গত ২৬ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে প্যারিস অলিম্পিক্স ২০২৪। চলবে আগামী ১১ আগস্ট পর্যন্ত। এবারের অলিম্পিক্সে বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশ থেকে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেছেন। আর এবারে আয়োজিত ৩২৯টি ইভেন্ট সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার একাধিক চ্যানেলে।
তবে এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে অলিম্পিক্স ইভেন্ট সম্প্রচার সংক্রান্ত একটি ভিডিয়ো। তাতে কিছু মহিলা ক্রীড়াবিদদের খেলায় অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু টিভিতে সম্প্রচারের সময় তাঁদের শরীর কালো রঙে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ভিডিয়োটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ইরান তাদের দেশের টিভি চ্যানেলে মহিলা ক্রীড়াবিদদের শরীর কালো রঙে ঢেকে দিয়ে অলিম্পিক্সের সম্প্রচার করছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ভাইরাল ভিডিয়োটি শেয়ার করে লিখেছেন, “অলিম্পিকে মহিলা খেলোয়াড়দের এভাবেই সম্প্রচার করছে ইরান।” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিয়োটি ইরানের টিভি চ্যানেলে অলিম্পিক্সের সম্প্রচারের নয়। বরং সেটি ২০১৩ সালে ভয়েস অব আমেরিকার ফার্সি চ্যানেল ‘OnTenTv’ তরফে ইরান সরকারকে কটাক্ষ করে তৈরি করা একটি ব্যাঙ্গাত্মক ভিডিয়ো।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল ভিডিয়োর সত্যতা জানতে আমরা সেটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ। তখন আমরা ২০১৩ সালের ১২ জুলাই ভয়েস অব আমেরিকার ফার্সি চ্যানেল ‘OnTenTv’র ইউটিউব চ্যানেলে এই ভিডিয়োর সব থেকে পুরনো সংস্করণ খুঁজে পাই। ৩০:৫৬ মিনিটের সেই ভিডিয়োর ১২:০৯ মিনটে আমরা ভাইরাল ভিডিয়োটি খুঁজে পাই।
এরপর ওই একই চ্যানেলে ২০১৩ সালের ২৩ আগস্ট আমরা এই সংক্রান্ত আরও একটি ভিডিয়ো দেখতে পাই। ৩০:০০ মিনিটের সেই ভিডিয়োর ১০:১৯ মিনটে আমরা দেখি ভাইরাল ভিডিয়োর ন্যায় সেখানেও মহিলা ক্রীড়াবিদদের শরীর কালো রঙে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যা থেকে এটি নিশ্চিত হয় যে ভাইরাল ভিডিয়োটি সাম্প্রতিক সময়ের অর্থাৎ ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক্সের সম্প্রচারের নয়।
তবে এবিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে এরপর আমরা এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর সংবাদ সংস্থা AFP-র একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ইরান সরকারকে কটাক্ষ করার উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালের ১২ জুলাই নিউইয়র্কে নির্মিত ভয়েস অব আমেরিকার ফার্সি চ্যানেল ‘OnTenTv’তে একটি ব্যাঙ্গাত্মক শোয়ের আয়োজন করা হয়। ভাইরাল ভিডিয়োটি সেই শো থেকেই নেওয়া হয়েছে। মূলত ইরানে মহিলাদের কীভাবে উপস্থাপন করা হয় সেটি দেখাতেই ভিডিয়োটি ‘OnTenTv’র তরফে বানানো হয়েছিল।
‘OnTenTv’তে সম্প্রচারিত সেই শোয়ের প্রযোজক সামান আরবাবি এএফপিকে জানান, “আমার অনুষ্ঠানটি ছিল একটি ‘কমেডি শো’। মূলত ইরান সরকারের তরফে মহিলাদের কোনও খেলা সম্প্রচার না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আমি এই ব্যাঙ্গাত্মক শোটি করেছিলাম। এটা মজা ছাড়া কিছুই না। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার সেই শোয়ের ভিডিয়ো অনকেই পুনরায় শেয়ার করেছেন।”
এরপর আমরা ভাইরাল ভিডিয়োটির আসল উৎস খোঁজার চেষ্টা করি। অর্থাৎ সেটি কোনও স্পোর্টস ইভেন্ট বা খেলার আসর থেকে নিয়ে ‘OnTenTv’ নিজেদের শোটি বানিয়েছিল তা দেখার চেষ্টা করি। তখন আমরা ২০১৩ সালের ৭ জুলাই একটি ইউটিউব চ্যানেলে এই ভাইরাল ভিডিয়োটির সেন্সর ছাড়া একটি সংস্করণ দেখতে পাই এবং সেখানে সেটিকে ২০১৩ সালের ডায়মন্ড লিগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এরপর আমরা ইরান তাদের দেশে কীভাবে অলিম্পিক্স গেমস সম্প্রচার করে সেই সংক্রান্ত তথ্য পেতে পুনরায় কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা ২০০৮ সালের ২০ আগাস্ট এই সংক্রান্ত ‘Slate’-এর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “ইরানের সরকারী-মালিকানাধীন টিভি চ্যানেলগুলিতে হিজাব ছাড়াও মহিলাদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সম্প্রচার করা হয়। এমনকি হাফ প্যান্টও ঠিকাছে। কিন্তু সাঁতার বা জিমন্যাস্টিকস প্রতিযোগিতায় যে ধরণের পোশাক পরা হয় তা ইরানে গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে এই ধরণের খেলাগুলি সেদেশের টেলিভিশনে কোনভাবেই সম্প্রচার করা হয় না।”
এর থেকে প্রমাণ হয় যে নিউইয়র্ক ভিত্তিক ‘OnTenTv’র তরফে বানানো ব্যাঙ্গাত্মক একটি ভিডিয়ো ইরানের টিভি চ্যানেলে অলিম্পিক্সের সম্প্রচার দাবিতে ভাইরাল করা হয়েছে।
ইরানের টিভি চ্যানেলে মহিলা ক্রীড়াবিদদের শরীর কালো রঙে ঢেকে অলিম্পিক্সের সম্প্রচার করা হচ্ছে।
ভাইরাল ভিডিয়োটি ইরানের টিভি চ্যানেলে অলিম্পিক্সের সম্প্রচারের নয়। বরং সেটি ২০১৩ সালে নিউইয়র্ক ভিত্তিক ‘OnTenTv’র তরফে ইরান সরকারকে কটাক্ষ করে তৈরি করা একটি ব্যাঙ্গাত্মক ভিডিয়ো।