এবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বকেয়া ঋণের বোঝা সংক্রান্ত একটি দাবি ভাইরাল হল সোশ্যায় মিডিয়ায়।
বেশ কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি পোস্টকার্ড পোস্ট করে দাবি করেছেন, "দেশের সকল রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ঋণের পরিমাণ সর্বাধিক।"
পোস্টকার্ডটিতে লেখা রয়েছে, ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের ঋণের পরিমাণ ছিল ১,৮৭,৩৮৭.৪০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫,৩৫,৮৩৩.৮১ কোটিতে এসে দাঁড়াবে। ঋণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
একই দাবি সহ পোস্টের আর্কাইভ দেখতে পাবেন এখানে, এখানে ও এখানে।
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে এই পোস্টের দাবি বিভ্রান্তিকর।
সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট কী বলছে?
তদন্তে নেমে আমরা প্রথমে কিওয়ার্ড সার্চ করে খুঁজে দেখার চেষ্টা করি যে দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলগুলোর বকেয়া ঋণের পরিমাণ নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো কী বলছে।
দেখা যাচ্ছে, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর একটি রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে, সমস্ত রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গই সব থেকে বেশি 'দেনা' শোধ করে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সুদে হার সবচেয়ে বেশি। ৪,৬৮০ কোটি জন্য ৬.৯৯ শতাংশ সুদের হারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ঋণ শোধ করতে হয়।
এই প্রতিবেদনে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে যে আরবিআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী তামিল নাড়ু, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, পশ্চিমবঙ্গ ও রাজস্থানের নাম সর্বাধিক ঋণ গ্রহণকারী রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে। তবে এই তালিকাটি ক্রমানুসারে দেওয়া হয়েছে কিনা তা এই প্রতিবেদনে বলা হয়নি। ২০২১ সালের ৩০শে মার্চ এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল।
আরবিআই রিপোর্ট কী বলছে?
বিষয়টিকে আরও নিশ্চিত করতে এবার আমরা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইটে গিয়ে সরকারি রিপোর্ট খুঁজে বের করে দেখার চেষ্টা করি। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালের মার্চ মাস অবধি সবচাইতে বেশি ঋণ গ্রহণকারী রাজ্যর তালিকায় এক নম্বরে উত্তর প্রদেশের নাম রয়েছে। বাজেট এস্টিমেট অনুযায়ী, যোগী-রাজ্যের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৬,৬২,৮৯০.৫০ কোটি।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মহারাষ্ট্র (৫,৩৬,৮৯১ কোটি) ও তামিলনাড়ু (৫,১২,১৬০.৫০ কোটি)। পশ্চিমবঙ্গের স্থান চার নম্বরে। ঋণের পরিমাণ ৪,৯০,৬৪৭.৩০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ, দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলোর থেকে পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া ঋণের পরিমাণ সবচাইতে বেশি বা পশ্চিমবঙ্গ সমস্ত রাজ্যের চাইতে সবচেয়ে বেশি অঙ্কের টাকা ধার নিয়েছে - এই দাবি সত্যি নয়।
২০১১ সালে ঋণের পরিমাণ কত ছিল?
এই ফেসবুক পোস্টে আরও একটি দাবি করা হয়েছে। ২০১১ সালে, অর্থাৎ যে সময়ে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে, পশ্চিমবঙ্গের ঋণের পরিমাণ ছিল ১,৮৭,৩৮৭.৪০ কোটি টাকা।
আরবিআই রিপোর্ট অবশ্য অন্য কথা বলছে। দেখা যাচ্ছে, ২০১০-১১ অর্থবর্ষের শেষে এই রাজ্যের ঋণের পরিমাণ ছিল ১,৯২,৯১৯,৯০ কোটি টাকা।
যদিও বামফ্রন্ট দাবি করে যে সরকার পরিবর্তনের সময়ে রাজ্যের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১.৮৭ কোটি টাকা ছিল, হিন্দুস্তান টাইমস-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী সেই সময়ে ঋণের পরিমাণ ছিল ১.৯৩ কোটি টাকা। যা কার্যত আরবিআই-এর রিপোর্টের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
সুতরাং, এই ফেসবুক পোস্টের দাবি যে বিভ্রান্তিকর তা বলাইবাহুল্য।
দেশের সকল রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ঋণের পরিমাণ সর্বাধিক।
আরবিআই রিপোর্ট অনুযায়ী বকেয়া ঋণ সবচাইতে বেশি উত্তরপ্রদেশের। ঋণের পরিমাণ ৬,৬২,৮৯০.৫০ কোটি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মহারাষ্ট্র (৫,৩৬,৮৯১ কোটি) ও তামিলনাড়ু (৫,১২,১৬০.৫০ কোটি)। পশ্চিমবঙ্গের স্থান চার নম্বরে। ঋণের পরিমাণ ৪,৯০,৬৪৭.৩০ কোটি টাকা।