
কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারানো ২৬ পর্যটকের শোকে মুহ্যমান দেশ। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি হৃদয় বিদারক ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। এই ভিডিও-র প্রথম অংশে একটি শিশুকে একটি মৃতদেহের উপর বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিও-র পরবর্তী অংশে একই শিশুকে রক্তে লাগা একটি শার্ট পরা অবস্থায় একটি চলন্ত গাড়ির ভেতরে দেখা যাচ্ছে। পাশ থেকে একজন মহিলার কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে যিনি শিশুটিকে বিস্কুট এবং চকলেট দিয়ে ভোলানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু সে কেঁদেই চলেছে।
ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করে অনেকেই একে পহেলগামের ২২ এপ্রিলের ঘটনা বলে দাবি করছেন। অনেকেরই বক্তব্য, এই শিশুটির পিতামহ বা ঠাকুরদা পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন কারণ তিনি একজন হিন্দু ছিলেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "এই বাচ্চাটার একমাত্র দোষ হলো যে সে একজন হিন্দু তাই সে কা ফে র! তাই সে তার বাবাকে হারিয়েছে...।"
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই ঘটনাটি সাম্প্রতিক নয় বরং প্রায় পাঁচ বছরের পুরনো এবং কাশ্মীরের সোপোর এলাকার। তাছাড়া, এই ঘটনায় নিহত বৃদ্ধ ব্যক্তি একজন মুসলিম ছিলেন।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
গুগল লেন্স ব্যবহার করে ভাইরাল ভিডিওটির স্ক্রিনশট রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ২০২০ সালের ৪ জুলাই প্রকাশিত 'ন্যাশনাল হেরাল্ড'-এর একটি রিপোর্ট পাওয়া যায়। সেই রিপোর্টে মৃতদেহের ওপর বসে থাকা ওই একই শিশুর ছবি দেখতে পাওয়া যায়।
খবর অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ জুলাই কাশ্মীরের সোপোর শহরে ঘটনাটি ঘটে। সেদিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ বশির আহমেদ খান তাঁর তিন বছরের নাতিকে নিয়ে গাড়িতে করে গাড়িতে করে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। সেই সময় সোপোরে নিরাপত্তারক্ষী এবং জঙ্গিদের মধ্যে গুলি বিনিময় চলছিল। এই গুলিযুদ্ধের সময় বশিরের গাড়ি গুলির লড়াইয়ের মাঝে পড়ে যায় এবং তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। যা থেকে পরিষ্কার হয় যে নিহত ব্যক্তি মুসলিম ছিলেন।
২০২০ সালের ৩ 'ইন্ডিয়া টুডে'-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে বশির খানের বয়স ৬৫ বছর এবং তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে যে নিরাপত্তা বাহিনী তাঁকে জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে হত্যা করেছে। তবে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের তৎকালীন ইন্সপেক্টর জেনারেল বিজয় কুমার এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, "আমি পরিবারকে জিজ্ঞাসা করতে চাই যে তারা কি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল? তারা কি কাউকে গুলি করতে দেখেছে? তারা কোনও প্রমাণ ছাড়াই নিরাপত্তা বাহিনীকে দোষারোপ করে কিছু ভিডিও শেয়ার করছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।"
'হিন্দুস্তান টাইমস'-এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আমরা দ্বিতীয় অংশের ভিডিওটি পাই যেখানে শিশুটিকে গাড়ির ভেতরে বসে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিও-র বিবরণে লেখা হয় যে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে এই সংঘর্ষে এক সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি একজন সিআরপিএফ জওয়ানও প্রাণ হারান।
স্পষ্টতই, ২০২০ সালে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে পহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিভ্রান্তিকরভাবে শেয়ার করা হচ্ছে।
এই ভিডিওটি ২২শে এপ্রিলের, যখন কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসীরা এক শিশুর বাবাকে তার সামনে গুলি করে হত্যা করে কারণ সে হিন্দু ছিল।
এই ঘটনাটি সাম্প্রতিক নয়, বরং ২০২০ সালের। সেই সময়, কাশ্মীরের সোপোর শহরে সন্ত্রাসবাদী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে এই শিশুটির পিতামহ বশির আহমেদ খান নিহত হন।