
বঙ্গদেশে ধীর গতিতে মৌসুমী বায়ুর প্রবেশ শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গে ভারী বর্ষার জেরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়া একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে যেখানে একটি বাঁধ বা জলাধার থেকে হু-হু করে জল বেরোতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে এটিকে মালদা ও মুর্শিদাবাদের মাঝে থাকা ফারাক্কা বাঁধের দৃশ্য বলে দাবি করা হয়েছে। ভিডিওটির সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "2022 সালের বন্যা কেও হার বানাভে 2024 সালের বন্যা এই সেই ফারাক্কা যার কারনে বন্যার ভয়াবহ অবস্থা। সিলেট বাসীরা অনেক খারাপ অবস্থায় আছে তাদের জন্য দোয়া করবেন।" (ক্যাপশনের সকল বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, প্রথমত এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়। দ্বিতীয়ত, এটি ফারাক্কা বাঁধের নয়।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
সবার প্রথম আমরা ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভিডিওটির উৎস খোঁজার চেষ্টা করি। রিভার্স সার্চের সাহায্যে আমরা সত্যম শর্মা নামক এক ব্যক্তির ইউটিউব চ্যানেলে আসল এবং পূর্ণাঙ্গ ভিডিওটি খুঁজে পাই।
ভিডিওটির ক্যাপশনে ওই ব্যক্তি লেখেন, এটি ঝাড়খণ্ডের পাঞ্চেৎ জলাধারের ভিডিও। ১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি প্রায় ১২ লাখ মানুষ দেখেছেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে তিনি লেখেন যে পাঞ্চেতে আচমকা অপ্রত্যাশিত জল ছাড়ার সময় তিনি এই ভিডিওটি ধারণ করেন।
এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে ফারাক্কা এবং পাঞ্চেৎ জলাধারের মধ্যে কিছু গঠনগত পার্থক্য রয়েছে যার মাধ্যমে খুব সহজেই উভয়ের পৃথকীকরণ করা সম্ভব। যেমন, ফারাক্কা বাঁধে মোট ১০৯টি লকগেট রয়েছে এবং এটি গঙ্গা নদীর মাঝামাঝি অবস্থিত।
কিন্তু, পাঞ্চেৎ বাঁধে মোট ৩০টি লকগেট রয়েছে এবং আকারে ও আকৃতিতে এটি ফারাক্কার তুলনায় অনেকটাই ছোট। সেই সঙ্গে, পাঞ্চেৎ বাঁধ অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডে। দুটি বাঁধের ছবি একসঙ্গে নিয়ে তুলনা করলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে দুটি বাঁধ গঠন ও অবস্থানগতভাবে সম্পূর্ণ আলাদা।
অন্যদিকে, ওপার বাংলার সিলেটে এ বছরও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের একাধিক প্রথম সারির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরাক উপত্যকা অর্থাৎ অসম ও মেঘালয় এলাকায় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হওয়া অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত পরোক্ষে এই বন্যার জন্য দায়ী। ফারাক্কা বাঁধ থেকে জল ছাড়া বা পাঞ্চেৎ বাঁধের জলের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এমন কথা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।
ফলে বলাই যা যে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে, তা আদতে ভিত্তিহীন।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ফারাক্কা বাঁধ থেতে কীভাবে জল ছাড়া হচ্ছে। যে কারণে ২০২২ সালের থেকেও ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে সিলেটে।
ভিডিওটি ফারাক্কা বাঁধের নয়, বরং ঝাড়খণ্ডের পাঞ্চেৎ বাঁধের। এবং ভিডিওটি অন্তত সাত বছর পুরনো।