
বিগত কয়েকদিন যাবত সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে যা দেখে অনেকেই হতভম্ব হয়ে পড়ছেন। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে একটি দৈত্যাকার ঢেউ নাকি আকাশের উচ্চতায় উঠে মেঘ স্পর্শ করছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা অন্তত তেমনটাই দাবি করছেন।
ভিডিওটি ইংরাজি, বাংলা ও হিন্দির মতো একাধিক ভাষায় বিরাট পরিমাণে শেয়ার করা হয়েছে। ইংরাজিতে তা শেয়ার করে লেখা হয়েছে যে এটি একটি ঢেউয়ের আকাশ ছোঁয়ার দৃশ্য।
বাংলাতেও একই ভিডিওটি শেয়ার করে হয়েছে। সেই সঙ্গে লেখা হয়েছে, "যখন সমুদ্রের ঢেউ আকাশ ছুঁয়ে যায়।"
ভাইরাল ভিডিওটির আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) তদন্ত করে পেয়েছে যে ভাইরাল দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ঢেউ আসলে আকাশের মেঘ ছুঁয়ে ফেলেনি, সেটা সম্ভবও নয়। এটি আসলে সমুদ্রের জলের সঙ্গে বাতাসের ঘর্ষণের ফলে তৈরি হওয়া এমন দৃশ্যপট যাকে মেঘ বলে মনে হয়েছে।
আফয়া তদন্ত
ভিডিওটি ভালভাবে খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, যে সময়ে ঢেউ আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে বলে মনে হয়, তা আসলে সমুদ্রের উপরের স্তরে থাকা জলীয় বাষ্পের বিচ্ছুরণ যাকে মেঘ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় সি স্প্রে এরোসোল। সমুদ্রের উপর যখন বাষ্প ঘণিভূত হয়, এবং তার সঙ্গে উঁচু ঢেউয়ের ঘর্ষণের ফলে একপ্রকার বিচ্ছুরণ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই বিচ্ছুরণকেই অনেক সময় দেখে মেঘের সঙ্গে সংঘর্ষ মনে হতে পারে। উপরন্তু, এই ভিডিওটি এমন জায়গা থেকে রেকর্ড করা হয়েছে যেখানে ঢেউয়ের উচ্চতা ও মেঘের উচ্চতা সমান-সমান মনে হয়েছে। যদিও বাস্তবে এমনটা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।
সি স্প্রে এরোসোল কী, এবং তা কী ভাবে তৈরি হয়, তার বিশদ বিবরণ সাইন্স ডাইরেক্ট নামের এই ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদনে পড়া যেতে পারে।
রেকর্ড অনুযায়ী, ইতিহাসের সর্বোচ্চ ঢেউ ১৯৫৮ সালে আলাস্কায় আসা একটি সুনামির সময় মাপা হয়েছিল। তথ্য বলছে, সেই সময় একটি ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল ১,৭২০ ফুট। শুধুমাত্র সেই ঢেউয়ের ধাক্কায় সেবার ৫ ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
এ বার চলে আসা যাক মেঘের উচ্চতার বিষয়ে। তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মেঘ ন্যূনতম ৬,৫০০ ফুট উচ্চতায় থাকতে পারে। তার নীচে নামলে সেটি বৃষ্টি আকারে ঝরে পড়বে। সুতরাং, একটি ঢেউয়ের পক্ষে যে মেঘের উচ্চতায় পৌঁছনো সম্ভব নয় তা সহজেই অনুমেয়। যদি তেমনটা হয় তাহলে যে পৃথিবীর উপর বিরাট ধ্বংসলীলা নেমে আসতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
অন্যদিকে, যে ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় আগুনের গতিতে ছড়িয়েছে তা আসলে কোনর হেইগি নামের এক সামুদ্রিক ভিডিওগ্রাফারের। তিনি ২০১৯ সালে মে মাসের ১৫ তারিখ এই ভিডিওটি নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছিলেন। যদিও তিনি সেখানে ঢেউ মেঘ ছোঁয়ার কোনও কথা লেখেননি।
অর্থাৎ, সেই ভিডিওটি যে বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে তা বোঝাই যাচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সমুদ্রের ঢেউ কী ভাবে আকাশের মেঘ ছুঁয়ে ফেলছে।
ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ঢেউ আসলে আকাশের মেঘ ছুঁয়ে ফেলেনি, সেটা সম্ভবও নয়। এটি আসলে সমুদ্রের জলের সঙ্গে বাতাসের ঘর্ষণের ফলে তৈরি হওয়া এমন দৃশ্যপট যাকে মেঘ বলে মনে হয়েছে।