
প্রতিবছরই বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারতের প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। অনেক সময় এইসব বন্যার কারণ হিসাবে ভারতের বাঁধ থেকে জল ছেড়ে দেওয়াকে দায়ী করে থাকেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা। আর জল থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের বাঁধ সংলগ্ন বাংলাদেশের অংশে নতুন করে বাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছে দেশটির বহু সংখ্যক নাগরিক।
আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যাতে কোনও একটি স্থানে জেসিবি ও বড় বড় মেশিনের সাহায্যে জলের উপরে বাঁধ বা ব্রিজ তৈরি করতে দেখা যাচ্ছে কিছু শ্রমিককে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিকল্প হিসাবে এই বাঁধ থেকে কিছুটা দূরে নতুন একটি বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূস সরকার।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটির ফ্রেমের উপরে নিজের একটি ভিডিও যুক্ত করে লিখেছেন, “ফারাক্কা বনের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।” (সব বানান অপরিবর্তিত) পাশাপাশি ভিডিওতে ওই ফেসবুক ব্যবহারকারীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “অবশেষে ডক্টর ইউনূসের মিশন শুরু হয়ে গেছে। ফারাক্কা বাঁধের সাথে আরেক ফারাক্কা বাঁধ উঠাইতেছে বাংলাদেশ।”
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, বাংলাদেশের তরফে ফারাক্কার বিকল্প হিসাবে নতুন বাঁধ নির্মাণের দাবিটি ভিত্তিহীন। ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের ইউনূস সরকারের নতুন বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত নয়। ভিডিওটি অন্ততপক্ষে ২০২২ সাল থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিকল্প হিসাবে এই বাঁধ থেকে কিছুটা দূরে বাংলাদেশ সরকার যদি নতুন কোনও বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে থাকে তাহলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই প্রথম শ্রেণির ভারতীয় ও বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমগুলিতে প্রকাশিত হবে। কিন্তু আমরা আমাদের অনুসন্ধানে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি যা থেকে এর সত্যতা প্রমাণ হয়।
এরপর ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর learningciviltechnolog নামক ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে ইন্সটাগ্রামে প্রাপ্ত ভিডিওর ফ্রেমের সঙ্গে হুবহু মিলও লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটিতে জলের মধ্যে কফারড্যাম তৈরির দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। যা সাধারণত কোনও ব্রিজ তৈরির ক্ষেত্রে করা হয়।
যদিও ভাইরাল ভিডিওটির মূল উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এই সংক্রান্ত পরবর্তী অনুসন্ধানে ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই একই ভিডিও আমরা একটি ফেসবুক প্রোফাইলেও খুঁজে পাই। যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের তো নয়ই এবং এর সঙ্গে বাংলাদেশের ইউনূস সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে মহম্মদ ইউনূস গত বছরের আগস্ট মাসে নিজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ভিডিওটি তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হওয়ার অনেক আগে থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরনো অসম্পর্কিত ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিকল্প হিসাবে নতুন বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূস সরকার।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিকল্প হিসাবে এই বাঁধ থেকে কিছুটা দূরে নতুন একটি বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূস সরকার।
ভাইরাল ভিডিওটি ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিকল্প হিসাবে বাংলাদেশের ইউনূস সরকারকে নতুন বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত নয়। ভিডিওটি অন্ততপক্ষে ২০২২ সাল থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে।