রাজ্যের মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে কাজে যোগদানের নির্দেশ দিয়ে চিঠি। মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠাল কেন্দ্র। মুখ্যসচিবকে ছেড়ে দিতে রাজ্যকে চিঠি পাঠাল কেন্দ্র। ৩১ মে সকাল ১০টায় দিল্লির নর্থ ব্লকে রিপোর্ট করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্যাবিনেটে নিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্দেশ কেন্দ্রের। সম্প্রতি রাজ্য সরকার আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক্সটেনশন চেয়েছিল। ৩১ মে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে ডেকে পাঠাল কেন্দ্র।
ক্যাবিনেট নিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারেই এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে এই চিঠিতে। প্রসঙ্গত গত বছর রাজীব সিনহার কাছ থেকে মুখ্যমসচিবের দায়িত্ব নেন আলাপন। তবে আগামী ৩১ মে এই পদে তাঁর কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দক্ষ প্রশাসক হিসেবে পরিচিত এই IAS আধিকারিককে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-৩ সরকারে আরও কিছুদিন রেখে দেওয়ার জন্য সম্প্রতি রাজ্যের তরফে অনুরোধ করা হয়। যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ১ জুন থেকে। কিন্তু তার আগেই মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে চিঠি দিল কেন্দ্র। কিন্তু কে এই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়? কেনও তাঁকে ঘিরে এই নতুন চাপানউতোর? দেখে নেওয়া যাক এক নজরে---
মমতা ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৮৭-র ব্যাচের IAS অফিসার। রাজ্যে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পদে কর্মরত আমলাদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে সিনিয়র। চাকরি জীবনের শুরু থেকেই সামলেছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব। দুই ২৪ পরগনার জেলা শাসক থেকে কলকাতা পুরসভার কমিশনারও ছিলেন তিনি। এছাড়াও পরিবহণ দফতরের প্রধান সচিব পদে কাজ করেছেন তিনি। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রধান সচিবের দায়িত্বও সামলেছেন। পরে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব হন। দীর্ঘদিন তিনি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক হিসেবে কাজ করেছেন।
চাকরি জীবনের শুরুতে মহকুমাশাসক, আন্ডার সেক্রেটারি এবং একাধিক জেলার জেলাশাসক হিসেবে কাজ করেছিলেন আলাপন। কলকাতা পুরসভার কমিশনার ছাড়াও পুর, পরিবহণ, শিল্প, এসএসএমই-এর মতো দফতরে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। এখন স্বরাষ্ট্রের সঙ্গে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরেরও দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন আলাপনবাবু। বর্তমান সরকারের সময় কিছু দিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বও সামলেছিলেন তিনি। প্রশাসনের অন্দরের ব্যাখ্যা, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং সরকারকে বহু বার নানা সমস্যা থেকে বার করে আনেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব কাছের মানুষ বলেই তাঁকে মনে করা হয়।
১৯৬১ সালে কলকাতা শহরেই জন্ম আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবেই ছোটো থেকে পরিচিত তিনি। সেই সঙ্গে চাকরি জীবনের শুরু থেকেই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে এসেছেন আলাপনবাবু। তাঁর স্ত্রী সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালের উপাচার্য। সম্প্রতি আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাই বিশিষ্ট সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছেন। তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই কোভিডে আক্রান্ত ছিলেন।
শুক্রবার তাঁকে পাঠানো কেন্দ্রের চিঠিতে বলা হয়েছে, অ্যাপয়েনমেন্টস অফ ক্যাবিনেট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কাজ যোগ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চিঠিতে রাজ্য সরকারকে, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে অবিলম্বে অব্যহতি দেওয়ারও অনুরোধ করা হয়েছে।
একাধিক বিষয় নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত যখন ক্রমেই বেড়ে চলেছে তখন এক্সটেনশন দেওয়ার পরও এভাবে তাঁকে দিল্লিতে ডেকে নেওয়ায় নতুন করে বিতর্ক দানা বাধতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে আলাপনবাবু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ইয়স বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে রয়েছেন। প্রসঙ্গত আগামী ৩১ মে মুখ্যসচিবের পদে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু, বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে তাঁকে আরও তিন মান এই দায়িত্বে বহাল রাখার জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানায় রাজ্য। জানা যায়, কেন্দ্র গত ২৪ মে সেই আর্জিতে মঞ্জুরিও দেয়। কিন্তু তারপরই হঠাৎ আজ এই সিদ্ধান্ত বদলের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখছেন বিশ্লেষকরা।