
শুধু ভারত বলে নয়, গোটা বিশ্বেই ক্রমশ আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ। সেই সঙ্গে বাড়ছে অবসাদ। যা অনেক সময়ই আত্মহননের মতো মারাত্মক পরিণতি ঘটায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই আত্মহত্যা নিয়েই একটি পরিসংখ্যান ইদানীং খুব শেয়ার করা হচ্ছে।
নেটিজেনদের একাংশ একটি পোস্টের মাধ্যমে দাবি করছেন, ন্যাশনাল ক্রাইম রিপোর্টস ব্যুরো (এনসিআরবি)-র তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে নাকি সাংসারিক ঝামেলা ও স্ত্রী দ্বারা প্রতারিত হওয়ার কারণে ভারতে ৮০ হাজারের বেশি পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন!
হিন্দিতে যে পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে বাংলায় তার তর্জমা করলে দাঁড়ায়, "জানেন কি, ২০২১ সালে, ৮১ হাজার ৬৩ জন স্বামী তাদের স্ত্রী দ্বারা পারিবারিক ঝামেলা এবং প্রতারণার শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে। তথ্যসূত্র: এনসিআরবি।"
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক দল (আরএসএস)-এর ভ্যারিফায়েড টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও একই দাবি করা হয়েছে। এই টুইটের আর্কাইভ লিঙ্কটি এখানে দেখা যাবে।
क्या आप जानते हैं ?
— Panchjanya (@epanchjanya) March 20, 2023
2021 में घरेलू झगड़ों और पत्नी द्वारा प्रताड़ित किये जाने के कारण 81,063 पतियों ने की आत्महत्या।
डाटा सोर्स : NCRB
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, এই দাবিটি বিভ্রান্তিকর। সর্বশেষ এনসিআরবি রিপোর্টে কোথাও বলা হয়নি যে স্ত্রী দ্বারা পারিবারিক ঝামেলা এবং প্রতারণার কারণে এই সংখ্যক পুরুষ আত্মহত্যা করেছে।
কীভাবে জানা গেল সত্যি?
যদি সত্যিই সাংসারিক ঝামেলা, ও প্রতারণার কারণে ৮০ হাজারের বেশি পুরুষ এক বছরে আত্মহত্যা করে থাকেন, তবে তা নিঃসন্দেহে বিরাট বড় এবং চমকে দেওয়ার মতো একটি খবর। এই নিয়ে আদৌ কোনও সংবাদ মাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে কিনা তা জানতে সবার প্রথম আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করি।
তখন এবিপি নিউজ ও আজতক-এর দুটি নিউজ রিপোর্টে আমরা সেই ৮১ হাজার ৬৩ সংখ্যাটির উল্লেখ পাই। ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ সেই রিপোর্ট দুটি প্রকাশ করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হওয়া একটি মামলা নিয়ে। মামলার দাবি ছিল, নারী-সুরক্ষার জন্য তৈরি মহিলা কমিশনের মতোই পুরুষদের সুরক্ষার স্বার্থে পুরুষ কমিশন গঠন করা। এই দাবির সমর্থনে সাম্প্রতিক এনসিআরবি-র পরিসংখ্যান পেশ করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা ছিল, ২০২১ সালে দেশে মোট ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩৩টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৮১হাজার ৬৩ জন বিবাহিত পুরুষ ও ২৮ হাজার ৬৮০ জন বিবাহিত মহিলা রয়েছেন।
অর্থাৎ, সোশ্যাল মিডিয়ার দাবিটি সত্যি ধরতে হলে, এক বছরে মোট আত্মহত্যার অর্ধেকই নাকি বৈবাহিক কলহ ও প্রতারণার কারণে ঘটেছে।
যদিও এই রিপোর্টে কোথাও এমনটা লেখা হয়নি যে ওই ৮১ হাজারের কিছু বেশি স্বামী নিজেদের স্ত্রী দ্বারা প্রতারিত হয়ে আত্মহত্যা করেন। ফলে এই পরিসংখ্যানের সত্যতা খুঁজে বের করতে আমরা সাম্প্রতিকতম এনসিআরবি রিপোর্ট খোঁজা শুরু করি।
সব ধরনের অপরাধের পরিসংখ্যান সংকলিত ২০২২ সালের এনসিআরবি রিপোর্টে দেখা যায়, ২০২১ সালে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩৩ জন আত্মঘাতীর মধ্যে থেকে সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ৩৩.২ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করেছেন পারিবারিক কারণে।
আত্মহত্যার কারণকে এনসিআরবি যে যে ভাগে ভাগ করেছে, তার মধ্যে স্ত্রী দ্বারা অত্যাচারিত, বা প্রতারিত হওয়ার কোনও বিভাগ নেই। উপরের তালিকায় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, পারিবারিক সমস্যা ব্যতীত যে কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে তাহল- অসুস্থতা (১৮.৬ শতাংশ), মাদকাসক্তি (৬.৪ শতাংশ), বিবাহ-জনিত সমস্যা (৪.৮), প্রণয় ঘটিত ঝামেলা (৪.৬শতাংশ) ইত্যাদি।
ওই রিপোর্টের কিছুটা নীচের দিকেই মোট আত্মঘাতীদের মোট সংখ্যাকে ভাগ করা হয়েছিল তাদের সামাজিক অবস্থানের উপর। মানে এদের মধ্যে কতজন পুরুষ বা মহিলা, কতজন বিবাহিত বা অবিবাহিত। কতজন বিধবা বা বিপত্নীক। কতজনের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়েছিল বা আলাদা থাকতেন ইত্যাদি।
সেই তালিকায় উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের মোট ১ লক্ষ ৬৪ ৩৩টি হাজার আত্মহত্যার মধ্যে ৮১ হাজার ৬৩ জন পুরুষ বিবাহিত ছিলেন ও ২৮ হাজার ৬৮০ জন মহিলা ছিলেন বিবাহিত। এবং আত্মহত্যা কী কী কারণে হয়েছিল, তা উপরেই উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, ২০২১ সালে ৮১ হাজার ৬৩ জন বিবাহিত পুরুষের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে এনসিআরবি তথ্যকে ঢাল করেযেভাবে মহিলাদের নিশানা করা হয়েছে, তা পুরোপুরি ভুল।
এনসিআরবি-র তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে নাকি সাংসারিক ঝুট-ঝামেলা ও স্ত্রী দ্বারা প্রতারিত হওয়ার কারণে ভারতে ৮১ হাজার ৬৩ জন বিবাহিত পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন।
এনসিআরবি-র তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে মোট ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩৩ জন আত্মহত্যা করেছেন। যার মধ্যে ৮১ হাজার ৬৩ জন বিবাহিত পুরুষ। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে এনসিআরবি কোথাও স্ত্রী-দের দায়ী করেনি।