ফ্যাক্ট চেক: উত্তরপ্রদেশে পুলিশ কর্মীকে মারধর বিজেপি নেতার? না, ভিডিওটি  সমাজবাদী পার্টির নেত্রীর

সম্প্রতি বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে ফোন করে অশ্রাব্য গালিগালাজ এবং তাঁর মা-স্ত্রীর নাম করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বীরভূম জেলার প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে। আইসি এবং কেষ্টের কথোপকথনের তথাকথিত সেই অডিও ক্লিপটি প্রকাশ্যে আসতেই শাসক দলকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন বিজেপি-সহ বিরোধী দলের নেতারা।

আর এই সার্বিক পরিস্থিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে অন্য একটি ভিডিও। যেখানে একজন মহিলা ও এক ব্যক্তিকে গাড়ি থেকে নেমে এক পুলিশ কর্মীর সঙ্গে বিতর্কে জড়াতে এবং একে অপরের সঙ্গে হাতাহাতি করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি নেতারা এক পুলিশ কর্মীকে বেধড়ক মারধর ও গালিগালাজ করছে। কিন্তু বোলপুরের আইসিকে নিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের মন্তব্যের প্রতিবাদ করলেও উত্তরপ্রদেশে নিজেদের দলের নেতাদের এই ব্যবহার নিয়ে একটা কথা বলছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “অনুব্রত মণ্ডলের ভাষাকে কোনদিনও সমর্থন করিনি আর আগামী দিনও করবো না। আর অনুব্রত মণ্ডলের ভাষা কে নিয়ে বঙ্গ বিজেপি যে হারে আক্রমণ করেছিল তারা আজ দেখুন ডাবল ইঞ্জিন সরকার উত্তরপ্রদেশে পুলিশের গায়ে হাত দিচ্ছে আর কি ভাষায় গালাগালি করছে? বিজেপি এটাকে সমর্থন করে কারণ বিজেপির এইগুলো জন্মগত অধিকার।” (সব বানান অপরিবর্তিত)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওতে যে দু’জনকে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়াতে দেখা যাচ্ছে তারা বিজেপি কর্মী বা নেতা নয়। বরং তারা হলেন উত্তর প্রদেশের ভাদোহি জেলার সমাজবাদী পার্টির নেত্রী শ্যামলা সরোজ এবং তার স্বামী রাম সিং রাকেশ। 

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২২ সালের ৩ জুন একটি এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ভাদোহির প্রাক্তন জেলা পঞ্চায়েত সভাপতি শ্যামলা সরোজ এবং তার স্বামীকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করার অভিযোগে এক পুলিশ কর্মীকে বরখাস্ত করেছেন ভাদোহির পুলিশ সুপার।  

এরপর উক্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই সংক্রান্ত পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ২০২২ সালের ৪ জুন এবিপি লাইভের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২ জুন ভাদোহি শহরের কোতোয়ালি সংলগ্ন লিপ্পান তিরহায় সমাজবাদী পার্টির নেত্রী তথা ভাদোহির প্রাক্তন জেলা পঞ্চায়েত সভাপতি শ্যামলা সরোজ এবং তার স্বামী রাম সিং রাকেশকে গালিগালাজ এবং মারধর করেন এক পুলিশ কর্মী। 

দৈনিক জাগরণের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২ জুন সন্ধ্যায় ভাদোহি শহরে একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। সেই উপলক্ষ্যে পুলিশের তরফে রাস্তা বন্ধ রখে অন্যত্র দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়। সেই সময় সমাজবাদী পার্টির নেত্রী শ্যামলা সরোজ এবং তার স্বামী গাড়িতে করে সেখানে পৌঁছন। তখন সেখানে উপস্থিত পুলিশ কনস্টেবল রজনীশ গৌতম তাদের গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করলে বিতর্ক শুরু হয়। এক পর্যয়ে কনস্টেবল শ্যামলা সরোজের স্বামীকে গালাগালি দিয়ে তার কলার ধরে টানলে বিতর্কটি হাতাহাতির রূপ নেয়।

পাশাপাশি ২০২২ সালের ৩ জুন ভাদোহি পুলিশের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই ঘটনা সংক্রান্ত পুলিশ সুপারের একটি বিবৃতি পাওয়া যায়। সেখানে ভাদোহির তৎকালীন পুলিশ সুপার ডঃ অনিল কুমার জানিয়েছেন, অভিযুক্ত কনস্টেবল রজনীশ গৌতমকে বরখাস্ত করে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ  দেওয়া হয়েছে।

दि0- 02.06.22 को थाना भदोही के चौकी रजपुरा पर नियुक्त आरक्षी द्वारा ड्यूटी के दौरान आमजन के साथ अमर्यादित व्यवहार किये जाने सम्बंधित वायरल वीडियो का संज्ञान लेकर आरक्षी को निलम्बित करते हुए क्षेत्राधिकारी भदोही को जांच के निर्देश दिए गए हैं। उक्त के संबंध में #SP_Bhadohi की बाईट। pic.twitter.com/TegQjvkjAL

— BHADOHI POLICE (@bhadohipolice) June 3, 2022

এই সংক্রান্ত পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ২০২২ সালের ৩ জুন সমাজবাদী পার্টির নেত্রী শ্যামলা সরোজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এই একই ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেখানে তিনি এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, "মাতাল এবং উর্দিধারী বিজেপির গুন্ডারা সমাজবাদী পার্টির কর্মীদের টার্গেট করছে।" পাশাপাশি আমরা শ্যামলা সরোজের ফেসবুক পেজটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার সময় তার প্রোফাইল ও কভার ফটো এবং সাম্প্রতিক সময়ের পোস্ট থেকে নিশ্চিত হই যে তিনি বর্তমানেও সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে যুক্ত আছেন।

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি নেতৃত্বের তরফে এক পুলিশ কর্মীকে মারধর করা হয়েছে দাবি করে ছড়ানো হচ্ছে সমাজবাদী পার্টির নেত্রী ও তার স্বামীর পুরনো ভিডিও।