scorecardresearch
 

হুঙ্কার দিচ্ছেন অভিষেক-মুকুলরা, ঘর বাঁচাবেন কী করে দিলীপ-শুভেন্দুরা?

গত সপ্তাহের স্মৃতি যত দ্রুত সম্ভব ভুলতে চাইবেন দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীরা। গত সপ্তাহের সোমবার বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, মঙ্গলবার বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, শনিবার কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায় তৃণমূলে যোগ দেন। চার বিধায়কের তৃণমূলে যোগদান ও দুই বিধায়কের পদত্যাগের ফলে আদতে বাংলার বিধানসভায় বিজেপির সদস্য সংখ্যা এখন কমে ৭১। এখনও যেভাবে বিজেপির বিধায়কদের মধ্যে বেসুরোর সংখ্যা বাড়ছে তাতে অশনি সংকেত দেখছে পদ্মশিবির।

Advertisement
BJP ঘর বাঁচাবে কী করে? BJP ঘর বাঁচাবে কী করে?
হাইলাইটস
  • বিধানসভার ভোট মেটার পর মাত্র ৪ মাস হয়েছে
  • আর তাতেই গেরুয়া শিবির ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার ঢল
  • বিধায়ক ধরে রাখাই এখন বিজেপি শিবিরের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে


বিধানসভার ভোট মেটার পর মাত্র ৪ মাস হয়েছে। আর তাতেই গেরুয়া শিবির ছেড়ে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন ৪ জন বিধায়ক। যাঁদের মধ্যে আবার স্বয়ং রয়েছেন হেবিওয়েট মুকুল রায়। তবে মুকুল দল বদলানোর আগেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, বিজেপির একাধিক বিধায়ক তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন। তিনি যে ফাঁকা আওয়াজ দেননি তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। আর এই আবহেই ফের একবার বোমা ফাঁটেয়েছেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। সোমবার দিল্লির ইডি দফতরে জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বেরিয়ে অভিষেক দাবি করেছেন, বিজেপির ২৫ জন বিধায়ক লাইনে রয়েছেন। ঘটনাচক্রে মঙ্গলবার একই দাবি করেছেন মুকুল রায়ও। তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতার এমন হুঁশিয়ারিতে এখন বিধায়ক ধরে রাখাই গেরুয়া শিবিরের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

অভিষেকের বক্তব্য
গত জুন মাসে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়ের তৃণমূলে যোগদান দিয়ে যা শুরু হয়েছিল উলট পুরাণ। তার পর গেরুয়া শিবির থেকে একে একে বিয়োগ হয়েছেন বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়। তবে এখানেই 'বিয়োগপর্ব' শেষ হচ্ছে না! তার ইঙ্গিত দিয়ে অভিষেক মঙ্গলবার দিল্লিতে দাঁড়িয়ে বলেছেন,'২৫ জন বিধায়ক লাইনে আছে। আমরা নিচ্ছি না। যাঁদের মনে হয় বিজেপির বিধায়ক আসছেন আর নির্বাচন হবে না, আমি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলছি ভোট হবে। সকলে জিতে আসবেন। হিম্মত থাকলে রুখে নিন।'

 

 

মুকুলের গলাতেও একই সুর
ঘর ভাঙানোয় বারবর সুনাম রয়েছে মুকুল রায়ের। গেরুয়া শিবিরে থাকাকালীন তৃণমূলের বহু নেতা-কর্মীকে তিনি বিজেপিতে যোগদান করান এমন উদাহরণ রয়েছে। সেই মুকুল রায় মঙ্গলবার বলেছেন, "আরও অনেক জন তৃণমূলে যোগদানের জন্য লাইন দিয়ে আছেন। এর মধ্য়ে ২০, ২২, ২৪ জন তো আছেনই।" এর মাঝে গতকালই মুকুল রায়ের সল্টলেকের বাড়িতে দেখা গেছে  কান্দি পুরসভার ২ বিদায়ী কাউন্সিলর ও বিজেপি নেতা দেবজ্যোতি রায় ও শান্তনা রায়কে। 

Advertisement

 

 

আরও পড়ুন: ঢাকার বাজারে বাড়ছে জোগান, তাও কেন কমছে না ইলিশের দাম?

লাইনে যারা আছেন বলে খবর ভাসছে
বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭৭ থেকে কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৭১। ভোট মিটতেই বিজেপির দুই সাংসদ জগন্নাথ সরকার ও নিশীথ প্রামাণিক বিধায়ক পদ ছেড়ে দেন। তারপর মুকুল রায় এবং তন্ময় ঘোষ, বিশ্বজিৎ দাস, সৌমেন রায় যোগ দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসে। বিজেপি সূত্রে খবর, আতশকাচের তলায় থাকা বিধায়কদের মধ্যে সবার আগে রয়েছেন রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী। যে কোনও মুহূর্তে তাঁর তৃণমূলে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর কারা কারা যেতে পারেন? জানা যাচ্ছে   কৃষ্ণ কল্যাণী ছাড়া উত্তরবঙ্গের আরও দুই বিধায়ক রয়েছেন, যাঁরা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরতে পারেন অচিরেই। আর দক্ষিণবঙ্গের তিনজন বিধায়ক রয়েছেন সন্দেহভাজনের তালিকায়।‌ বিজেপি যে তালিকা তৈরি করেছে সেখানে রয়েছেন, পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়।  তিনি রানাঘাট উত্তর–পশ্চিম আসনের বিধায়ক। দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের হাত থেকে বিজেপির পতাকা নিয়েছিলেন পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া নজরে রয়েছেন গঙ্গারামপুরের সত্যেন্দ্রনাথ রায়, আরামবাগের মধুসূদন বাগ, কুমারগ্রামের মনোজ ওঁরাও। এছাড়া আরও কয়েকজনের নাম নিয়ে গুঞ্জন চলছে। যার মধ্যে শোনা গিয়েছে  শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউড়ির নামও। সেগুলি যদি সত্যি হয় তাহলে বিজেপির কি হাল হতে পারে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব।

 

 

সিঁদুরে মেঘ পদ্মশিবিরে
গত সপ্তাহের স্মৃতি যত দ্রুত সম্ভব ভুলতে চাইবেন দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীরা। গত সপ্তাহের  সোমবার বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, মঙ্গলবার বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, শনিবার কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায় তৃণমূলে যোগ দেন। চার বিধায়কের তৃণমূলে যোগদান ও দুই বিধায়কের পদত্যাগের ফলে আদতে বাংলার বিধানসভায় বিজেপির সদস্য সংখ্যা এখন কমে ৭১। এখনও যেভাবে বিজেপির বিধায়কদের মধ্যে বেসুরোর সংখ্যা বাড়ছে তাতে অশনি সংকেত দেখছে পদ্মশিবির। বিধায়কদের দলত্যাগে রাজ্যসভার ভোট নিয়ে এবার  সমস্যায় পড়তে পারে বিজেপি। বিজেপি এবার বাংলা থেকে ৭৭টি আসনে জিতেছিল। ফলে রাজ্যসভার দু'জন সাংসদ তাঁরা বাংলা থেকে পাঠাতে পারত। দলের হিসেব অনুযায়ী রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় দু'জন সাংসদ পাঠাতে গেলে ৬৯ জন বিধায়ক দরকার। কিন্তু বিজেপি বিধায়করা যেভাবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার লাইন দিয়েছেন, তাতে সেই আশাও শেষ হয়ে যেতে বসেছে। পরিস্থিতি যা বিজেপি দু'জন সাংসদ পাঠাতে ব্যর্থ হবে। সন্দেহের তালিকায় থাকা ৬ বিধায়ক তৃণমূলে যোগদান করলে  বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা কমে ৬৫-তে নেমে যাবে। তিনজন কমলেই বিজেপির অভীষ্ট সিদ্ধ হবে না। বিজেপি কমে ৬৮ হওয়া মানে দু'জন সাংসদকে পাঠাতে পারবে না রাজ্যসভায়। আর সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে চিত্রটা। 

 

আরও পড়ুন: নদীতে বেড়েছে ইলিশের ঘনত্ব, এবার কী তবে রফতানির পথে হাসিনা সরকার?

এবারের বিধানসবা ভোটে ৩ থেকে বেড়ে ৭৭ হয়েছে গেরুয়া শিবির। এটা অবশ্যই কৃতিত্ব।  প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রাজ্যে স্বীকৃতি মিলেছে। ৩  থেকে বেড়ে ৭৭-এর সমীকরণকেই পাথেয় করে দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন দিলীপ ঘোষ-শুভেন্দু অধিকারীরা। বিজেপির  ২০০ আসনের স্বপ্ন নিয়ে বাংলার ময়দানে নেমেছিলেন মোদী-শাহরা। কিন্তু ২০০ আসন তো দূর অস্ত, তারা সেঞ্চুরির আগেই থেমে যান। প্রশান্ত কিশোরের ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যায়। ৯৯ অতিক্রম করেনি বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন সংখ্যা মাত্র ৭৭-এ থমকে যায়। কিন্তু এখন সেই সংখ্যাও দিনে দিনে  কমতে শুরু করেছে। ভোটের পর থেকেই দিশেহারা গেরুয়া শিবির। বর্তমান পরিস্থিতি পদ্মশিবিরকে আরও নিরাশ করে তুলছে। ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে নেতারা গিয়েছিলেন বিজেপিতে। ভোটের পর বইছে উল্টো স্রোত। সেই স্রোত এখন কীভাবে আটকানো যাবে তাই এখন মূল চিন্তা দিলীপ ঘোষ-শুভেন্দু অধিকারীদের। 

Advertisement

 

Advertisement