চলতি বছর ডিসেম্বর মাসে উত্তর প্রদেশের ফতেহপুরে একটি ১৮৫ বছর পুরনো মসজিদের একটি অংশ ভেঙে ফেলে প্রশাসন। মসজিদের ওই অংশটি বেআইনিভাবে নির্মিত দাবি করে ভেঙে ফেলে হলেও এ নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। এই আবহে গত কয়েকদিনে একটি মসজিদ ভাঙার ভিডিও শেয়ার করে ফেসবুকে দাবি করা হচ্ছে যে সম্প্রতি আবারও একটি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এই ভিডিওতে একটি বুলডোজারকে দেখা যাচ্ছে একটি মসজিদের কাঠামো ভেঙে ফেলতে। এর চারপাশে অনেক এলাকাবাসী এই দৃশ্য দেখে চোখের জলও ফেলছেন।
ভিডিওটি মূলত গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে শেয়ার করা হচ্ছে, সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হচ্ছে যে, "আজ ভারতে মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার দৃশ্য। গ্রামবাসীর মাঝে কান্নার ভূমিকা। হে আল্লাহ আপনি মুসলমানদের সাহায্য করুন' আমীন।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনও ঘটনা নয়। বরং ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের। প্রশাসনের বক্তব্য অনুযায়ী, সংরক্ষিত বন্যভূমি উদ্ধার করতেই এই বেআইনি মসজিদ-সহ কিছু বাড়িও ভেঙে ফেলা হয়।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ভিডিওটি TIMES LAKHIPUR নামের একটি চ্যানেলের লোগো দেখা যাচ্ছে। কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এই চ্যানেলের ফেসবুক পেজে আমরা ওই একই ভিডিওটি খুঁজে পাই যা ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর আপলোড করা হয়েছিল। যা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং বছর খানেক আগেকার।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে অসমীয়া ভাষায় লেখা হয়েছিল, "আংটিহারা মসজিদ ভেঙে দেওয়ার মুহূর্তের দৃশ্য। গ্রামবাসীদের মধ্যে কান্নার রোল।" এই বিষয়টি সূত্র ধরে বেশ কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করলে নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া টুডের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রকাশিত এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, অসমের গোয়ালপাড়া জেলায় নলবাড়ির সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। বেআইনি নির্মাণ ভেঙে বনাঞ্চল পুনরুদ্ধারের জন্যই এই উচ্ছেদ অভিযান চালায় প্রশাসন। এই খবরে বনবিভাগের আধিকারিক তেজস মারিস্বামীকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়, "আজ নলবাড়ি রিজার্ভ ফরেস্টে উচ্ছেদ অভিযান শেষ হবে...রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুসারে, আমরা দখলমুক্ত করেছি এবং জঙ্গল পুনরুদ্ধার করেছি।"
এই পদক্ষেপটি অসম সরকারের বন সংরক্ষণ আইন প্রয়োগ এবং এর প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য একটি বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ বলেও উল্লেখ করা হয় এই প্রতিবেদনে। মসজিদ ভাঙার সময় স্থানীয়দের পক্ষ থেকে একাধিকবার আবেদন জানানো হলেও তাতে কর্ণপাত করেই কাঠামোটি ভেঙে ফেলা হয়। ২০২১ সাল থেকেই অসমের সরকার এমন কিছু বেআইনি নির্মাণ ও এলাকা চিহ্নিত করে তা উচ্ছেদে জোর দিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর একটি খবরে আরও প্রকাশ পায় যে ওই মসজিদটির পাশাপাশি বেআইনিভাবে তৈরি বেশ কিছু বাড়ি-ঘরও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এখানে তেজস মারিস্বামীকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়, এই বনাঞ্চলের পর আশেপাশের বনাঞ্চলও উদ্ধার হবে যার ফরে হাতির বারবার লোকালয়ে চলে আসার প্রবণতা কমানো যাবে।
ইটিভি ভারত অসমীয়ার একটি রিপোর্টে এই তথ্যগুলির পাশাপাশি স্থানীয় এক ব্যক্তির বক্তব্যও তুলে ধরা হয়। এখানে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায় যে তিনি একদা ওই এলাকার খাজনাও দিয়েছেন। কিন্তু নতুন সরকার আসার পর থেকে খাজনা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি সংখ্যালঘু বলেই তাঁর উপর এই আচরণ করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
সবমিলিয়ে এটা পরিষ্কার যে উক্ত ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চলে থাকা ওই মসজিদ বেআইনি নির্মাণ দাবি করে প্রশাসন তা ভেঙে দিয়েছিল।
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বরের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ভারতে এই দিন আরেকটি মসজিদ ভাঙা হচ্ছে।
এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয় বরং ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বরের। প্রশাসনের তরফে জানানো হয় যে সংরক্ষিত বনাঞ্চল উদ্ধারের জন্য এই মসজিদের পাশাপাশি কিছু বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হয়।