আগামী দিনে মাছে ভাতে বাঙালির পাতে কি আদৌ থাকবে ইলিশ , মৌরলা, পুঁটি, চাঁদা-সহ বিভিন্ন কার্প প্রজাতির মাছ? এই প্রশ্নই তুলে দিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য আশিস কুমার পানিগ্রাহীর গবেষণা।
নদী দূষণ নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। আর সেই গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই গবেষক জানিয়েছেন, অতিমাত্রায় দূষণের জেরে নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। দক্ষিণবঙ্গের যে অংশে গঙ্গা প্রবাহিত হয়েছে এবং তার থেকে বিভিন্ন যে সব শাখানদী সাগরে মিশেছে তা অতিমাত্রায় দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আর তার জেরে সংকটে পড়ছে মৎস্যসমাজ। এই দূষণ ও তার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে 'ডক্টরেট অফ সায়েন্স' অর্জনকারী আশিস কুমার পানিগ্রাহীর আরও বক্তব্য, মাছ তার প্রজনন ক্ষমতা ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে। ফলে অচিরেই হয়তো হারিয়ে যাবে অনেক মাছ। তাদের নাম শুধু রয়ে যাবে বইয়ের পাতায়।
শুধু আশিসবাবুর গবেষণা নয়, ২০১৯ সালেও উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২০টি নদীতে যৌথ ভাবে একটি সমীক্ষা চালায় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। আর সেই গবেষণায়, রাজ্যের ২৪১টি প্রজাতির মাছ সম্পর্কে বিপদ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছিল। গবেষকরা জানিয়েছিলেন, ওই প্রজাতিগুলি লুপ্ত হওয়ার পথে।
সেই সমীক্ষায় আরও জানানো হয়েছিল, দূষণের জেরে কয়েক বছরের মধ্যে ছোটো পুঁটি, মৌরলা, খলসে, চ্যালা, প্যাঁকাল, খয়রার মতো বেশ কিছু মাছ হারিয়ে যাবে। বিপন্নের তালিকায় নাম ছিল মহাশোল, ভেটকি, বোয়াল, এমনকী ইলিশেরও।
সমীক্ষকরা জানিয়েছিলেন, নদীতে প্রতিমা বিসর্জন ও শহরের আবর্জনা ফেলা এই মাছেদের বিলুপ্তির কারণ বলে জানানো হয়েছে। এতে নষ্ট হচ্ছে নদীর জীববৈচিত্র্য।
আশিসবাবু এই নিয়ে আরও বিস্তারিত বলেন, 'কলকারখানার বর্জ্য, বিভিন্ন শহরের দূষিত জল, কৃষিকাজের বর্জ্য , কাপড় কারখানার গরম জল, ইট ভাটার বর্জ্য, পেট্রো কেমিক্যাল বর্জ্য ও পৌর এলাকার বর্জ্য লাগাতার শাখানদীগুলির মাধ্যমে বাহিত হয়ে এসে গঙ্গায় মিশছে। এতে জলের তাপমাত্রা বাড়ছে, কমছে অক্সিজেনের মাত্রা।'
'জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য বায়োলজিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে। গঙ্গাসহ জলঙ্গি, বাঁকা, দামোদর, রূপনারায়ণ, চূর্ণী, কাঁসাই ও সরস্বতী নদীর দূষণ ও তাঁর জেরে জীব বৈচিত্রের প্রভাব পড়েছে। আগে যেসব মাছ সহজেই নদীতে পাওয়া যেত, এখন সেসব পাওয়া যায় না।'
আশিসবাবুর দাবি, সেই কারণেই গঙ্গা-হুগলি-ভাগীরথী নদী তীরবর্তী ধীবরদের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষই আজ পেশা বদলেছেন। যার ফলে আগামীতে মাছের জোগান আরও কমবে।'