ফ্যাক্ট চেক: নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে 'গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার রিপোর্ট ২০২৫'-এ চতুর্থ স্থানে এসেছে ভারত?

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি অর্ধসত্য। ভারত ২০০৬ সাল থেকেই গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার রিপোর্টের তালিকায় শক্তিমত্তার নিরিখে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এটি নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নয় বরং মনমোহন সিংহের শাসনকালে হয়েছিল।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে 'গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার রিপোর্ট ২০২৫'-এ চতুর্থ স্থানে এসেছে ভারত?

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হওয়া অপারেশন সিঁদুর ও তার পরবর্তী সংঘাতের সৌজন্যে ভারতের অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্য়বস্থার ঝলক দেখেছে দেশবাসী। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হচ্ছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বেই বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী সেনাশক্তিতে পরিণত হয়েছে ভারত। 

এই শক্তি বিচারের মানদন্ড হিসাবে 'গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার রিপোর্ট ২০২৫' শীর্ষক একটি রিপোর্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্টের দাবি অনুযায়ী, এই রিপোর্টেই নাকি চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে ভারত। 

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "চতুর্থ স্থানে উঠে এলো ভারতের সেনা মোদীজির নেতৃত্বে অদম্য ভারতের সেনাশক্তি (গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার রিপোর্ট ২০২৫)।"

পোস্টের সঙ্গে থাকা ইনফোগ্রাফিক্সেও শক্তিসূচকস্থানের নিরিখে আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের পর ভারতের স্থান দেখানো হয়েছে। ভারতের পরে এই তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। 

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি অর্ধসত্য। ভারত ২০০৬ সাল থেকেই গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার রিপোর্টের তালিকায় শক্তিমত্তার নিরিখে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এটি নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নয় বরং মনমোহন সিংহের শাসনকালে হয়েছিল।

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে  

ভাইরাল দাবির সত্যতা যাচাই করতে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে সবার প্রথম একাধিক নিউজ রিপোর্ট পাওয়া যায়। যেমন চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চলতি মে মাসেও ইকনমিক টাইমস্, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এবং ইন্ডিয়া টুডের মতো একাধিক সংবাদ মাধ্যম খবর প্রকাশ করেছিল। যেখানে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে লেখা হয় যে ভারত সেনা শক্তিমত্তার ভিত্তিতে চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে। 

তবে কিওয়ার্ড সার্চের সময় ২০১৯ সালেরও একটি রিপোর্ট পাওয়া যায়, যেখানে একই ভাবে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার রিপোর্টকে উল্লেখ করে লেখা হয়েছিল যে ভারত মিলিটারি শক্তিমত্তার দিক চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এর থেকে আন্দাজ করা যায় যে এই স্থানে ভারত খুব সাম্প্রতিক সময়ে আসেনি। 

Advertisement

এরপর গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ওয়েবসাইটে আসল তালিকাটি খোঁজা হয়। ২০২৫ সালের সূচিতে দেখা যায়, ভারত এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে। একই তালিকায় পাকিস্তান ছিল ১২ নম্বরে। 

কবে এই স্থান অধিকারী করেছে ভারত?

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ওয়েবসাইটে বছরভিত্তিক তালিকা অনুসন্ধান করে দেখা যায়, সবার প্রথম ২০০৬ সালের সূচিতে ৫ থেকে ৪ নম্বরে উঠে এসেছিল ভারত। পাকিস্তানকে সরিয়ে এই জায়গা নিয়েছিল ভারত। তারপর থেকে লাগাতার প্রত্যেক বছর ভারত ৪ নম্বরেই রয়েছে। 

৫ নম্বর জায়গাটা অবশ্য একাধিকবার বদলেছে। তবে এক থেকে চার নম্বরে আমেরিকা, রাশিয়া, চিন ও ভারতের জায়গা মোটামুটি স্থির রয়েছে। ২০০৬ সালের পর থেকে এই প্রথম চার স্থানে কোনও অদল-বদল হয়নি। প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল ইউপিএ সরকার। যার অর্থ দাঁড়ায়, এই তালিকায় ভারত চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের জমানায়। 

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন? 

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমরা কথা বলেছিলাম অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আরকে শ্রীবাস্তবের সঙ্গে। তিনি আমাদের বলেন, "কোন দেশের সেনা কতটা শক্তিশালী, সেই বিষয়টি কোনও একটা মানদন্ডের উপর নির্ভর করে না। স্থলসেনা, বায়ুসেনা, নৌসেনা তো আছেই। আবার তিন সেনার অন্তর্গত নানা সরঞ্জাম কতটা আধুনিক, যুদ্ধ ময়দানে ব্যবহারে কতটা কার্যকর, সেসব জিনিসও রয়েছে। ফলে কোনও দেশের সেনাবাহিনীর শক্তিমত্তাকেই এভাবে ক্রমবর্ধমান তালিকায় সাজানো কঠিন।"

একই বিষয়ে জানতে কর্নেল দীপ্তাংশু চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "বিগত কয়েক বছর ধরেই নানা ভাবে সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের ফলে বর্তমানে যে বিশ্বের সেরা পাঁচ বাহিনীর মধ্যে আমরা অন্যতম এ কথা বলাই যায়। কিন্তু সার্বিক ক্ষমতার ভিত্তিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সাজানো এক কথায় কঠিন। প্রত্যেক বাহিনীর প্রতিরক্ষা সরঞ্জামে একাধিক অস্ত্র থাকে। যেখান থেকে একটি গুলি বা মিসাইল বেরিয়ে গেলেও অনেক সময় সার্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যে তারতম্য হয়।" 

সবমিলিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় যে 'গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার রিপোর্ট'-এ ২০০৬ সাল থেকেই চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারতের অবস্থান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনামলে সেটা হয়নি। 

 

ফ্যাক্ট চেক

facebook users

দাবি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী "গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার রিপোর্ট ২০২৫"-এ চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে।

ফলাফল

এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে ভারত ২০০৬ সালেই উঠে এসেছিল এবং তারপর থেকেই চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তারপর থেকে প্রথম চারের স্থান পরিবর্তন হয়নি।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
facebook users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement