
সাম্প্রদায়িক হিংসা ও হানাহানিয় বিধ্বস্ত মুর্শিদাবাদ। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও প্রতিবেদন। যেখেনা কিছু মানুষকে দুই ব্যক্তিকে আটক করে রাখতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রতিবেদককে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশন সংলগ্ন রেললাইনের পাশে বোমা রাখার অভিযোগে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে সুতি থানার পুলিশ। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক হিংসার আবহে নিমতিতায় রেল লাইনের ধারে বোমা রাখতে গিয়ে ধরা পড়েছে দুই আরএসএস কর্মী মদন কুণ্ডু ও সাগর দাস।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “Breaking News.......... মুর্শিদাবাদের নিমতিতায় রেল লাইনের ধারে বোমা রাখতে গিয়ে ধরা পড়লো দুই আরএসএস কর্মী - মদন কুন্ডু ও সাগর দাস। চিনে নিন দেশ তথা বাংলার শত্রু কারা।” অন্যদিকে এই একই ভিডিও শেয়ার করে অন্য একজন লিখেছেন, “মুর্শিদাবাদে অশান্তির আবহে ভয়ংকর নাশকতা রুখে দিলেন এলাকার মানুষ মুর্শিদাবাদে নিমতিতায় রেল লাইনের ধারে বোমা রাখতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়লো দুই যুবক - মদন কুন্ডু ও সাগর দাস।..”
পুলিশ ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেককে জানিয়েছে যে, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের মুর্শিদাবাদের হিংসার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং ভিডিওটি ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর রেললাইনের পাথর কালো প্লাস্টিকের মধ্যে মুড়ে নিমতিতা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বোমা আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টার জন্য অভিযুক্ত দুই যুবককে গ্রেফতার করেছিল সুতি থানার পুলিশ।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল ভিডিওটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা সেটির ফ্রেমের উপরে ‘মুর্শিদাবাদ টুডে’ নামক একটি সংবাদমাধ্যমের নাম ও লোগো দেখতে পাই। সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালালে ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ‘মুর্শিদাবাদ টুডে’ নামক একটি ফেসবুক পেজে এই একই ভিডিও প্রতিবেদনটি পাওয়া যায়। যা থেকে এক হিসাবে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের মুর্শিদাবাদের হিংসার কোনও সম্পর্ক নেই।
এরপর উক্ত সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ করলে একাধিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সংবাদ প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশন সংলগ্ন রেল লাইনে বোমা রাখার অভিযোগ তুলে দুই যুবক মদন কুণ্ডু ও সাগর বিশ্বাসকে আটক করে সুতি থানার পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে পুলিশ তদন্ত করে দেখে, সেখানে কোনও বোমা ছিল না। বরং রেললাইনের পাথর কালো প্লাস্টিকের মধ্যে মুড়ে রেল লাইনের ধারে ফেলে রেখে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল অভিযুক্ত দুই যুবক। এরপর পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিযুক্তদের আটক করে সুতি থানার পুলিশ।
এরপর বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমরা মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার এসপি আনন্দ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের মুর্শিদাবাদের হিংসার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং ভিডিওটি ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সুতি থানার নিমতিতা রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় তোলা হয়েছিল। সেই সময় মদন কুণ্ডু ও সাগর বিশ্বাস নামক দুই মদ্যপ যুবক একটি বোমা আকৃতির কালো পলিথিন ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। যা দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয় এবং তারা সুতি থানার পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এবং আরপিএফ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখে, রেললাইনের পাথর কালো প্লাস্টিকের মধ্যে মুড়ে বোমার আকার দিয়ে ওই দুই যুবক স্থানীয়দের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিল। তবে পুলিশ সেখানে কোনও বোমা খুঁজে পাইনি।”
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে এরপর আমরা সুতি থানার তৎকালীন আধিকারিক বিজন রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “কলের জল নিয়ে প্রতিবেশিদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল অভিযুক্ত মদন কুণ্ডু ও সাগর বিশ্বাস। এরপর তারা রেললাইনের পাথর কালো প্লাস্টিকের মধ্যে মুড়ে প্রতিবেশিদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। তখন স্থানীয়রা সেটাকে বোমা ভেবে পুলিশকে খবর দেয়। আমরা তদন্তের স্বার্থে তাদের দু’জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করি। তবে আদালত থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।” বিষয়টি নিয়ে আজ তকের মুর্শিদাবাদের সাংবাদিক সব্যসাচী ব্যানার্জির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও আমাদের এই একই তথ্য প্রদান করেন।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, পুরনো অসম্পর্কিত ভিডিওর সঙ্গে সাম্প্রতিক মুর্শিদাবাদ হিংসার মিথ্যে সম্পর্ক জুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
ভিডিওতে সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক হিংসার আবহে নিমতিতায় রেল লাইনের ধারে বোমা রাখতে গিয়ে ধরা পড়েছে দুই আরএসএস কর্মী মদন কুণ্ডু ও সাগর দাস।
ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের মুর্শিদাবাদের হিংসার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং ভিডিওটি ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর রেল লাইনের পাথর কালো প্লাস্টিকের মধ্যে মুড়ে নিমতিতা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে ওই দুই যুবককে গ্রেফতার করেছিল সুতি থানার পুলিশ।