কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে বিরাট ব্যবধানে জয়লাভ করে দাক্ষিণাত্যে বিজেপিকে হোয়াইট ওয়াশ করেছে কংগ্রেস। এই জয়ের প্রভাব আগামী লোকসভা নির্বাচনে আদৌ প্রতিফলিত হবে কিনা, সেই বিষয়টি তর্কসাপেক্ষ হলেও এই জয়ের ফলে ধুঁকতে থাকা 'গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি' যে অনেকটাই অক্সিজেন পেয়েছে, তা সন্দেহাতীত। আর ফলাফলের পর থেকেই সোশ্য়াল মিডিয়াও বেশ সরগরম।
ইতিমধ্যেই এই নির্বাচন নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হয়েছে। সেই পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, কর্ণাটকে হিজাব নিষিদ্ধ করা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বিসি নাগেশকে নাকি ভোটে পরাজিত করেছেন হিজাব পরিহিতা আরেক মহিলা, কানিজ ফাতিমা। এবং এমন ঘটনা কোনও মুসলিম অধ্যুষিত আসনে ঘটেনি, বরং হিন্দু অধ্যুষিত আসনে হয়েছে।
ভাইরাল পোস্টে লেখা হয়েছে, "কর্ণাটকের B.J.P প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, যে নাকি হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। তার নির্বাচনী এলাকার 91% ভোটার হিন্দু। এবারের নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে সেখানকার কংগ্রেস প্রার্থী একজন মুসলিম হিজাব গার্ল, কানিজ ফাতিমা। তাকে 16 হাজারের অধিক ভোটে জয়ী করে ধর্ম ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা দিলেন সেই এলাকার মানুষ..!" (পোস্টের বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল তথ্য়টি সত্যি নয়। কর্ণাটকের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বিসি নাগেশ পরাজিত হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সংখ্যালঘু প্রার্থী কানিজ ফাতিমার কাছে নয়।
কীভাবে জানা গেল সত্যি?
সবার প্রথম কিওয়ার্ড সার্চের সাহায্যে আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি যে, সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে বিসি নাগেশ কেমন ফল করেছেন। তখন আমাদের সামনে মিন্ট-এর একটি প্রতিবেদন উঠে আসে যা ১৩ মে, ফলপ্রকাশের দিন প্রকাশ পেয়েছিল।
সেখানেই লেখা হয়, হিজাব ব্যান করে যে কর্ণাটকের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী শিরোনামে উঠে এসেছিলেন, তিনি ভোটে নিজের তিপতুর আসন থেকে কংগ্রেস প্রার্থী কে সদাকশরির কাছে সাড়ে ১৭ হাজার ভোটে পরাস্ত হয়েছেন। যদিও সেই প্রতিবেদনে কোথাও মুসলিম প্রার্থী কানিজ ফাতিমা সম্পর্কে কিছু লেখা হয়নি।
এই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালেও তিতপুর আসন থেকে মুখোমুখি লড়েছিলেন বিসি নাগেশ ও কে সদাকশরি। সেবার নাগেশ জয়লাভ করলেও এবার হিসেব কার্যত উল্টে গিয়েছে।
এরপর আমরা খোঁজার চেষ্টা করি কংগ্রেস প্রার্থী কানিজ ফাতিমা কোন আসনে লড়ে কার বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছেন। কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়, যেখানে লেখা হয়, কানিজ এ বারের কর্ণাটকের ভোটে একমাত্র মুসলিম মহিলা প্রার্থী ছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি গুলবর্গা উত্তর আসন থেকে জয়লাভ করেছেন বলে জানানো হয়। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে বিসি নাগেশ ও কানিজ ফাতিমা এক আসনে লড়েননি। ফলত, একজনের অপরকে হারানোর ভিত্তিহীন।
এই বিষয়ে আরও সঠিক তথ্য পেতে আমরা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট খতিয়ে দেখি। সবার প্রথম তিতপুর বিধানসভার ফলাফল খতিয়ে দেখে জানা যায়, সেই আসনে ৫৩ হাজার ৭৫৩টি ভোট পেয়েছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থা বিসি নাগেশ। তাঁর উল্টো দিকে থাকা কংগ্রেসের কে সদাকশরি পান ৭১ হাজার ৪১৫টি ভোট।
কমিশনের ওয়েবসাইটে এরপর আমরা গুলবর্গা উত্তর আসনের ভোট-তথ্য খুঁজে দেখি। সেখানে দেখা যায়, এই আসনে ৮০ হাজার ৫৩৮টি ভোট পেয়েছিলেন কংগ্রেসের ফাতিমা। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির চন্দ্রকান্ত পাটিল হেরেছিলেন ৩ হাজারের মতো ভোটের ব্যবধানে। পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৫৫৯টি ভোট।
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, সোশ্য়াল মিডিয়ায় যে দাবিটি ছড়াচ্ছে তা সত্যি নয়।
গুলবর্গা উত্তর আসন কি হিন্দু অধ্যুষিত?
না। গুলবর্গা উত্তর আসনটি হিন্দু অধ্যুষিত, এর সমর্থনে কোনও প্রমাণ আমরা পাইনি। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দুতে লেখা হয়েছে, এই আসনটি SC প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত ও এখানকার জনসংখ্যা লিঙ্গায়েত, মুসলিম ও দলিত অধ্যুষিত। অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী সংস্থা চাণক্য-র দাবি, এই আসনের ৫২.২ শতাংশ ভোটার মুসলিম। যদিও স্বাধীনভাবে এই পরিসংখ্যানের সত্যতা আমরা বিচার করিনি। তবে আসনটি যে হিন্দু অধ্যুষিত নয়, তা আন্দাজ করে নেওয়াই যায়।
৯১ শতাংশ হিন্দু অধ্যুষিত আসনে কংগ্রেসের কানিজ ফাতিমা বিজেপি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বিসি নাগেশকে পরাজিত করেছেন, যিনি কর্ণাটকে হিজাব ব্যান করেছিলেন।
বিসি নাগেশ তিতপুর আসনে হেরেছেন ঠিকই। তবে কানিজ ফাতিমা নয়, কংগ্রেসের প্রার্থী কে সদাকশরির কাছে। কানিজ ফাতিমা গুলবর্গা উত্তর আসনে জয়লাভ করেছেন। এই আসনটি হিন্দু অধ্যুষিত নয়।