গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ঘটে চলছে একের পর সহিংসতার ঘটনা। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রক্ষা পাননি আওয়ামী লীগ নেতা বা কর্মী থেকে শুরু করে সংখ্যালঘু হিন্দুরাও। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন দেশটির বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের আধিকারিকরাও।
আর এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে কিছু ছাত্র-ছাত্রীর দ্বারা একজনকে ঘিরে রেখে জুতোর মালা পরানোর একটি ভিডিয়ো। সেটি শেয়ার করে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, ভিডিয়োতে যাকে জুতোর মালা পরানো হচ্ছে তিনি বাংলাদেশের একজন হিন্দু শিক্ষিক। হাসিনা সরকারের পতনের পর পড়ুয়াদের তরফে তাঁকে এভাবে হেনস্থা করা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে সেটির ফ্রেমের উপরে লিখেছেন, “হিন্দু শিক্ষকের গলায় জোতার মালা পরানো হচ্ছে, Follow করে পাশে থাকবেন।” (সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে। ভিডিওতে সরাসরি বাংলাদেশের কথা উল্লেখ না করলেও এর কমেন্ট সেকশনে অন্যান্য ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তরফে এটিকে বাংলাদেশে হিন্দু শিক্ষকের সঙ্গে হওয়া ঘটনা হিসাবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওতে যে শিক্ষিকাকে দেখা যাচ্ছে তিনি রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন। তিনি হিন্দু নন বরং মুসলিম।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল ভিডিয়োর সত্যতা জানতে আমরা সেটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা গত ২২ আগস্ট এই একই ভিডিও একটি ফেসবুক প্রোফাইলেও দেখতে পাই। সেখানে ভিডিওটি শেয়ার করে লেখা হয়েছে, “প্রধান শিক্ষিকার গলায় জুতার মালা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুর।”
এরপর উক্ত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে প্রাপ্ত সূত্রের উপরে ভিত্তি করে আমরা এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা গত ২৫ আগস্ট এই একই ঘটনার ভিডিও একটি ইউটিউব চ্যানেলেও খুঁজে পাই। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে লেখা হয়েছে, “প্রধান শিক্ষিকার গলায় জুতার মালা- তাও সেনাবাহিনী সামনে জোর-জবরদস্তি করে পদত্যাগ করানো হল! কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুর।”
এরপর পরবর্তী সার্চে আমরা News Door নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২১ আগস্ট এই ঘটনার একটি বর্ধিত ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাই। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে লেখা হয়েছে, “অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ এনে রংপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীনকে পদত্যাগে বাধ্য করালো বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকরা। প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর তিনি তোপের মুখে পড়ে পদত্যাগপত্রে সই করেন। বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীনের নানা অনিয়ম-দূর্নীতি তুলে ধরে বিক্ষোভ করতে থাকেন।”
এরপর আমরা ভাইরাল শিক্ষিকার একটি ছবি-সহ এই একই তথ্য খুঁজে পাই গত ২১ আগস্টে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম Dhaka Post-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “দুর্নীতির অভিযোগ এনে রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীনকে পদত্যাগে বাধ্য করালেন বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।”
এর থেকে প্রমাণ হয় যে বাংলাদেশে হিন্দু শিক্ষিকার গলায় জুতোর মালা পরানোর দৃশ্য দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর।
ভিডিওতে বাংলাদেশে একজন হিন্দু শিক্ষিকার গলায় জুতোর মালা পরানোর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
ভাইরাল ভিডিওতে যে শিক্ষিকাকে দেখা যাচ্ছে তিনি রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন। তিনি হিন্দু নন বরং মুসলিম।