
সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের আম্বেদকরনগরে দুর্বৃত্তদের শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে এক সড়ক দুর্ঘটনায় এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় শাহবাজ, আরবাজ ও ফয়জল নামে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আদালতে হাজিরা দেওয়ার আগে পুলিশ যখন অভিযুক্তকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তারা রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। তখন পুলিশ ওই অভিযুক্তদের ওপর গুলি চালায়, এতে দু'জনের পায়ে গুলি লাগে।
এই ঘটনার সূত্র ধরেই এ বার তিন যুবকের একটি ভিডিয়ো বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে তাদের পা প্লাস্টার করা এবং তারা মাটিতে নিজেদের শরীর টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই ভিডিয়োটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে লেখা হচ্ছে এবং দাবি করা হচ্ছে যে এরা সেই তিন যুবক যারা ওড়না-কাণ্ডে ধৃত এবং অতঃপর উত্তর প্রদেশ পুলিশের গুলিতে আহত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ভিডিওটি শেয়ার করে এক ব্যক্তি লিখেছেন, "শহবাজ, আরবাজ এবং ফয়জল, এই তিন শান্তির ছেলে একটি সাইকেল আরোহী হিন্দু মেয়ের ওড়না টেনেছিল বলে সাইকেল থেকে মেয়েটি পড়ে যায় এবং অন্য বাইকের ধাক্কায় মাথায় চোট পেয়ে মারা যায়। এইটুকু শান্তিপ্রিয় কাজ করার জন্য উত্তর প্রদেশ পুলিশ কি ভয়ংকর অবস্থা করেছে দেখুন। একদম কম্পোজিট কালচারের ***** করে দিয়েছে। ভাগ্যভালো পশ্চিমবঙ্গটা উত্তর প্রদেশ হয়ে যায়নি।"
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিয়োটির সঙ্গে আম্বেদকর নগর ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। এটি রাজস্থানের ভরতপুর জেলার একটি ভিডিয়ো, যেখানে কয়েকদিন আগে পুলিশ ও অপরাধীদের মধ্যে সংঘর্ষে তিন দুষ্কৃতী আহত হয়েছিল।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ভিডিয়োটির থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করতে আমরা সবার প্রথম ১৮ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে পোস্ট করা এই একই ভিডিয়ো দেখতে পাই। এই পোস্টে এটিকে রাজস্থানের ভরতপুরের ইতিহাসবিদ অজয় ঝামরি হত্যাকাণ্ডের অপরাধীদের ভিডিয়ো বলে উল্লেখ করা হয়। সেখানে এই ভিডিয়োটিকে অজয় ঝামরির হত্যা মামলায় পুলিশ এনকাউন্টারে আহত তিন অভিযুক্তের ভিডিয়ো হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
এই বিষয়টিকে সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চের সাহায্যে আমরা ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩-এ প্রকাশিত 'ETV ভারত' - এর একটি প্রতিবেদন পাই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজস্থানের ভরতপুর জেলায় পুলিশ ও অপরাধীদের মধ্যে সংঘর্ষে তিন অপরাধী গুলিবিদ্ধ হয়। তিন আসামিই ইতিহাস-শিক্ষক অজয় ঝামরি হত্যা মামলায় ওয়ান্টেড ছিল। পুলিশ যখন তাদের এক গাড়ি থেকে অন্য গাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন অপরাধীরা পুলিশের পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে দুষ্কৃতীরা পায়ে গুলিবিদ্ধ হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রতিবেদনে তিন অভিযুক্তের ছবিও ছাপা হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও এবং প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবির তুলনা করে আমরা দেখতে পাই যে তিন যুবকের চেহারা এবং পোশাক দুটিতেই দেখা যায়। উত্তর প্রদেশের আম্বেদকর নগরে ওড়না-কাণ্ডের প্রায় ১০ দিন আগে এই এনকাউন্টারটি হয়েছিল।
ইতিহাসবিদ অজয় ঝামরিকে ২৭ অগস্ট ২০২৩-এ ভরতপুরের হীরাদাস মোড়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১০ দিন পর পুলিশ দেরাদুন থেকে মামলায় জড়িত তিন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে।
দেরাদুন থেকে অপরাধীদের ভরতপুরে নিয়ে আসার সময় পুলিশের সঙ্গে তথাকথিত এনকাউন্টার হয়। উভয়পক্ষের গোলাগুলিতে জেলা স্পেশাল টিমের (ডিএসটি) ইন্সপেক্টর বুকে গুলিবিদ্ধ হলেও বুলেট প্রুফ জ্যাকেটের কারণে তার জীবন রক্ষা পায়। তিনজনই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। অপরাধীদের নাম তেজবীর, মুকেশ ও বান্টি।
এর থেকে স্পষ্ট হয় যে রাজস্থানে পুলিশ এনকাউন্টারে আহত তিন অভিযুক্তের ভিডিয়ো উত্তর প্রদেশের ওড়না-কাণ্ডের সঙ্গে জুড়ে শেয়ার করা হচ্ছে।
ভিডিয়োতে থাকা এই তিন যুবক হল শহবাজ, আরবাজ এবং ফয়জল যারা উত্তর প্রদেশের আম্বেদর নগরে ওড়না-কাণ্ডে অভিযুক্ত।
এই তিন যুবকের নাম তেজবীর, মুকেশ ও বান্টি যাদের রাজস্থানের ভরতপুরে ইতিহাসবিদ অজয় ঝামরি হত্যাকাণ্ডে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।