
ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি উত্তাপ্ত গোটা বিশ্বের রাজনীতি। সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেনেই কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন, তা আমেরিকা জানে দাবি করে ইরানকে নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু একটি ভিডিও বার্তায় ট্রাম্পের সেই নির্দেশ সরাসরি প্রত্যাখান করেছেন খামেনি।
আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে এক ব্যক্তিকে ইরানের প্রথম সুপ্রিম লিডার তথা ইসলামিক প্রজাতন্ত্রীক ইরানের প্রতিষ্ঠাতা রুহোল্লা খামেনির ছবির ফ্রেম ভাঙতে এবং সেটি মাটিতে ফেলাত তার উপর পা মাড়িয়ে চলে যেতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের মাঝেই ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনির ছবি পা দিয়ে মাড়িয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছে দেশটির নাগরিকরা।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন ‘আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনা’। পাশাপাশি ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “ইরানের সুপ্রিমো খেইমেনির বিরুদ্ধে বিরোধ শুরু করেছে সেখানকার ইরানি নাগরিকরা কারণ 1991 দশকে ইরান ছিল এক উন্নতশীল দেশ... ইসলীমিক মৌলবাদীদের কারণে দেশ আজ ধংসের পথে।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি ইরানের নয় বরং চলতি বছরের মার্চ মাসে সিরিয়ার লেবানন সীমান্ত সংলগ্ন একটি গ্রামের তোলা হয়েছিল। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধের কোনও সম্পর্ক নেই।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটে syriancivilwar নামক একটি গ্রুপে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয় এবং এর সঙ্গে চলমান ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধের কোনও সম্পর্ক নেই। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “সিরিয়ার সেনাবাহিনী লেবানন সীমান্তবর্তী একটি এলাকা পুনরুদ্ধারের পর খামেনেইর ছবি পাওয়া গেছে।”
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ওই একই দিন অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ জর্ডান ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ‘খাবেরনি’(Khaberni)-র অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। আরবি ভাষায় লেখা সেই ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি সিরিয়ার লেবানন সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে তোলা হয়েছিল। সিরিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদের সরকার পতনের পর সিরিয়ার সেনাবাহিনী এলাকাটি হিজবুল্লাহের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করে। সেই সময় সেখানে অবস্থিত হিজবুল্লাহের সদর দফতরে ফ্রেমে বাঁধা খামেনেইর ছবিটি পাওয়া যায়।
العثور على صور لخمانئي في مقر كان يستخدم من قبل قوات حزب الله ، بعد استعادة منطقة حدودية بين سورية ولبنان pic.twitter.com/cENm3u5Kme
— خبرني - khaberni (@khaberni) March 18, 2025
এখানে উল্লেখ্য, ভাইরাল ভিডিওর ছবিটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা লক্ষ্য করি সেটি ইরানের বর্তামন সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেনির নয়। বরং সেটি ইরানের প্রথম সুপ্রিম লিডার তথা ইসলামিক প্রজাতন্ত্রীক ইরানের প্রতিষ্ঠাতা রুহোল্লা খামেনেইর ছবি। যিনি ১৯৮৯ সালের জুন প্রয়াত হন। তার মৃত্যুর পর তাঁর শিষ্য তথা দেশটির বর্তমান সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেনেই ইরানের সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নিচে উভয় নেতার ছবির তুলনা দেখা যাবে।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধের আবহে সিরিয়ায় রুহোল্লা খামেনেইর ছবি অবমাননার পুরনো ভিডিও শেয়ার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের মাঝেই ভিডিওতে ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনির ছবি পা দিয়ে মাড়িয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছে দেশটির নাগরিকরা।
ভাইরাল ভিডিওটি ইরানের নয় বরং চলতি বছরের মার্চ মাসে সিরিয়ার লেবানন সীমান্ত সংলগ্ন একটি গ্রামের তোলা হয়েছিল। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধের কোনও সম্পর্ক নেই।