
বিভিন্ন সময় বাড়তি বিদ্যুতের বিল আসার কারণে অস্বস্তি পড়তে হয় রাজ্যের গ্রাহকদের। সম্প্রতি WBSEDCL-এর পুরনো ও নতুন ট্যারিফের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়। পরে অবশ্য পুরনো ও নতুন ট্যারিফের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এমনকি স্ল্যাবে কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছিল WBSEDCL কর্তৃপক্ষ।
তবে এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্যুতের বিল সংক্রান্ত একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে মন্দির, স্কুল-কলেজ এমনকি সাধারণ মানুষের জন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য নেওয়া হয় ৮ টাকা ৮৫ পয়সা। কিন্তু মসজিদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য নেওয়া হয় ১ টাকা ৮৫ পয়সা।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি ফটোকার্ড পোস্ট করেছেন। যাতে লেখা আছে, “পশ্চিমবঙ্গে মসজিদ এর ইলেকট্রিক বিল ইউনিট প্রতি ১টাকা ৮৫পয়সা। কিন্তু মন্দির, স্কুল-কলেজ ও সাধারণ মানুষের জন্যে ৮টাকা ৮৫পয়সা কেনো?” ফটোকার্ডটি পোস্ট করে তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন, “এইগুলো নিয়ে কোনো প্রতিবাদ নেই।” (ফটোকার্ড ও ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, পশ্চিমবঙ্গে মসজিদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ১ টাকা ৮৫ পয়সা নয়। বরং মসজিদ-সহ বিভিন্ন পাব্লিক সংস্থার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য সমান।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত পশ্চিমবঙ্গে মসজিদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ১ টাকা ৮৫ পয়সা কিনা সেই সংক্রান্ত ভাইরাল পোস্টের সত্যতা জানতে আমরা একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা জানতে পারি পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎ বণ্টনের জন্য মূলত দুটি সংস্থা দায়িত্বে আছে। একটি হল CESC, যেটি কেবলমাত্র কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। অপরটি হল WBSEDCL, যেটি কলকাতা বাদে বাকি রাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে।
উপরে প্রাপ্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে এরপর আমরা জানার চেষ্টা করি CESC এবং WBSEDCL এই দুই সংস্থায় মসজিদ ও মন্দিরের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য কত করে নেওয়া হয়। পাশাপাশি এটিও দেখার চেষ্টা করি উভয় সংস্থায় মসজিদ ও মন্দিরের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য সমান না আলাদা।
সেই উদ্দেশ্যে আমরা পুনরায় একাধিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রকাশিত CESC-র বিদ্যুতের ট্যারিফ খুঁজে বার করি। কিন্তু CESC-র সেই ট্যারিফে মন্দির বা মসজিদের জন্য কোনও আলাদা মূল্য তালিকা আমরা দেখতে পাইনি। বরং আমরা বিদ্যুৎ দপ্তরের তরফে জানতে পারি মন্দির ও মসজিদকে বিদ্যুৎ দপ্তর পাব্লিক সংস্থা হিসাবে গণ্য করে। এরপর আমরা CESC-র ট্যারিফকে পাব্লিক সংস্থার ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য খুঁজে বার করি। সেখানে আমরা দেখতে পাই পাব্লিক সংস্থার ক্ষেত্রে ১০০ ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ধার্য্য করা হয়েছে ৭২২ টাকা। অর্থাৎ সেই হিসাবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য হয় ৭ টাকা ২২ পয়সা। পাশাপাশি তার সঙ্গে আলাদা ৪২ টাকা ফিক্সড বা ডিমান্ড চার্জ যুক্ত করা হয়। অন্যদিকে সরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য রাখা হয়েছে ৫ টাকা ২৪ পয়সা। তবে স্কুলের ক্ষেত্রে ডিমান্ড চার্জ রাখা হয়েছে ১২ টাকা।
এরপর আমরা ২০২৪ সালের ৬ মার্চ প্রকাশিত WBSEDCL-র বিদ্যুতের ট্যারিফ খুঁজে বার করি। সেখানে আমরা দেখি পাব্লিক সংস্থার ক্ষেত্রে WBSEDCL-র তরফে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য রাখা হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা। তবে এক্ষেত্রেও ফিক্সড বা ডিমান্ড চার্জ রাখা হয়েছে ৩৪ টাকা। অন্যদিকে সরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ধরা হয়েছে ৩ টাকা ৪১ পয়সা এবং ফিক্সড বা ডিমান্ড চার্জ রাখা হয়েছে ২০ টাকা।
এরপর আমরা এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে WBSEDCL-র অন্তর্গত একটি মসজিদের বিদ্যুতের বিল জোগাড় করি। ২০২৪ সালের জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ওই মসজিদের তরফে মোট ১৭০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করা হয়েছে। আর তার জন্য বিল এসেছে ৮১১ টাকা। যদিও এই পুরো বিল একেবারে অনলাইনে পেমেন্ট করলে তবেই ৮১১ টাকা নেওয়া হবে। প্রতি ইউনিটের হিসাবে যেটি দাঁড়ায় ৪ টাকা ৭৭ পয়সা। তবে এই ৮১১ টাকা থেকে ৩৪ টাকা ফিক্সড বা ডিমান্ড চার্জ বাদ দিলে ১৭০ ইউনিট বিদ্যুতের জন্য বিল হয় ৭৭৭ টাকা। অন্যদিকে ৪ টাকা ৬০ পয়সা হিসাবে ১৭০ ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য হয় ৭৮২ টাকা। অর্থাৎ একেবারে অনলাইনে পেমেন্ট করলে গ্রাহকরা ৫ টাকা ছাড় হিসাবে পাচ্ছেন।
এর থেকে স্পষ্ট হয় যে, পশ্চিমবঙ্গে মসজিদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ১ টাকা ৮৫ পয়সা নেওয়া হয় বলে যে দাবি করা হচ্ছে সেটি মিথ্যে ও বিভ্রান্তিকর। বরং মসজিদ ও মন্দিরের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য একই।
পশ্চিমবঙ্গে মন্দিরের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ৮ টাকা ৮৫ পয়সা। কিন্তু মসজিদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য নেওয়া হয় ১ টাকা ৮৫ পয়সা।
পশ্চিমবঙ্গে মসজিদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ১ টাকা ৮৫ পয়সা নয়। বরং মসজিদ-সহ সব পাব্লিক সংস্থার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য সমান।