চা-বাগানের কর্মী থেকে মন্ত্রী। ভাবতে একটু অবাক লাগলেও বিষয়টি সত্যি। কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পর চা-শ্রমিক আন্দোলনে এখনও যুক্ত তিনি। তিনবারের বিধায়ক। এখন রাজ্যের মন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করলেন।
মা-বাবা মারা যাওয়ার পর তখন পরিবারে বুলু বাবু একা। তখন তাঁরর আত্মীয়রা বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবলেও বাধা আর্থিক অবস্থা। ফলে বিয়ের অনুষ্ঠান করা সাধ্যের বাইরে। তাই বিয়ের অনুষ্ঠানের তোয়াক্কা না করেই সোজা বাজারে। সেখান থেকে শাড়ি কিনে হবু বউকে পরিয়ে হাসখাওয়া চা-বাগান থেকে সহধার্মিনীকে ডুয়ার্সের রাঙামাটি চা-বাগানে নিয়ে আসেন। এবং নতুন জীবনযাত্রা শুরু করেন।
বুলুবাবু তখন চা-বাগানের সামান্য কর্মী। সাপ্তাহিক বেতন ৭ টাকা। পরে বেড়ে হল ৯ টাকা। কিন্তু আজও তাঁর সহধার্মিনীর আক্ষেপ যায়নি। কেন তাঁদের বিয়ে হল না মহা ধূমধাম করে? বুলুবাবু চুপ করে পার্শ্ববর্তী সাইলি চা-বাগানের মন্দিরে গিয়ে নিঃশব্দে সিঁদূর লাগিয়ে বিয়ে সেরেছিলেন। কিন্তু সামাজিক অনুষ্ঠান ও খানা পিনা? এতদিন পর লোকে কি ভাববে, তাই ভেবে আজও অনুষ্ঠান অধরা রইল।
আবার আক্ষেপের জীবনে যেন এক নতুন আক্ষেপ আজ তার সামনে উপস্থিত! আজ বুলুবাবুর মেয়ের বিয়ে। সামাজিক ভাবে অতিমারী সময় খুব কম সংখ্যক লোককে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাড়িতে ছোট করে বিয়ের অনুষ্ঠান। মেয়েকে আশীর্বাদ করে কাল কাক ভোরে বিদায়। হঠাৎ ফোন নবান্ন থেকে। আপনি চলে আসুন কলকাতায়। আগামীকাল মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে হবে। এই কথা শুনে একদিকে আত্মবিভর, অন্যদিকে মেয়ের বিয়ে ও আশীর্বাদ প্রদান। অবশেষে মানুষের কাজকে অগ্রাধিকার দিয়ে বুলুবাবু রবিবর রাতে ডুয়ার্স থেকে রওনা দিয়ে সোমবার সকালে কলকাতায় হাজির।
সামাজিক জীবনকে সামনে রেখে এক বিরাট দায়িত্ব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চলেছেন এই তিনি। এমনই মনে করছেন স্থানীয় মানুষজন। সেই বাগানের বাগানবাবু দিলীপ দত্তর কথায়, বুলুকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। চাকরি জীবনে বুলু সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলত। বিধায়ক হওয়ার পরও আমাদের যোগ্য সম্মান দিয়ে এসেছে। আশা করি মন্ত্রী হয়েও সেই সম্মান দেবে। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার খবর শুনে সবাই আপ্লুত।