
সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থ নিয়ে এ বার ফের একটি দাবি ভাইরাল হল সোশ্যাল মিডিয়ায়। বেশ কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি স্ক্রিনশটের মাধ্যমে একটি নামের তালিকা পোস্ট করছেন। যেখানে সোনিয়া গান্ধী থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধী, শরদ পওয়ার, পি চিদম্বরম-সহ মোট ২৪ জন বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর নাম রয়েছে।
এই পোস্ট শেয়ার করে নেটিজেনদের একাংশ লিখছেন, "উইকিলিকস সুইস ব্যাঙ্কে কালো টাকা রাখার ভারতীয়দের প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রথম ২৪ টি নাম নিম্নরূপ।" এই খবর এখনও পর্যন্ত 'অজানা' বলেই দাবি করা হচ্ছে। ভাইরাল হওয়া ছবিতে প্রত্যেকটি নামের পাশে কয়েক লক্ষ কোটির অঙ্ক লেখা।
ফেসবুকে এই দাবির সপক্ষে করা পোস্টের আর্কাইভ এখানে, এখানে ও এখানে দেখতে পাবেন।
ইন্ডিয়া-টুডের অ্যান্টি ফেক-নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) তদন্তে নেমে দেখতে পায়, নেটাগরিকদের একাংশের পক্ষ থেকে যে দাবি করা হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর এবং অসত্য।
ব্রিটেনের 'উইকিলিকস' নামক এই সংস্থা তদন্ত এবং অনুসন্ধান করে বিভিন্ন গোপন নথি প্রকাশ করার জন্য বিখ্যাত। তাই দাবির নেপথ্যে সত্যতা যাচাই করতে আমরা সবার প্রথম উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে যাই। উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে গিয়ে এই ধরনের কোনও তালিকা তাদের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে কিনা সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখি। সেখানে উঠে আসে, উইকিলিকসের পক্ষ থেকে শেষ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছিল গত ৫ অগস্ট 'দ্য ইনটলারেন্স নেটওয়ার্ক' শীর্ষক-সহ। যা ছিল মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো বিষবাষ্প নিয়ে। এতে একটা বিষয় স্পষ্ট হয় যে, সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনও রিপোর্ট বা তালিকা উইকিলিকসের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়নি।
এরপর উইকিলিকস, সুইস ব্যাঙ্ক ও ভারতীয়দের নাম সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ শুরু করি আমরা। তখন ২০১১ সালে ওই সংস্থার পক্ষ থেকে করা একটি টুইটে নজরে পড়ে। যে টুইটটি বিভ্রান্তি দূর করার জন্য করেছিল কর্তৃপক্ষ। সেই টুইটে পরিষ্কারভাবে বলা হয়, কালো টাকা সংক্রান্ত ভারতীয় নামের কোনও তালিকা উইকিলিকসের তরফে প্রকাশ করা হয়নি।
WARNING: WikiLeaks and Indian black money: The following is a FAKE image and never appeared on WikiLeaks http://t.co/Dwbpc3P
— WikiLeaks (@wikileaks) August 5, 2011
তখনই ভাইরাল ওই ফেসবুক পোস্টের সত্যতা নিয়ে আমাদের সংশয় আরও গভীর হয়। তাই আমরা সুইস ব্যাঙ্ক ও ভারতীয়দের নামের কিওয়ার্ড ব্যবহার করে শুধুমাত্র ২০২১ সালের ফিল্টারে ফেলে তা সার্চ করি। সেই সময় আমাদের হাতে যা তথ্য উঠে আসে তাতে ধোঁয়াশা কার্যত কেটে যায়।
গত ১১ অক্টোবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার এই প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়, তথ্য আদান-প্রদানের চুক্তিতে সুইস ব্যাঙ্ক তৃতীয় দফায় কালো টাকা সংক্রান্ত তথ্য ভারত সরকারকে দিয়েছে। যেখানে ৯৬ টি দেশের প্রায় ৩৩ লক্ষ অ্যাকাউন্টের হদিশ রয়েছে। কিন্তু, সুইৎজারল্যান্ডের ফেডারেল ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) সেই ৯৬ টি দেশের নাম বা অ্যাকাউন্টের মালিকদের নাম প্রকাশ্যে আনেনি।
এমনটা নয় এই দাবি প্রথমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় চাউর হয়েছে। আগে ইংরেজি ও হিন্দিতেও এমন পোস্টকার্ড ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেগুলোও যে আদতে ভুয়ো ছিল তা দ্য কুইন্টের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়। এবার বাংলাতেও একই ধরনের দাবি করা হচ্ছে।
সুতরাং এ কথা বলাই যায়, নেটিজেনদের একাংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় যে দাবি করছেন তা ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর।
সুইস ব্যাঙ্কে কালো টাকা থাকা ২৪ জন ভারতীয়ের নামের তালিকা প্রকাশ করল উইকিলিকস।
উইকিলিকসের তরফে এমন কোনও তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তথ্য আদানপ্রদানের ভিত্তিতে চলতি মাসেই সুইস ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কালো টাকা সংক্রান্ত তৃতীয় দফায় তথ্য ভারত সরকারকে দিয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনও নাম প্রকাশ করা হয়নি।