কলকাতার নাম শুনলেই যে কয়েকটি নাম সবার প্রথমে মাথায় আসে, তার মধ্যে হাওড়া ব্রিজ অন্যতম। হাওড়া ব্রিজ! আজ তার জন্মদিন। তিলোত্তমার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই গত ৭৭ বছর ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
কলকাতা ও হাওড়া শহরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সেতুগুলির মধ্যে অন্যতম হাওড়া সেতু, প্রথম ১৮৭৪ সালে নির্মিত হয়।
১৮৫৫-৫৬ সালে ব্রিটিশ প্রশাসন প্রথম একটি সেতু তৈরির কথা ভেবেছিলেন। সেই মতো তৈরি হয়েছিল কমিটিও। সেই সময়ে নদীর দু'পাড়েই জাঁকিয়ে বসেছিল ইংরেজরা। তৈরি হচ্ছিল নতুন নতুন কারখানা। তাই হাওড়া ও কলকাতার মধ্যে একটি সেতু প্রয়োজনীয় ছিল।
সেতু কমিটি চর্চা শুরু করলেও, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বছর চারেক পরে ১৮৫৯-৬০ সালে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর ১৮৬২ সালে বাংলার সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানির চীফ ইঞ্জিনিয়ার জর্জ টার্নবুলকে হুগলি নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলায়, তিনি প্রয়োজনীয় নকশা উপস্থাপন করেন। কিন্তু সে সময়ে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়নি।
এর ঠিক আট বছর পর তৎকালীন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর সিদ্ধান্ত নেন, সেতু নির্মাণের যাবতীয় দায়িত্ব সরাসরি সরকারের হাতে থাকবে না। ফলস্বরূপ ১৮৭১ সালে তৈরি হয় একটি ট্রাস্ট।
সেই ট্রাস্টের অধীনেই হাওড়ার প্রথম ভাসমান সেতু নির্মাণের ভার দেওয়া হয়। নদীর ওপর ছিল ভাসমান সেতু। নিচে নৌকা, উপরে পাটাতন। মাঝ বরাবর খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা। জাহাজ-স্টিমার চলাচলের জন্য সেতুর মাঝখানে ২০০ ফুট খুলে দেওয়া হতো।
১৮৭১ সালে বাংলার ছোট লাট যখন 'হাওড়া ব্রিজ অ্যাক্ট' তৈরি করেছিলেন, তখনই সেতু পেরোতে টোল বসানো হয়েছিল। টোলের টাকাতেই চলত সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। ১৮৭১-এর আইন হওয়ার পর স্যর লেসলিকেই সেতু নির্মাণের ভার দেওয়া হয়।
১৮৭৪ সালে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় সেই সেতু। অর্থাৎ ১৮৫৫ সালে ব্রিটিশ প্রশাসন যা পরিকল্পনা করেছিল, তা রূপায়িত হল ১৯ বছর পর।
১৯৬৫ সালের ১৪ জুন সেতুটির নাম পরিবর্তন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে রবীন্দ্র সেতু রাখা হয়। রবীন্দ্র সেতু বঙ্গোপসাগরীয় প্রবল ঝড়ঝঞ্জাগুলি সহ্য করতে সক্ষম।
শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও হাওড়া ব্রিজে একটিও নাট-বল্টু নেই। লোহাকে বেঁকিয়ে নাট- বল্টুর মতো করে ব্যবহার করা হয়েছে নির্মাণের সময়ে।
হাওড়া ব্রিজ তৈরিতে লেগেছিল প্রায় ২৬৫০০ টন লোহা। যার মধ্যে ২৩০০০ টন লোহাই এসেছিল টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি থেকে।
হাওড়া ব্রিজে নেই কোনও পিলার। শুধুমাত্র দুই মাথায় সাপোর্ট রয়েছে। ফলে একেবারে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে ব্রিজ।