scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: এই বৃদ্ধ কি ২৪ বছর ধরে জেলবন্দি সুদানের প্রাক্তন মন্ত্রী? জানুন ভাইরাল ভিডিয়োর সত্যতা

ভিডিয়োর শুরুতেই একটি আলো-আঁধারি এলাকায় বালির উপর ওই বৃদ্ধকে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। অগ্রদূত নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিয়োটি শেয়ার করে লেখা হয়েছে, সুদানের সাবেক মন্ত্রী।

Advertisement
এই বৃদ্ধই কি ২৪ বছর ধরে জেলবন্দি সুদানের প্রাক্তন মন্ত্রী? এই বৃদ্ধই কি ২৪ বছর ধরে জেলবন্দি সুদানের প্রাক্তন মন্ত্রী?

নেট মাধ্যমে খুব ভাইরাল একটি ভিডিয়ো। যেখানে শীর্ণকায় এক বৃদ্ধের ছবি দেখিয়ে তাঁকে সুদানের প্রাক্তন মন্ত্রী বলে দাবি করা হয়েছে। ভিডিয়োর শুরুতেই একটি আলো-আঁধারি এলাকায় বালির উপর ওই বৃদ্ধকে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। অগ্রদূত নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিয়োটি শেয়ার করে লেখা হয়েছে, সুদানের সাবেক মন্ত্রী।

সেই সঙ্গে ভিডিয়োটিতে লেখা হয়েছে, "২৪ বছর ধরে মাটির নীচে কারাগারে বন্দি সুদানের সাবেক মন্ত্রী।" সেই ভিডিয়োতে উপস্থাপক ওই বৃদ্ধকে সুদানের "সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী" কর্নেল ইব্রাহিম শামসাদিন বলে উল্লেখ করছেন। পাশাপাশি বলা হচ্ছে, স্বৈরাচারি শাসনের প্রতিবাদ করায়, ২৪ বছর আগে নাকি তাঁকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। এবং সাম্প্রতিক সময়ে নাকি তাঁকে সুদানের মাটির নীচে একটি গোপন কারাগারে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।

ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে, অপুষ্টিতে ভোগা এক বৃদ্ধ খালি গায়ে বালির উপর কখনও শুয়ে, কখনও বা বসে রয়েছেন। অসহায় দৃষ্টিতে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকার কিছু ছবিও সেখানে রয়েছে। সুদানের একটি গুহায় এই মন্ত্রীকে আটকে রাখার দাবি করা হয়েছে ওই ভিডিয়োতে।

ভিডিয়োটির ১০ সেকেন্ডের মাথায় সেনার পোশাকে থাকা এক ব্যক্তির ছবি দেখিয়ে তাঁকে সুদানের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কর্নেল ইব্রাহিম শামসাদিন বলে দাবি করা হয়েছে। ভিডিয়োর দাবি অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালে তাঁকে জেলে পাঠানো হয়, এবং ২০০৮ সালে ঘোষণা করা হয় যে তিনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন।

এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত ভিডিয়োটি ৪ কোটির বেশি মানুষ দেখে ফেলেছেন। শেয়ারের সংখ্যা ৩০ হাজারের কাছাকাছি।

Advertisement

শুধু তাই নয়, ২০১৯ সাল থেকেই বেশ কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী এই বৃদ্ধের ছবি শেয়ার করে তাঁকে সুদানের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেই দাবি করেছে।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল হওয়া বৃদ্ধের ছবিটি সুদানের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলে দাবি করা হয়েছে, তিনি আসলে কেনিয়ার এক ব্যক্তি। অন্যদিকে, সেনার পোশাকে যাঁর ছবি দেখানো হয়েছে, তিনিও ইব্রাহিম শামসাদিনও নন।

কীভাবে জানা গেল সত্যি?

উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, জীর্ণকায় ওই বৃদ্ধের ছবিগুলির অস্তিত্ব ২০১৯ সালের আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়নি। অর্থাৎ, ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, অন্তত চার বছর আগেকার।

ছবিগুলির উৎস সন্ধানে আমরা ভাইরাল ছবিগুলিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন ওই একই ছবিগুলি আমরা দেখতে পাই রনক্লিফ অডিট নামে বিবিসি সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিনিধির টুইটে। এই ছবিগুলি তিনি পোস্ট করেন ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ। সঙ্গে   #KenyaDrought হ্যাশট্যাগ তিনি লেখেন। অর্থাৎ কেনিয়ার খরা।

টুইটে সুদান সম্পর্কিত কোনও তথ্য, বা সুদানের প্রাক্তন মন্ত্রী নিয়ে কোনও বক্তব্য তুলে ধরা হয়নি। যা থেকে কার্যত প্রমাণ হয়ে যায় যে ছবিগুলির সঙ্গে সুদানের প্রাক্তন মন্ত্রীর কোনও সংযোগ নেই।

২০১৯ সালে কেনিয়ায় কোনও খরা এসেছিল কিনা তা জানতে আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন ওই বছর এপ্রিল মাসে প্রকাশিত রয়টার্সের একটি রিপোর্ট আমরা দেখতে পাই। সেই রিপোর্টে বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি বক্তব্য তুলে ধরা হয়। কেনিয়ায় হওয়া ওই বছরের খরাকে বিশ্ব ব্যাঙ্ক দেশটির আর্থিক অগ্রগতির বিরুদ্ধে হওয়া অন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যা থেকেও এটাও প্রমাণ হয় যে ওই বছর কেনিয়ায় সত্যিই খরা এসেছিল।

এ বার প্রশ্ন হচ্ছে, সেনার পোশাকে যেই ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে তিনিই কি সুদানের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কর্নেল ইব্রাহিম শামসাদিন?

না, সেনার পোশাকে থাকা ওই ব্যক্তিও সুদানের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কর্নেল ইব্রাহিম শামসাদিন নন। ছবিটিকে রিভার্স সার্চ করে ওই একই ব্যক্তির প্রেস কনফারেন্সের বেশ কিছু ছবি আমরা সংবাদ মাধ্যম এএফপি-র ওয়েবসাইটে খুঁজে পাই। সেখানে লেখা হয়, এই ব্যক্তি হলেন সুদানের লেফট্যনান্ট জেনারেল ওমর জাইন আল-আবদিন। ছবিগুলি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সুদানে সেনা অভ্যুত্থানের সময় তোলা। অর্থাৎ, যে ব্যক্তিকে ইব্রাহিম শামসাদিন বলে দাবি করা হচ্ছে, তিনি আসলে অন্য এক ব্যক্তি।  

কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আমরা একটি প্রতিবেদনও খুঁজে পাই। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই প্রতিবেদনটি ২০০১ সালের ৪ এপ্রিল প্রকাশ পেয়েছিল যেখানে কর্নেল ইব্রাহিম শামসাদিনের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা লেখা হয়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ভিডিয়োতে যেভাবে দাবি করা হয়েছে যে ২০০৮ সালে তাঁকে সুদান সরকারিভাবে মৃত ঘোষণা করে, সেই দাবিটিও ভুয়ো।

তবে এই প্রথমবার নয়, ২০১৯ সালে এই একই দাবি করে বহু পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তখন আফ্রিকার ফ্যাক্ট চেক সংস্থা পেসা চেক, আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যম এএফপি, এবং ফ্রান্স ২৪ এই দাবিটিকে ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

সুতরাং ভাইরাল ভিডিয়োর দাবিতে যে কোনও সত্যতা নেই, তা এই প্রতিবেদন থেকেই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে।

 

 

ফ্যাক্ট চেক

facebook page

দাবি

ছবিতে যে বৃদ্ধকে দেখা যাচ্ছে তিনি সুদানের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কর্নেল ইব্রাহিম শামসাদিন, যাঁকে বিগত ২৪ বছর ধরে মাটির নীচে জেলবন্দি করে রাখা হয়েছে।

ফলাফল

ভাইরাল ভিডিয়োতে থাকা ব্যক্তির ছবিটি কেনিয়ার। ২০১৯ সালের খরার সময় বিবিসি-র এক সাংবাদিক ছবিটি তোলেন। সেনার পোশাকে যাঁকে দেখা যাচ্ছে তিনিও ইব্রাহিম শামসাদিন নন।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
facebook page
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement