
শনিবার গভীর রাতে ইরানের ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহানে অবস্থিত তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বিমানবাহিনী। হামলার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিন কেন্দ্রই ধ্বংস ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে আমেরিকাকে কড়া জবাব দেওয়ার কথা হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান।
আর এই সার্বিক পরিস্থিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে সমুদ্রের মাঝে একটি জাহাজে ভয়াবহ আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, অবশেষে আমেরিকার রণতরী অর্থাৎ অস্ত্র বোঝাই জাহাজে হামলা চালিয়েছে ইরান।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “এবার আমেরিকান জাহাজে মিসাইল হামলা। এ হামলা ইরান না হুতি চালিয়েছে,, পরিষ্কার হয়নি। তবে বাহরাইনের এই অস্ত্র ভর্তি জাহাজে ইরান হামলা চালিয়েছে বলে,,, খবর পাওয়া যাচ্ছে।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি মার্কিন রণতরীতে ইরানের হামলার দৃশ্য নয়। বরং এটি চলতি বছরের ১৭ জুন মধ্যপ্রচ্যের হরমুজ প্রণালীর দক্ষিণাংশে এমভি অ্যাডালিন এবং এমভি ফ্রন্ট ঈগল নামক দুটি তেলের ট্যাঙ্কারের সংঘর্ষের দৃশ্য।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ১৭ জুন বিখ্যাত মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের কলামিস্ট তথা লেখক জাভিয়ের ব্লাসের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে জাভিয়ের লিখেছেন, “হরমুজ প্রণালীর কাছে তেলের ট্যাঙ্কারের ফ্রন্ট ঈগল ও অ্যাডালিনের সংঘর্ষের প্রথম ভিডিও।” পাশাপাশি জাভিয়ের আরও উল্লেখ করেছেন, "ফ্রন্ট ঈগলের মালিক জানিয়েছেন, এটি একটি নৌ-পরিবহন সংক্রান্ত ঘটনা এবং এর সঙ্গে বর্তমানে চলমান আঞ্চলিক সংঘাতের কোনও সম্পর্ক নেই।”
First video of the oil tanker Adalynn after the collision earlier today with the Front Eangle, near the Strait of Hormuz.
— Javier Blas (@JavierBlas) June 17, 2025
"This is a navigational incident and not related to the current regional conflict," said the owner of the Front Eagle oil tanker.
pic.twitter.com/48FKhjJA2Z
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশট-সহ একাধিক অন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৫ সালের ১৭ জুন ভোরের দিকে হরমুজ প্রণালীর দক্ষিণাংশে এমভি অ্যাডালিন এবং এমভি ফ্রন্ট ঈগল নামক দুটি তেলের ট্যাঙ্কারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর জেরে এমভি অ্যাডালিন নামক তেলের ট্যাঙ্কারটিতে আগুন লেগে যায়। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোস্টগার্ডের সদস্যরা এমভি অ্যাডালিনে থাকা ২৪ জন ক্রু সদস্যকে যথা সময়ে উদ্ধার করে পার্শবর্তী খোর ফাক্কান বন্দরে সরিয়ে নিয়ে যায়। পাশাপাশি, উভয় জাহাজেই কারোর আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদবন থেকে আরও জানা যায়, ইলেকট্রনিক নেভিগেশন সিস্টেমে সমস্যার কারণে এই দুর্ঘটনা বলে জানা গেছে। পাশাপাশি, ব্রিটিশ নৌ নিরাপত্তা সংস্থা অ্যামব্রের তরফে জানানো হয়েছে যে এই দুই তেলের ট্যাঙ্কারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে এখানে উল্লেখ্য, হরমুজ প্রণালী হল ইরান ও ওমানের মধ্যে অবস্থিত ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি জলপথ। আন্তর্জাতিক বাজারে যত তেল আমদানি-রফতানি করা হয়, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগই চলে এই জলপথ দিয়ে। তেল রফতানিকারী দেশগুলির জোট ‘ওপেক’-এর সদস্য সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েত, কাতার এবং ইরাকের মতো দেশগুলি এই প্রণালী দিয়ে নিজেদের তেল রফতানি করে। অন্যদিকে, আমরা আমাদের অনুসন্ধানে সম্প্রতি আমেরিকার রণতরীতে ইরানের তরফে হামলা চালানোর কোনও খবর খুঁজে পাইনি।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, মার্কিন রণতরীতে ইরানের হামলার দৃশ্য দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে গত ১৭ জুন হরমুজ প্রণালীতে দুটি তেলের ট্যাঙ্কারের মধ্যে সংঘর্ষের ভিডিও।
ভিডিওতে আমেরিকার অস্ত্র বোঝাই জাহাজে ইরানের তরফে হামলা চালানোর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
ভাইরাল ভিডিওতে চলতি বছরের ১৭ জুন মধ্যপ্রচ্যের হরমুজ প্রণালীর দক্ষিণাংশে এমভি অ্যাডালিন এবং এমভি ফ্রন্ট ঈগল নামক দুটি তেলের ট্যাঙ্কারের সংঘর্ষের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।