
সাম্প্রতিক সময়ে বহু বাংলাদেশিদের মধ্যে ভারত বিরোধী মনোভাব দেখা দিয়েছে। কিছুদিন আগেই দেশটির কোটা সংস্কার আন্দোলনেও একাধিক ভারত বিদ্বেষী স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সেদেশের অনেক নাগরকি সম্প্রতি হওয়া বন্যার জন্যও ভারতকে দায়ী করেছেন।
আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু বাংলাদেশি উইজারের তরফে একটি পোস্টকার্ড ভাইরাল করা হচ্ছে। কার্ডটিতে একটি ছবি-সহ লেখা হয়ছে, “ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন মণিপুর রাজ্যের দুই বিদ্রোহী নেতা।” পাশাপাশি কার্ডটির উপরে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তারিখ লেখা আছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল পোস্টকার্ডটি শেয়ার করে লিখেছেন, “ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন মণিপুর রাজ্যের দুই বিদ্রোহী নেতা।” (সব বানান অপরিবর্তিত।) সরাসরি উল্লেখ না করলেও কার্ডটির উপরে লেখা ৮ সেপ্টেম্বর তারিখের মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হয়েছে, ওই দুই বিদ্রোহী নেতা গতকাল অর্থাৎ রবিবার মণিপুরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেছেন।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল পোস্টকার্ডের দাবিটি অর্ধসত্য ও বিভ্রান্তিকর। ওই দুই বিচ্ছিন্নবাদী নেতা সম্প্রতি নয়, ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর লন্ডন থেকে মণিপুরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেন।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত, গত বছর থেকে দুই জনগোষ্ঠীর বিবাদের জেরে অশান্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। তাই এই পরিস্থিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর সে রাজ্যের কোনও নেতা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা মণিপুর রাষ্ট্র ঘোষণা করলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হত। কিন্তু আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি যা থেকে প্রমাণ হয় যে সম্প্রতি অর্থাৎ গতকাল মণিপুরের কোনও নেতা এহেন ঘোষণা করেছেন।
এরপর ভাইরাল দাবির সত্যতা জানতে আমরা পোস্টকার্ডটিতে ব্যবহৃত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর সেই একই ছবি-সহ Indiatimes-এ একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “২৯ অক্টোবর লন্ডন থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ভারত থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করল মণিপুরের মহারাজার তরফে এক প্রতিনিধি দল। মহারাজা সানাজাওয়বার পক্ষ থেকে এই ঘোষণা করেছেন রাজ্য পরিষদের মুখ্যমন্ত্রী ইয়ামবেন বিরেন ও রাজ্য পরিষদের বিদেশ ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী নারেংবম সামারজিত। পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতি জোগাড়ে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে আবেদন করেছেন ওই নেতারা।”
এরপর পরবর্তী সার্চে আমরা ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘CHANNEL 24’-এর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে পাই। “ভারত থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা মনিপুরের” শীর্ষক সেই ভিডিও প্রতিবেদনে আমরা ওই দুই বিচ্ছিন্নবাদী নেতাকে সাংবাদিক সম্মেলন করে ভরত থেকে আলাদা করে মণিপুরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করতেও দেখতে পাই।
এরপর আমরা ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর হিন্দুস্তান টাইমসে এই সংক্রান্ত অপর একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেখানে ওই দুই বিচ্ছিন্নবাদী নেতার ভাইরাল ছবি-সহ লেখা হয়েছে, লন্ডন থেকে ভারত বিরোধী কার্যকলাপ ও মণিপুরকে আলাদা রাষ্ট্র ঘোষণা করা অভিযোগে দুই বিচ্ছিন্নবাদী নেতা ইয়ামবেন বিরেন ও নারেংবম সামারজিতের সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিশেষ সচিব (স্বরাষ্ট্র) রঘুমণি সিং এই নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছেন, ওই দুই নেতার অ্যাকাউন্ট জব্দ করা না হলে তারা এর মধ্যমে ভারত বিরোধী কার্যকলাপে অর্থ ব্যবহার করতে পারে।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নয়। বরং ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর লন্ডন থেকে মণিপুরকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন ওই দুই বিচ্ছিন্নবাদী নেতা।
২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মণিপুরকে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেছেন দুই বিচ্ছিন্নবাদী নেতা।
গত ৮ সেপ্টেম্বর নয় বরং ওই দুই বিচ্ছিন্নবাদী নেতা ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর লন্ডন থেকে মণিপুরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেন।