মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবে মঞ্চে উঠেছেন। বক্তব্য শুরু করেছেন। আর তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুরু ব্যাপক বৃষ্টি। তবে বক্তব্য থামালেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তার মধ্যেই বক্তব্য রাখতে শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন বৃষ্টি হবেই। এই বৃষ্টি শুভ। শহিদদের চোখের জল। তারা আশীর্বাদ করছেন আকাশ থেকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভা থেকে বলেন, 'আমরা যত জিতব, তত আমাদের দায়িত্ব বাড়বে। আমরা যত জিতব, তত মানুষের কর্মী হতে পারব। তৃণমূল কংগ্রেস একটা সেবার কাজকর্মের প্ল্যাটফর্ম। আমরা বিত্তবান চাইনা, বিবেকবান চাই।'
তাঁর আরও সংযোজন, 'আমরা দায়িত্বে আসার কয়েকবছর আগেও বাংলার দারিদ্র সীমার নীচে ছিলেন ৫৭.৬০ শতাংশ মানুষ। এখন মাত্র ৮ পার্সেন্ট। ওটাও আমরা জিরো করে দেব।'
'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, যুবশ্রীর জন্য আমরা ৬০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। স্বাস্থ্যসাথীতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি চিকিৎসা দিয়েছি। যারা গুলির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে, তাঁরা বৃষ্টিতে কী ভয় পাবে। ভয় পাবেন না।'
বাংলাদেশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, 'আমি বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতে পারি না। কারণ ওটা একটা আলাদা দেশ। যা বলার ভারত সরকার বলবে। এটুকু বলতে পারি, অসহায় মানুষ যদি বাংলার দরজা খটখটানি করলে আমরা নিশ্চিত আশ্রয় দেব।'
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগে বক্তব্য রাখেন অখিলেশ যাদব। তিনি বলেন, 'বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে কলকাতায় এসেছি। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দিদির নিবিড় সম্পর্ক।' তাঁর কথায়, 'আজ আমি এখানে। আপনারা রয়েছে। এটা মনে করায় যে দিদির মনে কর্মীদের জন্য কতটা সম্মান।’
দিল্লির সরকারের সমালোচনা করে অখিলেশ আরও বলেন, 'দিল্লিতে যাঁরা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাঁরা তা ধরে রাখার জন্য শহিদ ধার নেন। যা খুশি তা-ই করতে পারেন। যখন জনতা জেগে ওঠে, এই সব লোকের মিথ্যা প্রচার ধাক্কা খায়। হতাশ হয়।'
অখিলেশ যাদবের আগে মঞ্চে বক্তব্য দিতে উঠেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধির ইস্যুতে কথা বলেন তিনি।
২০২৬ বিধানসভা ভোটের সুর ও বেঁধে দেন অভিষেক। বলেন, 'নিজের নির্বাচনে পরিশ্রম করব, আর লোকসভা-বিধানসভায় দলের কাজ করব না, সেটা হবে না। যাঁরা এমনটা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
২০২৬ ভোটের প্রসঙ্গে অভিষেকের সাফ বার্তা, যাঁরা দলের কাজ করেন তাঁরাই অগ্রাধিকার পাবেন। বলেন, '২৬-এর জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। পঞ্চায়েত ও পুরসভায় যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের কর্মীদের কথা ভাবতে হবে।'
'নিজের কথা ভাবলে চলবে না। আমি বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনের সময় পর্যালোচনা বৈঠক করেছি। আমি বলেছি, দল ফলের পর কার কোন ভূমিকা ছিল, তা খতিয়ে দেখা হবে।'
লোকসভা ভোটের পর কেন তিনি জনসভা থেকে বিরত ছিলেন সেকথাও জানান অভিষেক। বলেন, ''আমি এই যে এক-দেড় মাস কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আমাকে দেখেননি আপনারা। তার কারণ আমি পর্যালোচনায় ব্যস্ত ছিলাম। আগামী ৩ মাসে এর ফল দেখবেন। আমি এক কথার ছেলে, কথা দিয়ে কথা রাখি।'
নিট কেলেঙ্কারি কাণ্ডে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেন অভিষেক। বলেন, টেট কেলেঙ্কারিতে যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফকার হন তাহলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে কেন গ্রেফতার করা হবে না?
অভিষেক আরও বলেন, 'এবার আমরা ২৯ আসনে জিতেছি। আর তিনটে আসন ১৫-১৬ হাজারের ব্যবধানে হেরেছি। রাজ্যসভায় ১৩ জন সাংসদ। ২৯ আর ১৩ মিলিয়ে ৪২।'
'আপনারা গর্ব অনুভব করবেন, ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম দলের নাম তৃণমূল কংগ্রেস। যারা বলেছিল, তৃণমূলকে সাফ করে দেব, তারা নিজেরাই সাফ হয়ে গিয়েছে।'
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগে মঞ্চে বক্তব্য রাখেন ফিরহাদ হাকিম, নয়া বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুর ও কোচবিহারের সাংসদ।
এদিন সকাল থেকেই কলকাতা যেন ধর্মতলামুখী ছিল। কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা।
প্রসঙ্গত, ২১ জুলাইয়ের দিন দক্ষিণবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। তা সত্যি করে বৃষ্টি নামে জেলায় জেলায়।
কোনও কোনও জেলায় তো গতরাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। তবে তাতে কর্মী-সমর্থকদের আসার ক্ষেত্রে ভাঁটা পড়েনি।