
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে কয়েকজন মহিলাকে প্রকাশ্য রাস্তার উপরে প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় মারধর করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, উচ্চবর্ণের ব্যক্তিদের তরফে দলিত মহিলাদের নির্মমভাবে মারধর করা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “কেমন করে দলিতদের উপর অত্যাচার করছে দেখুন।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি জাতিগত বৈষম্য সংক্রান্ত কোনও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বরং সেটি উত্তর প্রদেশের বারাণসী জেলার লালপুর-পাণ্ডেপুর থানার পাহাড়িয়া এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের দুই গোষ্ঠীর বিবাদের দৃশ্য।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ১৩ মে একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে কোনও কিছু উল্লেখ না থাকলেও সেটির ফ্রেমের উপরে আমরা ‘পাণ্ডেপুর, বারাণসী’ লেখা দেখতে পাই।
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে চলতি বছরের ১১ মে দৈনিক ভাস্করে ভাইরাল ভিডিওর একাধিক স্ক্রিনশট-সহ এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভাইরাল ভিডিওটি ২০২৫ সালের ১০ মে উত্তর প্রদেশের বারাণসী জেলার লালপুর-পাণ্ডেপুর থানার পাহাড়িয়া এলাকায় তোলা হয়েছিল। ওই দিন টাকা এবং এলাকার দখল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মারধরে জড়িয়ে পড়ে তৃতীয় লিঙ্গের দুই গোষ্ঠীর সদস্যরা। বিবাদের এক পর্যায়ে তারা একে অপরের পোশাকও ছিঁড়ে ফেলে।
অমর উজালার একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এর আগে ৯ মে মনীশ ওরফে বাহুবলী-সহ তৃতীয় লিঙ্গের এক গোষ্ঠীর প্রায় ১০ জন সদস্য সঞ্জনা কিন্নর নামক অন্য গোষ্ঠীর এক সদস্যের বাড়িতে গিয়ে তাকে এবং তার শিষ্যদের প্রথমে মারধর করে। এবং পরবর্তীতে তার সোনার আংটি লুঠ করে নিয়ে আসে। এরপর ১০ মনীশের দলের সদস্যরা অটোতে করে যাচ্ছিলেন তখন সঞ্জনা কিন্নর ও তার দলের সদস্যরা পাহাড়িয়া এলাকায় তাদের অটো আটকে মারধর করে। পুলিশ এই ঘটনায় মোট ২০ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের এবং দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।
এরপর বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আমরা লালপুর-পাণ্ডেপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তথা এসএইচও রাজীব কুমার সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে জাতিগত বৈষম্য তথা উচ্চবর্ণের ব্যক্তিদের তরফে দলিত মহিলাদের মারধর করার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এলাকার দখল কোন গোষ্ঠীর হাতে থাকবে এবং টাকার ভাগ সংক্রান্ত বিবাদের জেরে গত ১০ মে পাহাড়িয়া এলাকায় মারধরে জড়িয়ে পড়ে তৃতীয় লিঙ্গের দুই গোষ্ঠীর সদস্যরা। এই ঘটনায় পুলিশ ২০ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের এবং দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।”
এর থেকে প্রমাণ হয় যে বারাণসীতে তৃতীয় লিঙ্গের দুই গোষ্ঠীর বিবাদের ভিডিও মিথ্যে জাতিগত বৈষম্যের রং দিয়ে ছড়ানো হচ্ছে।
ভিডিওতে উচ্চবর্ণের ব্যক্তিদের তরফে দলিত মহিলাদের নির্মমভাবে মারধর করা হচ্ছে।
ভাইরাল ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে জাতিগত বৈষম্যের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং সেটি উত্তর প্রদেশের বারাণসী জেলার লালপুর-পাণ্ডেপুর থানার পাহাড়িয়া এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের দুই গোষ্ঠীর বিবাদের দৃশ্য।