
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন দগ্ধ ব্যক্তির ভিডিও বেশ ভাইরাল হচ্ছে। এই ভিডিওতে আগুনে পুড়ে যাওয়া ওই ব্যক্তি তাঁর যন্ত্রণার কথা বর্ণনা করছেন। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তির নাম অশ্বিনী লোধী এবং তিনি একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরকে ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় তার গায়ে এভাবে আগুন লাগিয়ে ওই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছিল।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "খুবই লজ্জাজনক, ডবল ইঞ্জিন। মিরাটে, অটোরিকশা চালক অশ্বানী_লোধিকে পুলিশ ইন্সপেক্টর জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে। তার একমাত্র দোষ ছিল যে সে পুলিশ ইন্সপেক্টরকে ঘুষ দিতে চায়নি। একবার ভাবুন তো, একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর একজন দরিদ্র ব্যক্তির সাথে এত নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারেন। এই ধরনের পুলিশ ইন্সপেক্টররা এই পদের জন্য উপযুক্ত নন। এটা এতটাই ভাইরাল করো যে পুলিশ অফিসার শাস্তি পায় আর এই ব্যক্তি ন্যায়বিচার পায়।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল দাবিটি বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, ঘটনাটি ২০২০ সালের। দ্বিতীয়ত, ওই ব্যক্তি নিজেই নিজের গায়ে আগুন দিয়েছিলেন। তৃতীয়ত, অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিককে সেই সময়ই বরখাস্ত করা হয়েছিল।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
রিভার্স ইমেজ ও কিওয়ার্ড সার্চের সাহায্যে ওই একই ভিডিও ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারির একটি ফেসবুক পোস্টে পাওয়া যায়। এই পোস্টে ভাইরাল ভিডিওটি ছাড়াও একটি এলাকায় ভিড়ের ছবিও রয়েছে। পোস্টে বলা হয় যে, অটো চালক অশ্বিনী লোধির মৃতদেহ যখন মেরঠে পৌঁছয় তখন তার পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে প্রতিবাদ করেছিলেন। এই পোস্ট থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যা যে এই ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং পুরানো।
এই বিষয়ে আরও সার্চ করা হলে দৈনিক জাগরণের একটি খবর পাওয়া যায় যা ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রকাশ পেয়েছিল। এই খবরের শিরোনামে লেখা হয়, দারোগার চাঁদাবাজির জেরে নাজেহাল হয়ে মেরঠের টেম্পোচালক অশ্বিনী লোধি নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভুক্তভোগী অশ্বিনী লোধি সেই অভিযোগ করেছিলেন যে তিনি যখন মালিয়ানা ব্রিজের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন সাব-ইন্সপেক্টর রাজদেব পুনিয়া তার কাছ থেকে টাকা আদায় করতে আসেন। তিনি সাব-ইন্সপেক্টরের বিরোধিতা করলে অশ্বিনীর বিরুদ্ধে তিনি একটি চালান জারি করেন, যার পরে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। হতাশ হয়ে অশ্বিনী কাছেই থাকা একটি বাইক থেকে পেট্রোল বের করে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
খবর অনুযায়ী, অশ্বিনী টিপি নগর থানা এলাকার চন্দ্রলেখা পার্ক কলোনির বাসিন্দা ছিলেন। মামলার তথ্য পাওয়ার পর রাজদেব পুনিয়াকে বরখাস্ত করা হয়। অশ্বিনীকে প্রথমে কেএমসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, এরপর তাকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারী অশ্বিনী মারা যান।
এই ঘটনার বিষয়ে আমরা তৎকালীন পুলিশ সুপার অখিলেশ নারায়ণ সিং- এর একটি বিবৃতিও পাই। এতে অখিলেশ বলেছেন যে আত্মহত্যাকারী অশ্বিনীকে সাব ইন্সপেক্টর রাজদেব পুনিয়া চড় মেরেছিলেন, যে কারণে এবং আরও কিছু কারণে অশ্বিনী রেগে গিয়ে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর রাজদেব পুনিয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
আমরা মেরঠের আজ তক সংবাদিক উসমান চৌধুরীর সঙ্গেও যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের নিশ্চিত করেন যে এই ঘটনাটি ২০২০ সালে মেরঠে ঘটেছিল, যখন অশ্বিনী একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনে আত্মহত্যা করেছিলেন।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, ২০২০ সালে আত্মহত্যার এই ঘটনাকে বিভ্রান্তিকরভাবে সাম্প্রতিক দাবিতে শেয়ার করা হচ্ছে।
মেরঠে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর ঘুষ না পেয়ে এই ব্যক্তিকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছেন।
ঘটনাটি ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের। অশ্বিনী লোধি নামে এক ব্যক্তি ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে ঘুষ আনার অভিযোগ করে আত্মহত্যা করেন। অভিযুক্তকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।