
সম্প্রতি এক ব্যক্তির একটি বেধড়ক মারধর করার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে থাকা নিগৃহীতা মেয়েটিকে একজন হিন্দু বলে দাবি করা হয়েছে যে নাকি মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে চেয়েছিল, এবং সেই কারণেই তাকে এমনভাবে মারধর করে মেরে ফেলা হয়েছে। (সতর্কীকরণ: ভিডিও-র দৃশ্য বিচলিত করতে পারে।)
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "একটা মেয়ে হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করার কারণে মেয়েটিকে মেরেফেলা হয়েছে.! একটা মানুষ যত অপরাধ করুক না কেনো..! এই ভাবে মেরেফেলা টা কখনো বিচার হতে পারে না এই দেশে কি বিচার নেই ...??? আর যেই বিড়িও করছেন সেও তো একটু বাচ্চা মেয়েটির পাশে গিয়ে দাড়াতে পারতো..!" (ক্যাপশনের সকল বানান অপরিবর্তিত)
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি সর্বৈব মিথ্যে। এই ঘটনাটি প্রায় ৬ বছর পুরনো এবং অসম রাজ্যের। পারিবারিক ঝামেলার কারণে মেয়েটির বাবাই তাকে মারধর করছিল।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তা গুগল লেন্সের মাধ্যমে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ওই একই দৃশ্যের স্ক্রিনশট ইটিভি ভারতের একটি খবরে দেখা যায়। এই খবরটি প্রকাশ হয়েছিল ২০১৯ সালের ২ অগস্ট, অর্থাৎ প্রায় ৬ বছর আগে।
সেই খবর অনুযায়ী, অসমের নওগাঁ জেলায় এক বাবা তাঁর ১৫ বছরের মেয়েকে নিষ্ঠুরভাবে মারধর করেন। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় যে ওই বাবা নিজের মেয়েকে পতিতাবৃত্তির দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবেশী এক মহিলা ওই ব্যক্তিকে পেটাতে যান এবং স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এই বিষয়ে বিশদে জানতে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে এরপর ২০১৯ সালের ৩ অগস্ট প্রকাশিত নর্থইস্ট নাও-এর একটি খবর পাওয়া যায়। সেই খবরে লেখা হয়, ওই ব্যক্তিকে জামালউদ্দিন হিসেবে পুলিশ চিহ্নিত করেছে যিনি নওগাঁ জেলায় সামাগুড়ি থানার অন্তর্গত মোয়ামারি গ্রামের বাসিন্দা। এই ঘটনার বিষয়ে জানাজানি হওয়ার পর পুলিশ জামালউদ্দিনকে গ্রেফতার করে। এর থেকে পরিষ্কার হয় যে নির্যাতিতা নিজে মুসলিম সম্প্রদায়ের ছিলেন।
নির্যাতিতা মেয়েটিকে হাসপাতালে চিকিৎসার পর বাড়ি নিয়ে আসা হয় এবং তিনি সাংবাদিকদের জানান যে পতিতাবৃত্তির জন্য রাজি না হওয়ার কারণে বাবা তাকে মারধর করেছে। পুলিশ জানায় যে ধৃত জামালউদ্দিন পেশায় একজন হকার এবং পতিতাবৃত্তিরর এই চক্রের সঙ্গে সে নিজে যুক্ত ছিল।
তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পারে যে এই জামালউদ্দিন আগে থেকেই দাগী আসামী এবং এর আগে তিনটি বিয়ে করে নিজের স্ত্রী'দেরও পতিতাবৃত্তি করাতে চেয়েছিল। যে কারণে তারা বিবাহ বিচ্ছেদ করে। তবে জামালউদ্দিন এই কাজে তার মা রাজিয়া খাতুনে সমর্থন পেয়েছিল। নির্যাতিতা মেয়েটির বয়ানের ভিত্তিতে পুলিশ রাজিয়াকেও গ্রেফতার করে।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে ২০১৯ সালের পৃথক একটি ঘটনার ভিডিওকে কীভাবে মিথ্যে দাবিতে পরিবেশন করা হচ্ছে।
হিন্দু থেকে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করার কারণে মেয়েটিকে মেরে ফেলা হয়েছে।
এই ঘটনাটি অসমের নওগাঁ জেলার এবং ২০১৯ সালের। জামালউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি নিজের মেয়েকে পতিতাবৃত্তির কাজে জোরপূর্বক যোগ দেওয়াতে চেয়ে মারধর করছিল। মেয়েটি মারা যায়নি।