
রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের এভাবে চলে যাওয়া তাঁর কাছে দুর্যোগ। কালী পুজোর রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে দাঁড়িয়ে একথা বলতে শোনা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বাংলার রাজনীতিতে অন্যতম উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব তিনি। একুশের ভোটে বালিগঞ্জ থেকে জিতে দশমবার বিধায়ক হয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। চলতি বছর পয়লা নভেম্বর শুরু হয়েছে রাজ্য বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন। শোনা যাচ্ছে রাজ্যের সদ্যপ্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রীকে নিয়ে বিধানসভায় আলোচনার ভাবনা রয়েছে শাসকদলের। সেইসঙ্গে তৃণমূলের সামনে এখন আরও একটি চিন্তা রয়েছে। প্রয়াত সুব্রতবাবুর বালিগঞ্জ আসনে এবার প্রার্থী হবেন কে? ইতিমধ্যে একাধিক নাম নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও দলের কোনও শীর্ষ নেতৃত্বই এই বিষয়ে এখন মুখ খুলছেন না। তবে নেত্রী কাদের প্রার্থী করতে পারেন? এই নিয়ে বেশ কয়েকটি নাম হাওয়ায় ভাসতে শুরু করেছে। যার মধ্যে আবার রয়েছেন খোদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ছোট বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়ও।
তনিমা চট্টোপাধ্যায়- প্রতিবার বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে ভাইফোঁটা নিতে জেতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এবার কালীপুজোর দিন সব শেষ হয়ে গিয়েছে। আর কোনওদিন ভাইফোঁটা হবে না আমাদের, করুণ সুর বাজছে তনিমাদেবীর গলায়। আর এসবের মাঝেই দাদার কেন্দ্রে এবার তৃণমূলনেত্রী প্রার্থী করতে পারেন বোনকে এমন একটা হাওয়াও ভেসে আসছে। তনিমা চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য। ২০১০ সালে তিনি ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরও নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে ওই ওয়ার্ড থেকেই জিতে কাউন্সিলর হয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়। হয়েছিলেন কলকাতার মেয়রও। যদিও তাঁর বোন পরবর্তীতে পুর নির্বাচনে হেরে যান বিজেপি প্রার্থী সুব্রত ঘোষের কাছে। এবারও সুব্রতবাবুর বালিগঞ্জের আসন তাঁর বোনকে দেওয়া হতে পারে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বাবুল সুপ্রিয়- সেপ্টেম্বরে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন বাবুল। তিনি এবার প্রথম একদশের খেলোয়াড়, জোড়াফুলের পতাকা হাতে নিয়েই বলেছিলেন বাবুল। এই আবহে সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়ের ফাঁকা আসনে বাবুল সুপ্রিয়কে টিকিট দিতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়, এমন একটা সম্ভাবনার কথাও শোনা যাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাবুলকে বড় দায়িত্ব দেওয়া হবে। একদা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকা বাবুলকে রাজ্যের মন্ত্রী করতে হলে বিধায়ক পদে জিতে আসতে হবে। আর তার জন্য তৃণমূলনেত্রী বালিগঞ্জ আসনটিকেই বেছে নিতে পারেন, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়-একদিকে সদ্য প্রয়াত সুব্রত বাবুর বোন আর অন্যদিকে বাবুল সুপ্রিয়র মত হেভওয়েট নেতা, আর মাঝেই আরও একট নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে আসছে। আর তিনি হলেন বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। একসময় বেসুরো বাজা বৈশ্বানর এখন নেত্রীর পরম কাছের লোক। ভবানীপুর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপনির্বাচন লড়ার সময় তাঁর চিফ ইলেকশন এজেন্টের দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছেন বৈশ্বানরবাবু। ফলে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পর তাঁর আসনে বৈশ্বানরকেও টিকিট দিতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমন কানাঘুঁষো শোনা যাচ্ছে।
সদ্য শেষ হয়েছে রাজ্যের চার বিধানসভায় উপনির্বাচন। করোনা আবহে বালিগঞ্জে কমিশন কবে ভোট করাবে তাও স্পষ্ট নয়। সুব্রত মুখপাধ্যায়ের প্রয়াণের এক সপ্তাহও হয়নি। এই আবহে বালিগঞ্জে কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে কানাঘুষো শুরু হলেও শীর্ষ নেতৃত্বের কেউই মন্তব্য করবেন না, তা স্বাভাবিক। ২০১১ সাল থেকে দীর্ঘ দশ বছর বালিগঞ্জের বিধায়ক ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পাশে থেকেছেন সাধারণ মানুষের। তাঁর দায়িত্ব আগামী দিনে কে সামলাবেন সেই সিদ্ধান্ত যে দলনেত্রীই নেবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।