ফ্যাক্ট চেক: বিবস্ত্র করে মুসলিম মহিলাদের মারধর দাবিতে ছড়ালো দলিত নারী নির্যাতনের পুরনো ভিডিও

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওর মহিলারা মুসলিম নয় বরং দলিত হিন্দু। ২০২২ সালের ২০ মার্চ উত্তর প্রদেশের জৌনপুরের দেওরিয়া গ্রামে একটি বিবাদের তদন্তে গিয়ে ওই দলিত মহিলাদের নির্মমভাবে মারধর করে স্থানীয় বাদলপুর থানার পুলিশ বলে অভিযোগ। 

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: বিবস্ত্র করে মুসলিম মহিলাদের মারধর দাবিতে ছড়ালো দলিত নারী নির্যাতনের পুরনো ভিডিও

সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসারন ভ্যালিতে নৃশংস জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২৬ জন। ধর্মীয় পরিচয় জিজ্ঞেস করে বেছে বেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদেরকে হত্যা করে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীরা। এই ঘটনার জেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মুসলিমরা। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি মর্মান্তিক ভিডিও।

যেখানে কয়েকজন মহিলাকে কাঁদতে কাঁদতে নিজেদের পোশাক তুলে শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখাতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, কেবলমাত্র মুসলিম হওয়ার কারণে ওই মহিলাদের বিবস্ত্র করে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “বাহিরে রাজ্য মুসলিম মেয়েদের উলঙ্গ করে কিভাবে মারছে দেখুন।”

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওর মহিলারা মুসলিম নয় বরং দলিত হিন্দু। ২০২২ সালের মার্চ মাসে উত্তর প্রদেশের জৌনপুরের দেওরিয়া গ্রামে একটি বিবাদের তদন্ত গিয়ে খোদ পুলিশ ওই দলিত মহিলাদের নির্মমভাবে মারধর করে বলে অভিযোগ উঠেছিল। 

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

ভাইরাল ভিডিও ও দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সমাজবাদী পার্টির অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশন অনুযায়ী, ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরের বাদলপুর এলাকার। সেখানে পুলিশের হাতে নির্মমভাবে আক্রান্ত হয় বেশ কয়েকজন স্থানীয় দলিত মহিলা। উত্তর প্রদেশের দলিত নেতা তথা ভীম আর্মি চিফ চন্দ্র শেখর আজাদও এই একই তথ্যসহ ভিডিওটি তাঁর অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছিলেন। 

এরপর উক্ত সূত্র ধরে এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০২২ সালের ২৫ মার্চ এই একই ভিডিও ও তথ্য-সহ একাধিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি ২০২২ সালের ২০ মার্চ উত্তর প্রদেশের জৌনপুরের বাদলপুর থানার দেওরিয়া গ্রামের ঘটনা। নির্যাতিতা ওই দলিত মহিলাদের অভিযোগ, গ্রামের কলোনিতে বাবা সাহেব আম্বেদকরের একটি মূর্তি বসানোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে বিবাদ সৃষ্টি হয়। এরপর পুলিশকে খবর দেওয়া হলে স্থানীয় বাদলপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্তের নামে ওই মহিলাদের বাড়িতে ঢুকে তাদের কয়েকজনকে নির্মমভাবে মারধর করে।

Advertisement

তবে ওই সব প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাদলপুর থানার পুলিশের তরফে মহিলাদের মারধর করা এবং বাবা সাহেব আম্বেদকরের মূর্তি বসানোকে কেন্দ্র করে বিবাদ সৃষ্টির কথা অস্বীকার করা হয়েছে। বাদলপুর থানার সিও-র দাবি, একটি বিতর্কিত জমি থেকে কলা কাটা নিয়ে দুই পক্ষের বিবাদ মেটানোর জন্য পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কাউকে মারধর করা হয়নি। পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে বাবা সাহেব আম্বেদকরের মূর্তি বসানোর কোনও রকম সম্পর্ক নেই।

এখানে  উল্লেখ্য, ভাইরাল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা সেটির ফ্রেমের হিন্দিতে ‘সাংবাদিক তামীর হাসান শিবু’ নামক একটি ওয়াটারমার্ক দেখতে পাই। উক্ত সূত্রধরে এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০২২ সালের ২৪ মার্চ ‘Journalist Tameer Hasan’এর ফেসবুক পেজে আমরা এই একই তথ্য-সহ ভিডিওটি খুঁজে পাই। এরপর বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আমরা উত্তর প্রদেশের জৌনপুরের ওই সাংবাদিক তামীর হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনিও বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করে জানান, “ভিডিওর মহিলাদের কেউই মুসলিম নয় বরং তারা সকলেই দলিত হিন্দু।”

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, বিবস্ত্র করে মুসলিম মহিলাদের মারধর করা হচ্ছে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে হিন্দু মহিলাদের ভিডিও।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

কেবলমাত্র মুসলিম হওয়ার কারণে ভিডিওর মহিলাদের বিবস্ত্র করে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে।

ফলাফল

ভাইরাল ভিডিওর মহিলারা মুসলিম নয় বরং দলিত হিন্দু। ২০২২ সালের ২০ মার্চ উত্তর প্রদেশের জৌনপুরের দেওরিয়া গ্রামে একটি বিবাদের তদন্তে গিয়ে স্থানীয় বাদলপুর থানার পুলিশ ওই দলিত মহিলাদের নির্মমভাবে মারধর করে বলে অভিযোগ।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement