছে। ছবিটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, যেখানে ভারতকে বাংলাদেশের তরফে আম, ইলিশ, বন্দর এমনকি রেলও দিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেখানে ভারত বাংলাদেশে বন্যার জল ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ছবিটি পোস্ট করে লিখেছেন, “অবশেষে ঢুকতে শুরু করেছে ভারতের পানি। কে বলেছে ভারত আমাদের বন্ধু নয়....? তারা পানি নিয়ে আমাদের পাশে দাড়িয়েছে কথা দিচ্ছি আগামী মৌসুমে আমরা হাঁড়িভাঙা আম এবং ইলিশ মাছ বিপুল পরিমাণে দিয়ে বন্ধুত্বের ভালবাসা অক্ষুণ্ণ রাখবো। বন্দর নাও রেললাইন নাও তবুও আমাদের পানি দিও ভাসিয়ে নৌকা নিয়ে থাকবো মোরা বেদে হয়ে বহরে । বন্দেমাতরম - জয়বাংলা।” (ক্যাপশনের বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল দাবিটি মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর। আসলে ছবিটিতে ২০২০ সালে প্রবল জোয়ারের জেরে বাংলাদেশের সাতক্ষীর কপোতাক্ষ নদীর বাঁধ ভাঙার পর কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল দাবির সত্যতা এবং ছবিটিতে যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে সেটি ভারত থেকে বাংলাদেশে বন্যার জল ঢুকিয়ে দেওয়ার কিনা সেই সংক্রান্ত তথ্য জানতে আমরা একাধিক কিওয়ার্ড ও রিভার্স ইমেজ করি। কিন্তু আমরা আমাদের সার্চে এমন কোনও তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি যা থেকে প্রমাণ হয় ভাইরাল দাবির সত্যতা প্রমাণ।
পক্ষান্তরে, আমরা আমাদের রিভার্স ইমেজ সার্চে ২০২০ সালের ২০ আগস্ট বাংলাদেশ জার্নাল নামক একটি পোর্টালে এই একই ছবি-সহ একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কপোতাক্ষ নদীর গাবুরা ইউনিয়নের বাঁধ ভেঙে দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রবল জোয়ারের কারণে লেবুবুনিয়া রিংবাঁধের তিনটি স্থান ভেঙে যায়। যার ফলে ভেসে যায় আসংখ্য চিংড়ি মাছের ঘের ও ছোট-বড় পুকুর। এবং মূহুর্তের মধ্যে লোকালয়ে জল প্রবেশ করে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা।
আমরা এই একই তথ্য দেখতে পাই বাংলাদেশের অপর এক সংবাদমাধ্যম কালেরকন্ঠের একটি প্রতিবেদনে। ২০২০ সালের ২১ অগস্টের সেই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নে কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ভেঙে জলে প্লাবিত হয়েছে দুটি গ্রাম। দিনভর দমকা হাওয়া, বৃষ্টি ও জোয়ারের চাপে বাঁধের ৬টি অংশ ভেঙে যায়। যার ফলে এই ঘটনা ঘটে।
এর থেকে প্রমাণ হয় ভারত থেকে বাংলাদেশে বন্যার জল ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে সেটি বিভ্রান্তিকর ও ভুয়ো।
তবে এখানে উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশের সিলেটের ১৩ উপজেলা বন্যাপ কবলে পড়েছে। প্রথম আলো-সহ বিভিন্ন বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে এই বন্যার কারণ হিসাবে প্রবল বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা জলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সেই ঘটনার সঙ্গে ভাইরাল ছবির কোনও সম্পর্ক নেই।
ভারত থেকে বাংলাদেশে বন্যার জল ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ভাইরাল দাবিটি মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর। আসলে ছবিটিতে ২০২০ সালের অগস্ট মাসে প্রবল জোয়ারের জেরে বাংলাদেশের সাতক্ষীর কপোতাক্ষ নদীর বাঁধ ভাঙার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।